দেশজুড়ে

দেশি-বিদেশি পর্যটকে মুখর সোনারগাঁও জাদুঘর

শীতকালকে কেন্দ্র করে দেশী-বিদেশি দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনে। এটি লোকশিল্প জাদুঘর বা সোনারগাঁও জাদুঘর হিসেবেও পরিচিত। প্রাচীন গ্রামবাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অপরূপ নিদর্শন দর্শনীয় এই স্থানটিতে পর্যটকদের উপস্থিতি বাড়ছে। ফলে ভ্রমণকারীদের সুবিধার্থে জাদুঘরকে আরও আকর্ষণীয় করার লক্ষ্যে উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে গ্যালারি সংখ্যা বাড়ানোসহ বেশ কয়েকটি কাজ চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।

সরেজমিনে দেখা যায়, প্রাচীন যুগের নিদর্শন ও স্মৃতি দেখার লক্ষ্যে হাজারো পর্যটক ৫০ টাকা মূল্যের প্রবেশ টিকিট কিনে জাদুঘরে প্রবেশ করেছেন। তবে এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের জন্য প্রবেশে বিশেষ ছাড় রয়েছে। প্রতিষ্ঠানের আইডি কার্ডধারী শিক্ষার্থীরা ২০ টাকা মূল্য ছাড়ে ৩০ টাকায় পরিদর্শন করতে পারছেন। ফলে তুলনামূলক স্কুল-মাদরাসা কিংবা কলেজের শিক্ষার্থীর উপস্থিতি বেশি দেখা গেছে।

এদিকে শুধু দেশের বিদেশি পর্যটকদেরও ভিড় করতে দেখা গেছে জাদুঘরে। পর্যটকদের জন্যে জাদুঘরে সংগ্রহে রাখা প্রাচীন যুগের মানুষের কর্মকাণ্ড, রাজা-বাদশাদের পোশাক, অস্ত্রসহ ব্যবহারের জিনিসগুলো ঘুরে ঘুরে দেখছেন তারা।

আরও পড়ুন:সোনারগাঁও জাদুঘরে গিয়ে যা দেখে মুগ্ধ হবেনঢাকার কাছেই লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর

লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের তথ্য মতে, বর্তমানে প্রতিমাসে গড়ে অন্তত ৩০ হাজার দেশি পর্যটক ভ্রমণে আসছেন। এর পাশাপাশি গড়ে ১ হাজারের মতো বিদেশি পর্যটকের উপস্থিত রয়েছে। ফলে পর্যটকদের সুবিধার্থে এরই মধ্যে ১৬০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। যার বাস্তবায়ন হলে পর্যটকের উপস্থিতি আরও বাড়বে বলে আশাবাদী কর্তৃপক্ষ।

ভ্রমণে আসা কয়েকজন পর্যটকের সঙ্গে কথা বলেছে জাগো নিউজ। তারা নিজেদের অনুভূতি তুলে ধরেছেন। নরসিংদী সদর হতে নিজের স্কুলের শিক্ষার্থী ও সহকর্মীদের নিয়ে পিকনিকে এসেছেন মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম নামের এক প্রধান শিক্ষক। তিনি বলেন, ঐতিহ্যবাহী এই দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে অনেক শুনেছিলাম, তবে ভ্রমণে এসে এটার ভেতরের সৌন্দর্য দেখে বেশ ভালো লেগেছে। দারুণ উপভোগ করছি আমরা। শিক্ষার্থীরাও বেশ আনন্দিত।

ভ্রমনে আসা এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী বলেন, এখানে ঘুরতে এসে খুবই ভালো লাগছে। আমাদের প্রাচীন বাংলার রাজধানী যেহেতু এখানে ছিল সেই হিসেবে আমরা ভ্রমণে এসে বিভিন্ন ইতিহাস জানতে পারছে। এর পাশাপাশি জায়গাও খুব সুন্দর। আমাদের ঘুরতে ভালোই লাগছে।

আড়াইহাজার উপজেলা হতে মাদরাসার শিক্ষার্থীরা পিকনিকে এসেছেন। তাদের মধ্যে আব্দুর রহমান নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের পরীক্ষা শেষ হওয়ায় আমরা এখানে ঘুরতে এসেছি। সবসময় মাদরাসায় থেকে পড়াশোনার ফলে আমাদের একটা চাপের মধ্যে থাকা লাগে। তাই রিফ্রেশমেন্টের জন্য শিক্ষকরা পিকনিকের আয়োজন করেছেন। এখানে এসে ভালো লেগেছে। জাদুঘর কর্তৃপক্ষ আমাদের জন্য ৩০ টাকা মূল্যে প্রবেশ টিকিট রেখেছে। এটা খুব ভালো লেগেছে।

বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপ-পরিচালক একেএম আজাদ সরকার জাগো নিউজকে বলেন, সারাবছর আমাদের এখানে পর্যটকের সমাগম থাকে। তবে শীতকালকে কেন্দ্র করে অক্টোবর হতে ফেব্রুয়ারি পর্যটক প্রচুর পরিমাণে আসেন। সেক্ষেত্রে বর্তমানে গড়ে প্রতিমাসে ৩০ হাজার দেশি ও ১ হাজার বিদেশি পর্যটক আসছেন। আমাদের এখানে তিনটি প্রদর্শনী গ্যালারি থাকলেও বড় সর্দার বাড়িসহ সংখ্যায় ৪টি রয়েছে। আমরা উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে আরও ১২টি গ্যালারি নির্মাণ কাজ করছি।

তিনি আরও বলেন, ১৬০ কোটি টাকার একটি উন্নয়ন প্রকল্প পেয়েছি। যার কাজ চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে ১২ গ্যালারির কাজ চলমান রয়েছে, অডিটোরিয়াম হবে,পার্কিং সম্প্রসারণ, দর্শনার্থীদের ভাবনায় বৃহৎ একটি কাফেটেরিয়া নির্মাণ ইতোমধ্যে সম্পূর্ণ হয়েছে। এছাড়ও আমাদের আরও অনেক কাজ হবে। আমরা দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে সকল প্রস্তুতি নিচ্ছি।

১৯৭৫ সালে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন দ্বারা এই লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠিত হয়।

মো. আকাশ/এমএন/জেআইএম