ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মো. ওমর ফারুক খাঁন। ১৯৮৬ সালে শরিয়াহভিত্তিক এ ব্যাংকটিতে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। ব্যাংকখাতে তার রয়েছে দীর্ঘ ৩৭ বছরের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা।
দেশের শীর্ষস্থানীয় শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক হিসেবে ইসলামী ব্যাংক কীভাবে সেরা অবস্থানে এসেছে, সেবার মান উন্নয়নে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী এবং খেলাপি বিনিয়োগ (ঋণ) মোকাবিলায় তাদের কৌশল বিষয়ে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ইয়াসির আরাফাত রিপন।
জাগো নিউজ: দেশের বর্তমান আমানতের অবস্থা ও প্রবণতা কেমন, আপনাদের আমানতের অবস্থা কী?
মো. ওমর ফারুক খাঁন: দেশের বর্তমান ব্যাংকখাতে আমানতের অবস্থা ও প্রবণতা মোটের ওপর ইতিবাচক ও উন্নতির দিকে। এ বছর অক্টোবর মাস পর্যন্ত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, আমানতের প্রবৃদ্ধি গত বছরের তুলনায় আরও গতিশীল হয়েছে। ২০২৪ সালে যেখানে আমানতের প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৭ দশমিক ৭ শতাংশ, সেখানে চলতি বছর তা বেড়ে প্রায় ৮ দশমিক ৫ শতাংশে পৌঁছেছে। এই ধারা ইঙ্গিত করে আমানত বৃদ্ধির গতি ক্রমেই শক্তিশালী হচ্ছে।
ইসলামী ব্যাংকের অন্যতম শক্তি হলো আমানতকারীদের আস্থা ও শরিয়াহভিত্তিক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি। এ আস্থা ধরে রাখাই আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ
তবে লক্ষণীয় বিষয় হলো- আমানতের এই প্রবৃদ্ধি মূলত শক্তিশালী ও সুশাসিত ব্যাংকগুলোতেই বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ আমানতের ক্ষেত্রে দেশের শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে। বর্তমানে আমাদের মোট আমানত প্রায় এক লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা, যা দেশের ব্যাংকখাতে সর্বোচ্চ। গত এক বছরে আমরা প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করেছি, যা গ্রাহকদের অকৃত্রিম আস্থা, ভালোবাসা এবং শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিংসেবার প্রতি তাদের দৃঢ় বিশ্বাসের প্রতিফলন।
জাগো নিউজ: গ্রাহকসেবায় ইসলামী ব্যাংকের সেরা হয়ে ওঠার গল্পটা আসলে কী?
মো. ওমর ফারুক খাঁন: গ্রাহকসেবায় ইসলামী ব্যাংক নিঃসন্দেহে একটি আলাদা পরিচিতি গড়ে তুলেছে। শুরু থেকেই ব্যাংকটি গ্রাহক সন্তুষ্টিকে শুধু ব্যবসার কৌশল নয়, বরং একটি সামাজিক ও নৈতিক দায়িত্ব হিসেবে গ্রহণ করেছে। এ কারণেই ব্যাংকটি অন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তুলনায় আলাদা পরিচিতি গড়ে তুলতে পেরেছে। আন্তরিক, দক্ষ ও প্রশিক্ষিত কর্মকর্তাদের নিষ্ঠা এবং যুগোপযোগী সেবার ধারাবাহিক উদ্ভাবন কার্যকর ভূমিকা পালন করছে।
কর্মকর্তারা নিয়ম-কানুন মেনে গ্রাহকের সমস্যার সমাধানে আন্তরিকভাবে কাজ করেন, ফলে গ্রাহকরা ব্যাংকটির ওপর ভরসা ও আস্থা রাখেন। অন্যদিকে, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ইসলামী অর্থনীতির অন্তর্নিহিত মৌলিক ধারণা। আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকে ইসলামী অর্থনীতির মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করে ব্যাংকটি শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত সেবা বিস্তৃত করেছে। শরিয়াহসম্মত ডিপোজিট ও বিনিয়োগ প্রোডাক্ট, কার্ড সেবা, ইন্টারনেট ও মোবাইল ব্যাংকিং চালুর মাধ্যমে ব্যাংকিংসেবা করেছে আরও সহজ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক।
গ্রাহকদের জন্য ব্যাংকিংসেবা আরও সহজ, দ্রুত ও নিরাপদ করতে আমরা প্রযুক্তি, পেমেন্ট এবং নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে উদ্ভাবন ও উন্নয়ন করে চলেছি। এখন গ্রাহকরা ঘরে বসেই আমাদের বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ব্যাংকিংসেবা গ্রহণ করতে পারেন
পাশাপাশি আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে নির্ভরযোগ্য সেবা ও প্রবাসীদের রেমিট্যান্স দ্রুততম সময়ে পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে দেশের লাখো পরিবারকে উপকৃত করছে। গ্রামীণ উন্নয়নের ক্ষেত্রেও ইসলামী ব্যাংক অনন্য। পল্লি উন্নয়ন প্রকল্প (আরডিএস) চালুর মাধ্যমে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে বিনিয়োগ ও নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ সুবিধা দিয়েছে। এসব উদ্যোগ দেশের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। ফলে আজ ইসলামী ব্যাংক শুধু একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান নয়, বরং মানুষের আস্থা, নিরাপত্তা ও নৈতিক ব্যাংকিংয়ের প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।
জাগো নিউজ: অস্থিতিশীল ব্যাংকখাতের মধ্যে ইসলামী ব্যাংক কতটুকু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, তা কীভাবে কাটিয়ে উঠবেন?
