সোনারগাঁও জাদুঘরে গিয়ে যা দেখে মুগ্ধ হবেন

ভ্রমণ ডেস্ক
ভ্রমণ ডেস্ক ভ্রমণ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:৩৬ পিএম, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

এইচ এম. ইমরান হোসাইন

জাদুঘর শব্দটি শুনলেই মানুষের মনে পড়ে যায় ইতিহাস-ঐতিহ্যের কথা। নিদর্শন ও স্মৃতির কথা। এ শব্দে যেন মিশে আছে হাজারো নিদর্শন। যে নিদর্শনগুলো বর্তমানে বিলুপ্ত হয়েছে।

জাদুঘর এমন একটি সংগ্রহশালা যেখানে প্রাচীন যুগের মানুষের কর্মকাণ্ড, ব্যবহার্য জিনিস, রাজা-বাদশাহদের পোশাক, প্রাচীন সুলতানদের ব্যবহৃত অস্ত্র, প্রাচীন মুদ্রা, বর্ম অলংকার ইত্যাদি সংগ্রহ করে রাখা হয়।

jagonews24

আরও পড়ুন: নিঝুম দ্বীপ ভ্রমণে ঘুরে আসতে ভুলবেন না আরও ৩ স্পট

প্রাচীন যুগের সেই রাজা-বাদশাহর ব্যবহার্য জিনিস, সে যুগের মানুষদের নিদর্শনসহ আরও বেশকিছু কারণে জাদুঘর ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে খুবই আগ্রহের স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়। ভ্রমণপিপাসুদের জাদুঘরের সেই আগ্রহের জায়গা দখল করে আছে সোনারগাঁওয়ের লোকশিল্প জাদুঘর।

লোকশিল্প জাদুঘরের নামের মধ্যেই যেন মিশে আছে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের স্মৃতি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য, প্রকৃতি ও পরিবেশে গ্রামীণ রূপকেন্দ্রিক বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের শৈল্পিক কর্মকাণ্ডের পরিচয়।

jagonews24

এমনকি বাংলাদেশের অবহেলিত গ্রাম-বাংলার নিরক্ষর শিল্পীদের হস্তশিল্প, জনজীবনের নিত্য ব্যবহার্য পণ্যসামগ্রী, শিল্প-সামগ্রীতে তৎকালীন প্রাচীন বাংলার ঐতিহ্যবাহী লোকশিল্পের রূপচিত্রের কথা ইত্যাদি।

আরও পড়ুন: বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্টেশন, একসঙ্গে দাঁড়ায় ৪৪ ট্রেন

এজন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ঢাকার অদূরে এ জাদুঘরে পর্যটকদের ব্যাপক ভিড় লক্ষ্য করা যায়। শুধু বাংলাদেশ থেকে নয়, এ জাদুঘরে বিদেশ থেকেও ভ্রমণপ্রেমীরা ঘুরতে আসে।

jagonews24

এই জাদুঘর পরিদর্শন করে অনেকেই প্রাচীন যুগের মানুষদেরকে নিজের জীবনের সঙ্গে কল্পনা করেন। কেউ আবার জাদুঘরে গিয়ে আনমনা হয়ে হারিয়ে যান প্রাচীন নিদর্শনে।

সোনারগাঁও লোকশিল্প জাদুঘরে প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ ঘুরতে যান। আপনিও চাইলে এ জাদুঘরে গিয়ে দেখে আসতে পারবেন, দেশের অবহেলিত গ্রাম-বাংলার নিরক্ষর শিল্পীদের হস্তশিল্প, জনজীবনের নিত্য ব্যবহার্য পণ্যসামগ্রী, প্রাচীন বাংলার ঐতিহ্যবাহী লোকশিল্পের রূপচিত্র, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা লেক ইত্যাদি।

jagonews24

আরও পড়ুন: মক্কা থেকে মদিনায় বুলেট ট্রেন চালাবেন সৌদি নারীরা

জাদুঘরে প্রবেশ করতে প্রথমেই দেখা যায় সর্দার বাড়ি। এ সর্দার বাড়িতে আছে মোট ১০টি গ্যালারি। সেগুলোতে আছে পোড়ামাটির নিদর্শন, গ্রামীণ লোকজীবনের পরিবেশ, লোকজ বাদ্যযন্ত্র, তামা-কাসা-পিতলের নিদর্শন, লোহার তৈরি নিদর্শন ইত্যাদি।

