সড়কটির ফিটনেস রয়েছে তিন বছরের। কোথাও কোনো ভাঙা বা খানাখন্দ নেই। যানবাহন ও পথচারীরাও চলাচল করছেন স্বাভাবিকভাবেই। পুরোপুরি ব্যবহার উপযোগী সড়কটি। অথচ এস্টিমেট ছাড়াই এই পাকা সড়কে প্রায় দুই কোটি টাকা বরাদ্দে পুনর্নির্মাণ কাজ করাচ্ছে নেত্রকোনার মদন পৌর কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি এলাকায় বেশ সমালোচনার সৃষ্টি করেছে। স্থানীয়রা অভিযোগ তুলছেন, মূলত অর্থ নয়ছয়ের জন্যই এমনটি করা হচ্ছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) মদন উপজেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মদন-কেন্দুয়া ইউজেড ও ভাটি মনোহরপুর ভায়া দেওয়ান বাজার সড়কটির দৈর্ঘ্য ৩ হাজার ৩৭০ মিটার। সড়কটি ২০২৪ সালে নির্মাণ করে এলজিইডি। ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০২৪ সালের জুন মাসে কাজটির নির্মাণ কাজ শেষ করে রাহাত এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তথ্য অনুযায়ী সড়কটির ফিটনেস রয়েছে ৩ বছরের।
এদিকে পাকা সড়কটিতে পুনরায় নির্মাণ শুরু করেছে মদন পৌরসভা। পৌরসভা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের আই ইউ জি আই পি প্রকল্পের আওতায় মদন পল্লী বিদ্যুৎ সাব-স্টেশন থেকে জাহাঙ্গীরপুর ফাজিল মাদরাসার পর্যন্ত ৮০৫ মিটার সড়কের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। নির্মাণ কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা। কবির সিন্ডিকেট সেন্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি বাস্তবায়ন করছে। ২০২৪ সালের ২৩ জুলাই কাজটি শুরু করে ২০২৫ সালের ২৪ জুলাই শেষ করার কথা রয়েছে। ২০২৪ সালে যে সড়কটি নির্মাণ হয়েছে সেই সড়কটি পুনরায় নির্মাণ করে অর্থ নয়ছয় করার অভিযোগ উঠেছে।
আরও পড়ুন:কাজে লাগে না ‘হাত ধোয়া’বেসিন, কলে আসে না পানিগাইবান্ধায় ‘তথ্য গোপনে’ ছড়াচ্ছে অ্যানথ্রাক্স
নিয়ম অনুযায়ী প্রথমে সড়কটির বক্সকাটিং করে ১০ ইঞ্চি বালু ফেলে রোলার দিয়ে কমপেকশন করে এর মধ্যে ৪ ইঞ্চি সিসি ঢালাই দেবে। পরে ৬ ইঞ্চি পর পর রড দিয়ে ৭ ইঞ্চি সিসি ঢালাই দেওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সড়কটির বক্সকাটিং ও বালু না দিয়ে পূর্বের পাকার ওপর আরসিসি ঢালাই দিচ্ছে। স্থানীয়দের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা সৃষ্টি হয়।
পৌর কর্তৃপক্ষ জানায়, ৮০৫ মিটারের স্থলে ১ হাজার ২০০ মিটার নির্মাণ করা হবে। এর জন্য বক্সকাটিং ও বালু ফেলার প্রয়োজন হচ্ছে না। কিন্তু ১ হাজার ২০০ মিটার সড়কের নির্মাণের কোনো এস্টিমেট ছাড়াই প্রায় ৬০ ভাগ কাজ বাস্তবায়ন করছেন ঠিকাদার।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ আল রোমান জানান, সড়কটির নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের দিকে। সড়কটির পুরাতন এস্টিমেট বাতিল করে নতুন এস্টিমেট করার কথা। আমাকে ড্রয়িং দিয়েছে। সেই ড্রয়িং অনুযায়ী কাজ বাস্তবায়ন করছি। নতুন এস্টিমেট এখনো আমার হাতে আসেনি।
মদন পৌরসভার উপ-সহকারী প্রকৌশলী জামিল হাসান জানান, সড়কটি ৮০৫ মিটার হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আগের পাকা সড়কের ওপর ঢালাই হওয়াতে বক্সকাটিং ও বালু ফেলার বিষয়টি বাদ দিয়ে ১২০০ মিটার সড়কের কাজ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ড্রয়িং অনুযায়ী সড়কটির অর্ধেক কাজ বাস্তবায়ন হয়ে গেছে। কিন্তু নতুন করে এস্টিমেট এখনো আমাদের হাতে আসেনি। এস্টিমেট ছাড়া কাজ বাস্তবায়ন করা যায় কি না এমন প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যান তিনি।
মদন উপজেলা প্রকৌশলী এস এম শাহাদত হোসেন বলেন, ২০২৪ সালে ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে মদন-কেন্দুয়া ইউজেড আর ভাটি মনোহরপুর ভায়া দেওয়ান বাজার সড়কটি নির্মাণ করেছে এলজিইডি। এই সড়কের ফিটনেস রয়েছে ৩ বছর। সেই সড়কে পুনরায় কাজ করছে পৌরসভা। কাজের ব্যাপারে আমাদের মতামত চাওয়া হয়নি।
মদন পৌরসভার প্রশাসক (ইউএনও) মো. অলিদুজ্জামান বলেন, সড়কটি নির্মাণ করার জন্য স্থানীয় লোকজন নিয়ে একাধিক মিটিং করেছি। সবার মতামতের ভিত্তিতে কাজ করা হচ্ছে। তবে এস্টিমেট ছাড়া কাজ বাস্তবায়ন করা অসম্ভব। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এমএন/এএসএম