মো. ওমর ফারুক খাঁন: বিগত সময়ে ব্যাংকখাতে ব্যাপক অনিয়ম, লুটপাট ও সার্বিক অব্যবস্থাপনার কারণে দেশের ব্যাংকখাত প্রায় খাদের কিনারায় চলে যায়। তৈরি হয় তীব্র তারল্য সংকট ও উচ্চ খেলাপি ঋণ। নুয়ে পড়া বিভিন্ন ব্যাংকের শাখাগুলোতে টাকা উত্তোলনের জন্য গ্রাহকদের ভিড় ও চাহিদা অনুযায়ী টাকা দিতে না পারায় ব্যাংকের শাখাগুলোতে ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটছে।
আরও পড়ুনডিজিটাল রূপান্তরে রূপালী ব্যাংকের গ্রাহক সন্তুষ্টি বেড়েছেধ্বংসস্তূপ থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে জনতা ব্যাংকগ্রাহক আস্থায় এনআরবিসি ব্যাংকের আমানত বাড়ছেশিগগির অগ্রণী ব্যাংক খেলাপিমুক্ত হয়ে আগের মর্যাদায় ফিরবে
ইসলামী ব্যাংকের ক্ষেত্রে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেনি। ইসলামী ব্যাংকের অন্যতম শক্তি হলো আমানতকারীদের আস্থা ও শরিয়াহভিত্তিক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি। এ আস্থা ধরে রাখাই আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমরা কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছি। যেমন অভ্যন্তরীণ সুশাসন ও স্বচ্ছতা বজায় রাখা, অর্থাৎ বিনিয়োগে কঠোর নীতি ও শরিয়াহ কার্যক্রম নিশ্চিত করা।
গ্রাহককেন্দ্রিক আধুনিক সেবা সম্প্রসারণ- যেমন ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, দ্রুত রেমিট্যান্স ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ বিনিয়োগ সুবিধা নিশ্চিত করা। পাশাপাশি আমদানি-রপ্তানি, গ্রামীণ অর্থায়ন, প্রবাসী আয়সহ বিভিন্ন খাতে কার্যক্রম বিস্তৃত রাখা, যাতে কোনো একক খাতের অস্থিতিশীলতা পুরো ব্যাংকের ওপর নেতিবাচক প্রভাব না ফেলে। সবশেষে, আমরা বিশ্বাস করি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং ও আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর সেবার সমন্বয়ই বর্তমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং ভবিষ্যতে টেকসই অবস্থান ধরে রাখার মূল চাবিকাঠি।
ব্যাংক হলো আমানতকারীদের টাকার ভরসাস্থল। গ্রাহক তাদের কষ্টার্জিত অর্থ এখানে জমা রাখেন নিরাপত্তা ও আস্থার জন্য। কিন্তু খেলাপি বিনিয়োগ বাড়লে সেই টাকা ঝুঁকির মুখে পড়ে। তাই আমানতকারীরাও উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন
জাগো নিউজ: আপনার ব্যাংকে বর্তমানে কী কী গুরুত্বপূর্ণ আমানত স্কিম রয়েছে, বিশেষ করে নির্দিষ্ট গ্রাহক গোষ্ঠীর জন্য?