আরও আছে লোকজ অলংকার কারুশিল্প, কাঠ খোদায়সহ বহু দেখার মতো মন জুড়ানো জিনিস। ভবনটির পাশে গেলেই দেখতে পাওয়া যায় আধুনিক এক ইমারতে প্রতিষ্ঠিত জয়নুল আবেদীন স্মৃতি জাদুঘর। যেখানে পর্যটকরা অতি আগ্রহের সঙ্গে পরিদর্শন করেন।

jagonews24

সর্দার বাড়ির পাশে আছে পাঠাগার, যেখানে বিভিন্ন নিদর্শনের বই পাবেন। তার পাশেই আছে ক্যান্টিন। এই ক্যান্টিনে পর্যটকরা খাবার পরিবেশন করেন। আরও আছে প্রকৃতির ছোয়ায় সাজানো গ্রামীণ উদ্যান। যেখানে দর্শনার্থীরা খেলাধুলা ও খুনসুটিতে মেতে ওঠে, ফিরে যায় শৈশবের কোলাহলে।

আরও পড়ুন: বিশ্বের রহস্যময় এক স্থান ‘লাভ টানেল’

শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) এমনই একটি চমৎকার দৃশ্য চোখে পড়লো। লেকের কোল ঘেঁষে উদ্যানে দেখা গেল আর্জেন্টিনা ব্রাজিলের জার্সি পরিহিত যুবকদের ফুটবল খেলতে। মনে হচ্ছিল এ যেন বিশ্বকাপের মঞ্চে ফাইনাল ম্যাচে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে আর্জেন্টিনা ব্রাজিল।

jagonews24

কাছে গিয়ে তাদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তারা রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজ সাংবাদিক সমিতি থেকে এ জাদুঘরে এসেছেন পুরোনো ইতিহাস ঐতিহ্যের নিদর্শন স্বচক্ষে দেখতে।

খেলার ছলে শৈশবে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে এসব সাংবাদিক দর্শনার্থীদের থেকে জানা যায়, এ চমৎকার দর্শনীয় জায়গায় নিজেকে আজীবন স্মরণ রাখতে আর্জেন্টিনা বনাম ব্রাজিলের ছোট একটি ম্যাচের আয়োজন করেছে তারা। যা তাদের ভীষণ আনন্দ দিচ্ছে ও শৈশবের স্মৃতি মনে করিয়ে দিচ্ছে।

আরও পড়ুন: প্রিয়জনকে নিয়ে ঘুরে আসুন শিমুল বাগানে

উদ্যানের কোল ঘেঁষে বয়ে গেছে মনোমুগ্ধকর লেক। যে লেকের দিকে তাকালে গ্রাম বাংলার সৌন্দর্যের দৃশ্য মনের আঙিনায় উঁকি দেয়। এ লেকে নৌকা নিয়ে দর্শনার্থীদের এদিক-ওদিক ঘুরতে দেখা যায়। মনে হয়, দর্শনার্থীরা যেন গ্রাম বাংলার কলকলে ছলছলে নদীর মুগ্ধতায় হারিয়ে যেতে চাইছে আজীবনের জন্য।

jagonews24

লেকের পাশে আরেকটি উদ্যান আছে, যার এক কোণে আছে একটি টিউবওয়েল। এই টিউবওয়েলে সুস্বাদু ঠান্ডা পানি পান করে তৃষ্ণার্ত মন ভিজিয়ে নেন দর্শনার্থীরা। তার পাশেই লেকের একপ্রান্তের শেষ হয়েছে। সেখানে গেলে দেখা যায়, গ্রামের খাল-বিলের বড় বড় মাছ। লেকের পানির ছলছলানিতে মাছও যেন খেলা করে।

