দেশজুড়ে

মার্কেট চালু করতে ৭০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি বিএনপি নেতার

নওগাঁর পত্নীতলায় একটি মার্কেটের চারদিক টিন দিয়ে ঘেরাও করে ৭০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে নজিপুর পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাসুমের বিরুদ্ধে।

এ ঘটনায় শনিবার (১৮ অক্টোবর) রাতে ওই বিএনপি নেতাসহ দুজনের নাম উল্লেখ করে থানায় চাঁদাবাজির মামলা করেছেন তাসলিমা জান্নাত নামের এক ভুক্তভোগী নারী। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১৫-১৬ জনকে আসামি করা হয়েছে।

এর আগে দুপুর ১টার দিকে উপজেলার নজিপুর বাসস্ট্যান্ড-ধামইরহাট আঞ্চলিক সড়কে নির্মাণাধীন রহমান মার্কেটে প্রকাশ্যে এ ঘটনা ঘটে।

বিএনপি নেতা আব্দুল্লাহ আল মাসুম ধামইরহাট-পত্নীতলা আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কেন্দ্রীয় বিএনপির কৃষি বিষয়ক সম্পাদক সামসুজ্জোহা খানের অনুসারী হিসেবে এলাকায় পরিচিত।

ভুক্তভোগী নারী ও এজাহার সূত্রে জানা যায়, শনিবার সকাল থেকেই পত্নীতলা উপজেলার নজিপুর-ধামইরহাট আঞ্চলিক সড়কে নিজেদের নির্মাণাধীন রহমান কমপ্লেক্সের ভবনের চলমান কাজ পর্যবেক্ষণ করছিলেন তাসলিমা জান্নাতের বড় ভাই আরিফ রেজা। ওইদিন দুপুরে লাঠিসোঁটা ও টিন নিয়ে আকস্মিক সেখানে উপস্থিত হয়ে মার্কেটের চারদিক ঘেরাও করতে থাকেন নজিপুর পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাসুম ও তার অনুসারীরা।

খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে সেখানে উপস্থিত হলে তাসলিমা জান্নাতের কাছে মার্কেটটি চালু করতে হলে নগদ ৭০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন বিএনপি নেতা মাসুম। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে পুনরায় টিন দিয়ে মার্কেটটি ঘেরাও করতে থাকেন মাসুমের অনুসারীরা। একপর্যায়ে এতে বাঁধা দিতে গেলে তাসলিমা জান্নাতের বড় ভাই আরিফ রেজাকে প্রকাশ্যে মারধর করা হয়। পরে প্রত্যক্ষদর্শীরা এগিয়ে এলে তাদেরকেও মেরে ফেলার হুমকি দেন মাসুম। এরপর মার্কেটটি ঘেরাও করে সেখান থেকে সটকে পড়েন তিনি।

এদিকে পুরো ঘটনা মার্কেটের সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়ে। তথ্য-প্রমাণ হাতে পাওয়ার পর থানায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করতে যান ভুক্তভোগী নারী। তবে বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা চালান পত্নীতলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ মো. এনায়েতুর রহমান। একপর্যায়ে পুরো এ ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার মুখে ভুক্তভোগীর মামলা নেন ওসি।

ভুক্তভোগী তাসলিমা জান্নাত বলেন, ‌‘বিএনপি পরিচয়ে পুরো এলাকায় চাঁদাবাজি, দখলবাজিসহ নানান অপকর্মে জড়িত মাসুম। মার্কেটের চারদিক টিন দিয়ে ঘেরাও করে প্রথমে তিনি আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করেছেন। পরে ভয়ভীতি দেখিয়ে মার্কেট চালু করতে হলে ৭০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। টাকা না দেওয়ায় বড় ভাইকে মারধর এমনকী আমাদের মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছেন। বর্তমানে আমি ও আমার পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’

পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ জানিয়ে ভুক্তভোগী নারী বলেন, ‘রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায় থাকায় এখনো বিএনপি নেতা মাসুম ও তার অনুসারীদের গ্রেফতার করেনি পুলিশ। এমনকী ঘটনার সময়েও পুলিশের কাঙ্ক্ষিত আইনগত সহযোগিতা পাওয়া যায়নি।’

অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে নজিপুর পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাসুমের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। তাই তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে মেসেজ পাঠিয়েও প্রশ্নের উত্তর মেলেনি।

পত্নীতলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ মো. এনায়েতুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘তাসলিমা জান্নাত চাঁদাবাজির যে মামলাটি করেছেন প্রাথমিক তদন্তে তার সত্যতা পাওয়া যায়নি। তাদের মাঝে পারিবারিক কিছু দ্বন্দ্ব ছিল। আর্থিক লেনদেন ছিল। তাই আসামিদের গ্রেফতার করা হয়নি।’

বেআইনি কর্মকাণ্ড পরিচালনার পরও গ্রেফতার না করাটা কতটুকু যৌক্তিক—এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, ‘আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। তবে যতটুকু সত্যতা আছে সে অনুযায়ী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

নওগাঁ জেলা বিএনপির সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দীক নান্নু জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ ঘটনার কিছুই জানা ছিল না। ৭০ লাখ টাকা চাঁদা চাওয়াটা স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না। এরপরও খোঁজ নিয়ে দেখবো। সত্যতা পাওয়া গেলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আরমান হোসেন রুমন/এসআর/জিকেএস