মো. ওমর ফারুক খাঁন: বর্তমানে আমাদের ব্যাংকে মোট ২৮ প্রকার আমানত স্কিম চালু রয়েছে। সময়ের চাহিদা ও গ্রাহকের প্রয়োজনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রণয়ন করা হয়েছে। দেশের যে কোনো প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক কিংবা অভিভাবকের মাধ্যমে অপ্রাপ্তবয়স্করাও আমাদের বিভিন্ন ধরনের অ্যাকাউন্ট যেমন সেভিংস অ্যাকাউন্ট, মাসিক কিস্তিতে জমা অ্যাকাউন্ট এবং স্থায়ী আমানত জমা অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করতে পারেন। পাশাপাশি নির্দিষ্ট গ্রাহকগোষ্ঠীর প্রয়োজন বিবেচনা করে আমরা বিশেষ আমানত স্কিম চালু করেছি। এর মধ্যে রয়েছে কৃষকদের জন্য মাত্র ১০ টাকায় ফার্মারস অ্যাকাউন্ট, প্রবাসীদের জন্য মুদারাবা এনআরবি সেভিংস বন্ড, ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য মুদারাবা স্কুল স্টুডেন্ট সেভিংস অ্যাকাউন্ট, বড় প্রতিষ্ঠানের জন্য জন্য মুদারাবা প্রায়োরিটি সেভিংস অ্যাকাউন্ট এবং প্রবীণ নাগরিকদের জন্য মুদারাবা সিনিয়র সিটিজেন মাসিক মুনাফা অ্যাকাউন্ট।
এছাড়া রয়েছে অফশোর অ্যাকাউন্ট, যেখানে গ্রাহক সরাসরি ৯ প্রকার বৈদেশিক মুদ্রায় অর্থ রাখা ও লেনদেন করার সুযোগ রয়েছে। এসব স্কিমের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার গ্রাহকদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও সঞ্চয়ের সুযোগ আরও বিস্তৃত করছি।
জাগো নিউজ: গ্রাহকদের জন্য প্রযুক্তি, পেমেন্ট ও নিরাপত্তার দিক থেকে কী কী উদ্ভাবন করেছেন?
মো. ওমর ফারুক খাঁন: গ্রাহকদের জন্য ব্যাংকিংসেবা আরও সহজ, দ্রুত ও নিরাপদ করতে প্রযুক্তি, পেমেন্ট এবং নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে উদ্ভাবন ও উন্নয়ন করে চলেছি। এখন গ্রাহকরা ঘরে বসেই আমাদের বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ব্যাংকিংসেবা গ্রহণ করতে পারেন। আমাদের ডিজিটাল ব্যাংকিং অ্যাপ সেলফিনের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট খোলা, ব্যালান্স দেখা, ফান্ড ট্রান্সফার ও বিল পরিশোধসহ নানা সেবা সহজে সম্পন্ন করা যায়। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের জন্য রয়েছে আমাদের এমক্যাশ অ্যাপ। আমরা এমক্যাশের মাধ্যমে গ্রামীণ ও প্রান্তিক অঞ্চলের মানুষকে ব্যাংকিং আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
পাশাপাশি আই-ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অনলাইন ব্যাংকিংসেবা আমরা নিয়মিত আধুনিকায়ন ও নিরাপত্তা জোরদার করে যাচ্ছি, যাতে গ্রাহকরা নিশ্চিন্তে অনলাইনে তাদের আর্থিক কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারেন। এসব উদ্ভাবনের মাধ্যমে ব্যাংকিংসেবায় প্রযুক্তিগত দক্ষতা, গ্রাহকবান্ধবতা ও নিরাপত্তার বিষয়কে আমরা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছি।
জাগো নিউজ: ব্যাংকখাতে আমানতের নিরাপত্তা ও জনগণের আস্থা বাড়াতে সরকারের কী ভূমিকা থাকা উচিত বলে আপনি মনে করেন?
মো. ওমর ফারুক খাঁন: আমার মতে, ব্যাংকখাতে আমানতের নিরাপত্তা ও জনগণের আস্থা বৃদ্ধিতে সরকারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকারকে আর্থিক খাতের তদারকি ও নিয়ন্ত্রণ আরও শক্তিশালী করতে হবে, যাতে কোনো ধরনের অনিয়ম, দুর্নীতি বা অব্যবস্থাপনা ঘটতে না পারে। আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষায় ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্স স্কিম আরও কার্যকর ও বিস্তৃত করা জরুরি, যাতে সাধারণ মানুষ তাদের সঞ্চয় নিয়ে নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন।
ব্যাংকগুলোর পরিচালন কাঠামো ও আর্থিক প্রতিবেদন স্বচ্ছ রাখা এবং নিয়মিত অডিটের মাধ্যমে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে ডিজিটাল নিরাপত্তা জোরদার ও সাইবার ঝুঁকি প্রতিরোধে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোও সময়ের দাবি। সবশেষে, সরকারের পক্ষ থেকে জনগণকে সচেতন করতে ব্যাংকিং শিক্ষার প্রসার ঘটানো উচিত, যাতে তারা সঠিক প্রতিষ্ঠানে আমানত রাখতে উৎসাহিত হন। এসব পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে জনগণের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও ব্যাংকখাতে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
জাগো নিউজ: বর্তমানে খেলাপি ঋণ বেড়েই চলছে। এমন পরিস্থিতিতে খেলাপি আদায়ে কোন ধরনের কৌশল দরকার বলে মনে করেন?