এছাড়া এ লোকশিল্প জাদুঘরে আছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের অজানা, অচেনা কারুশিল্পীর তৈরি বাঁশ-বেত, কাঠ খোদাই, মাটি, জামদানি, নকশি কাঁথা, একতারা ও ঝিনুকের সামগ্রীর প্রদর্শনী ও বিক্রয় কেন্দ্র।

সবকিছু মিলিয়ে এ জাদুঘর যেন ভ্রমণপিপাসু দর্শনার্থীদের কাছে অনেক পছন্দ ও শিক্ষণীয় স্থান হিসেবে মনের কোঠায় জায়গা করে নিয়েছে।

jagonews24

আরও পড়ুন: পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক সেতু, পার হওয়ার সাহস নেই কারও

লোকশিল্প জাদুঘরে যাবেন যেভাবে

রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার পূর্বে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে মোগড়াপাড়া চৌরাস্তা হয়ে উত্তরদিকে সোনারগাঁওয়ের অবস্থান। তাই খুব অল্প সময়ে অল্প খরচে সোনারগাঁওয়ে যাওয়া যায়।

বাসে যেতে চাইলে ঢাকার গুলিস্তান থেকে হকি স্টেডিয়ামের পাশের বাস কাউন্টার থেকে টিকিট সংগ্রহ করতে হবে। এখানে স্বদেশ পরিবহনসহ আরও বেশ কয়েকটি বাস সোনারগাঁও যায়।

যে কোনো একটি পরিবহনে উঠে মোগড়াপাড়া চৌরাস্তায় নামতে হবে। চৌরাস্তা বাসস্ট্যান্ড থেকে রিকশায় উঠে পর্যটক নগরী সোনারগাঁওয়ে যেতে হবে। রিকশা ভাড়া নেবে ২০-৩০ টাকা।

jagonews24

লোকশিল্প জাদুঘরে ঘুরতে যাওয়ার আগে অবশ্যই যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন-

আরও পড়ুন: বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতে গিয়ে যা দেখবেন

>> ঢাকা বা তার আশপাশের এলাকা থেকে গেলে অবশ্যই সকাল সকাল বের হবেন। তাহলে অনেক কিছুই ঘুরে দেখা সম্ভব হবে।

>> অনেকেই পরিবারের সঙ্গে যান। তারা চাইলে খাবার রান্না করে নিয়ে যেতে পারেন। জাদুঘরের কয়েকটি সুন্দর উদ্যান আছে। সেখানে পিকনিক আমেজে পরিবারের সঙ্গে খাবার পরিবেশন করতে পারবেন।

>> ভ্রমণের যাওয়ার আগে অবশ্যই ভালো ক্যামেরার ফোন অথবা ডিএসএলআর ক্যামেরা সঙ্গে নিয়ে যাবেন। কারণ জাদুঘরের সৌন্দর্য দেখে আপনার মন চাইবে প্রচুর ছবি তুলতে।

jagonews24

যে কাজ থেকে অবশ্যই বিরত থাকবেন

>> ঘুরতে যাওয়ার আগে অবশ্যই ভালো মনোভাব নিয়ে যাবেন। কোনো খারাপ মনোভাব বা উচ্ছৃঙ্খল আচরণের মনোভাব নিয়ে ভ্রমণে যাবেন না।

>> টিকিট না কেটে জাদুঘরে প্রবেশের চেষ্টা করবেন না।

>> যেহেতু দর্শনার্থীদের অনেক ভিড় থাকে, সেহেতু অন্যান্য দর্শনার্থীদের জাদুঘরের নিদর্শনগুলো দেখার সুযোগ করে দেবেন।

জেএমএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।