আইয়ুব বাচ্চু- দেশের ব্যান্ড সংগীতে কিংবদন্তিতুল্য একটি নাম। এ নামটি উচ্চারিত হলেই সবার মনে গিটারের অনুরণন তৈরি হয়। শুধু তার গায়কী নয়, গিটার পরিবেশনা ও স্টেজে দর্শকশ্রোতাদের মুগ্ধ করার সম্মহোনী ক্ষমতাও ছিল বিস্ময়কর। আজ (১৮ অক্টোর) ‘গিটার জাদুকর’ খ্যাত ব্যান্ড তারকার মৃত্যুদিবস। ২০১৮ সালের আজকের দিনে অনন্তের পথে পাড়ি জমিয়েছেন আইয়ুব বাচ্চু। চলে যাওয়ার দিনটিতে তাকে গভীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধায় স্মরণ করছেন তার অনুরাগীরা।
১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রামে জন্ম নেওয়া আইয়ুব বাচ্চুর সংগীতযাত্রা শুরু হয় স্কুলজীবনেই। কৈশোরের একাগ্রতা আর গিটারের প্রতি পাগলামি তাকে পৌঁছে দেয় এমন এক উচ্চতায়, যেখানে তার প্রতিটি স্ট্রিংয়ের ছোঁয়ায় জেগে উঠত কোটি হৃদয়।
১৯৭৮ সালে বাচ্চু যোগ দেন ‘ফিলিংস’ ব্যান্ডে, এরপর ‘সোলস’-এ। তবে তার জীবনের সবচেয়ে বড় অধ্যায় শুরু হয় ১৯৯১ সালে নিজের ব্যান্ড ‘লাভ রানস ব্লাইন্ড (এলআরবি)’ গঠনের মাধ্যমে। এলআরবি’র ‘ঘুম ভাঙা শহরে’, ‘শেষ চিঠি’, ‘মোনালিসা’, ‘চলো বদলে যাই’, ‘রূপালি গিটার’, ‘সেই তুমি’, ‘একদিন কান্না থামবে তো’—এই গানগুলো হয়ে ওঠে প্রজন্মের সংগীত-প্রার্থনা।
আইয়ুব বাচ্চু বাংলাদেশের রকসংগীতকে এমন উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন, যা আগে কল্পনাতেও ছিল না। তিনি দেখিয়েছিলেন—বাংলা গান মানেই শুধু সুরেলা বা রোমান্টিকতা নয়, এটি বিদ্রোহ, এটি জীবনের গল্পও হতে পারে। তার কণ্ঠে ছিল আগুন আর অনুভূতির মিশেল। গিটার হাতে তিনি যেন ছিলেন এক জাদুকর—স্টেজে দাঁড়িয়ে একাই পুরো দর্শকসমুদ্রকে আন্দোলিত করতে পারতেন।
গান যতটা বড় ছিল তার জীবনেও ততটাই বড় ছিলেন মানুষ আইয়ুব বাচ্চু। তরুণ শিল্পীদের পাশে দাঁড়ানো, নতুনদের উৎসাহ দেওয়া, এবং সবসময় সংগীতকে ভালোবেসে যাওয়া—এই গুণগুলো তাকে শুধু শিল্পী নয়, সবার ভালোবাসার মানুষ ও আশ্রয়স্থল করে তুলেছিল। তার স্টুডিও ‘এবির বেজ’ হয়ে উঠেছিল সংগীতপ্রেমীদের স্বপ্নের জায়গা।
আইয়ুব বাচ্চু ২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন। সেদিন থেকে যেন দেশের সংগীতমঞ্চে নেমে আসে নীরবতা। কিন্তু সত্যি কি তিনি চলে গেছেন? না—আজও তার গিটার বাজে নতুন শিল্পীদের হাতে, তার গান গাওয়া হয় কনসার্টে, তার ‘চলো বদলে যাই’ উচ্চারিত হয় প্রতিটি পরিবর্তনের প্রত্যয়ে।
আরও পড়ুন:যেভাবে গানের জগতে আসেন আইয়ুব বাচ্চুযে কারণে মানুষের হৃদয় ছুঁয়েছিলেন তিনি৬০০ টাকা নিয়ে ঘর ছেড়েছিলেন আইয়ুব বাচ্চু
আইয়ুব বাচ্চু রেখে গেছেন অসংখ্য অমর গান, প্রজন্মের পর প্রজন্মকে অনুপ্রেরণা দেওয়ার মতো সংগীতধারা, এবং এমন এক ভালোবাসার উত্তরাধিকার যা সময় মুছে দিতে পারবে না। বাংলা সংগীত ইতিহাসের পাতায় তার নাম লেখা থাকবে—‘যে মানুষ গিটার হাতে স্বপ্ন দেখাতে শিখিয়েছিলেন।’
আজ আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যু দিবসে শুধু স্মরণ নয়, এটি সংগীতকে নতুনভাবে ভালোবাসার দিন। তিনি চলে গেছেন, কিন্তু রেখে গেছেন অমর বার্তা— ‘জীবন মানেই পরিবর্তন, আর সংগীত মানেই ভালোবাসা।’
এমএমএফ/এএসএম