আরবি শিরক শব্দের অর্থ অংশীদার হওয়া বা অংশীদার করা। ইসলামে আল্লাহ তাআলা ছাড়া অন্য কাউকে যে কোনো ক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলার সমকক্ষ মনে করা বা আল্লাহ তাআলার প্রাপ্য কোনো ইবাদত আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য পালন করাকে শিরক বলা হয়। কোরআনে আল্লাহ তাআলা কাউকে তার সমকক্ষ বানাতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমরা জেনেশুনে কাউকে আল্লাহর সমতুল্য বানাবে না। (সুরা বাকারা: ২২)
নবীজিও (সা.) কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ বানানোকে শিরক বা সবচেয়ে গুরুতর পাপ বলেছেন। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুলকে (সা.) প্রশ্ন করলাম, আল্লাহর কাছে সবচেয়ে গুরুতর পাপ কী? তিনি বললেন, সবচেয়ে কঠিন পাপ এই যে, তুমি আল্লাহর সমকক্ষ বানাবে অথচ তিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। (সহিহ বুখারি: ২৪৯৭)
শিরকের পরিণাম ভয়াবহশিরক আল্লাহর কাছে সবচেয়ে গুরুতর পাপ। কোরআনে শিরককে সবচেয়ে নিকৃষ্ট জুলুম বলা হয়েছে এবং বিভিন্ন আয়াতে বারবার শিরক থেকে বেঁচে থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ সব গুনাহ ক্ষমা করলেও শিরক ক্ষমা করবেন না। আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শরীক করা ক্ষমা করেন না। এ ছাড়া অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন। এবং যে আল্লাহর সাথে শরীক করে সে এক মহাপাপ করে। (সুরা নিসা : ৪৮)
শিরক যারা করবে, তাদের জন্য জান্নাত হারাম ঘোষণা করে আল্লাহ বলেন, আর যে আল্লাহর সাথে শরিক করে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেন এবং তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম। (সুরা মায়েদা: ৭২)
ওলামায়ে কেরাম শিরককে দুই প্রকারে ভাগ করেছেন:
১. শিরকে আকবর বা বড় শিরক
২. শিরকে আসগর বা ছোট শিরক
শিরকে আকবর বা বড় শিরকশিরকে আকবর হলো কথা বা কাজে সরাসরি ও সুস্পষ্টভাবে কোনো কিছুকে আল্লাহর সমকক্ষ বানানো। যেমন আল্লাহ ছাড়া অন্য যে কোনো কিছুর ইবাদত করা, অন্য যে কোনো কিছুর জন্য পশু কোরবানি করা, অন্য যে কোনো কিছুর জন্য মানত করা, অন্য যে কোনো শক্তিকে নিজের ভালো-মন্দের মালিক মনে করা, কোনো বিপদ-মসিবত থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহ তাআলা ছাড়া অন্য কোনো অলৌকিক শক্তির কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা, অন্য কোনো অলৌকিক শক্তির আশ্রয় গ্রহণ করা ইত্যাদি। উল্লিখিত কাজগুলোর সমপর্যায়ের অন্যান্য শিরকি কথা ও কার্যকলাপও শিরকে আকবর বা বড় শিরক গণ্য হয়।
শিরকে আকবর একজন মুসলমানের সব আমলের সওয়াব নষ্ট করে দেয় এবং তাকে ইসলামের গণ্ডি থেকে বের করে দেয়। এ ধরণের শিরকে লিপ্ত ব্যক্তি যদি তওবা করে পুনরায় ইসলাম গ্রহণ না করে মৃত্যু বরণ করে তাহলে আখেরাতে সে চিরস্থায়ী জাহান্নামি হবে।
শিরকে আসগর বা ছোট শিরকশিরকে আসগর হলো, কোনো কথা বা কাজে পরোক্ষ বা অস্পষ্টভাবে আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ বানানো। যেমন আল্লাহর ছাড়া অন্য কারো নামে কসম করা। রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে কসম করল, সে কুফুরি বা শিরক করল। (সুনানে তিরমিজি: ১৫৩৫)
ইবাদতের ক্ষেত্রে রিয়াও অর্থাৎ মানুষকে দেখানোর ইচ্ছাও ছোট শিরক। হাদিসে কুদসিতে এসেছে, আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি শরিককদের মধ্যে শিরক থেকে সবচেয়ে বেশি অভাবমুক্ত। যদি কেউ কোন আমল করে এবং তাতে আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে শরিক করে, তাহলে আমি তাকে ও তার শিরককে তাদের অবস্থায়ই ছেড়ে দেই। (সহিহ মুসলিম: ৭২০৫)
শিরকে আসগর বা ছোট শিরকি কাজ করলে মানুষ কাফের হয়ে যায় না, তবে এগুলো বড় গুনাহ। তাই এ রকম শিরকি কাজ করে ফেললে যত দ্রুত সম্ভব অনুতপ্ত হয়ে তওবা করা উচিত।
ওএফএফ