মো. ওমর ফারুক খাঁন: খেলাপি ঋণ/বিনিয়োগ এখন বাংলাদেশের ব্যাংকখাতের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। যারা ইচ্ছাকৃতভাবে বিনিয়োগ পরিশোধ করেন না তাদের কারণে শুধু ব্যাংক নয়, পুরো আর্থিক ব্যবস্থাই অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। ব্যাংক হলো আমানতকারীদের টাকার ভরসাস্থল। গ্রাহক তাদের কষ্টার্জিত অর্থ এখানে জমা রাখেন নিরাপত্তা ও আস্থার জন্য। কিন্তু খেলাপি বিনিয়োগ বাড়লে সেই টাকা ঝুঁকির মুখে পড়ে। তাই আমানতকারীরাও উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন।
ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ, সরকারি সুবিধা বন্ধ রাখা, এমনকি সামাজিকভাবে বয়কট করার মতো পদক্ষেপ প্রয়োজন। একই সঙ্গে রিকভারি বা বিনিয়োগ পুনরুদ্ধার ব্যাংকখাত সুস্থ রাখতে অপরিহার্য বিষয়। যদি খেলাপি বিনিয়োগ আাদায় করা না যায় তাহলে ব্যাংকের তারল্য সংকট দেখা দেয়, নতুন বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হয় এবং অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হয়। এজন্য প্রয়োজন কার্যকর আইন প্রয়োগ, খেলাপিদের তালিকা প্রকাশ, দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি এবং ব্যাংকগুলোর নিজস্ব রিকভারি প্রক্রিয়া আরও শক্তিশালী করা।
আর রিকভারি প্রক্রিয়া শক্তিশালী হলে ব্যাংকের মূলধন সুরক্ষিত থাকে, বিনিয়োগ প্রবাহ সচল হয় এবং গ্রাহকের আস্থাও অটুট থাকে। তাই বলা যায়, ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের শাস্তি ও কার্যকর রিকভারি দুটোই ব্যাংকখাতের স্থিতিশীলতা এবং দেশের অর্থনীতির টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য।
জাগো নিউজ: সবশেষে আপনার ব্যাংকে রেমিট্যান্স আহরণের বিষয়টি শুনতে চাই।
মো. ওমর ফারুক খাঁন: ইসলামী ব্যাংক বর্তমানে দেশের বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আহরণকারী হিসেবে শীর্ষে আছে। চলতি বছর জানুয়ারি থেকে আমরা ৪ হাজার ৭৩৮ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আহরণ করেছি, যা প্রায় ৫৭ হাজার ৮শ কোটি টাকার সমান। টানা ১৬ বছর ধরে এ সাফল্য ধরে রাখা আমাদের জন্য নিঃসন্দেহে একটি গর্বের বিষয়। এ অর্জনের প্রকৃত নায়ক আমাদের পরিশ্রমী প্রবাসী কর্মীরা যারা বিদেশে কঠোর পরিশ্রম করে পরিবার ও দেশের জন্য অর্থ পাঠাচ্ছেন। প্রবাসীদের এই অবদানকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আমরা রেমিট্যান্স পাঠানো ও গ্রহণের প্রক্রিয়া দ্রুত, নিরাপদ ও সহজ করতে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছি।
অনলাইনে নিরাপদ চ্যানেল, প্রত্যন্ত অঞ্চলে রেমিট্যান্স উত্তোলন এবং ন্যূনতম খরচে সেবা নিশ্চিত করেছি। পাশাপাশি বিশেষ গ্রাহকসেবা ডেস্ক স্থাপন, রেমিট্যান্স মেলা আয়োজন এবং প্রবাসীদের জন্য আলাদা ডিপোজিট ও বিনিয়োগ পণ্য চালু করে তাদের প্রতি সম্মান ও আস্থার প্রতিশ্রুতি রেখেছি।
ইএআর/এএসএ/এমএফএ/জেআইএম