আন্তর্জাতিক

হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে আরও শক্তিশালী হামলার হুঁশিয়ারি ইসরায়েলের

হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে আরও শক্তিশালী হামলার হুঁশিয়ারি দিলো ইসরায়েল। লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে সাম্প্রতিক এক ইসরায়েলি বিমান হামলায় চারজন নিহত হওয়ার পরদিনই রোববার (২ নভেম্বর) এমন ঘোষণা দিলো দখলদার দেশটি।

২০২৪ সালের নভেম্বর থেকে ইসরায়েল ও লেবাননের ইরান সমর্থিত সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহর মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর রয়েছে, তবুও ইসরায়েলি সেনারা এখনো দক্ষিণ লেবাননের অন্তত পাঁচটি এলাকায় অবস্থান করছেন ও নিয়মিত হামলা চালাচ্ছেন।

রোববার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ এক বিবৃতিতে বলেন, হিজবুল্লাহ আগুন নিয়ে খেলছে, আর লেবাননের প্রেসিডেন্ট বিষয়টি নিয়ে গড়িমসি করছেন। হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করা ও দক্ষিণ লেবানন থেকে সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে লেবানন সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা সর্বোচ্চ মাত্রায় অভিযান চালাচ্ছি ও তা আরও জোরদার হবে। আমাদের উত্তর সীমান্তের বাসিন্দাদের নিরাপত্তা নিয়ে কোনো আপস নয়।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুও রোববার মন্ত্রিসভার বৈঠকে বলেন, হিজবুল্লাহ যুদ্ধবিরতির সুযোগ নিয়ে আবার অস্ত্র মজুতের চেষ্টা করছে। আমরা আশা করি লেবানন সরকার তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে অর্থাৎ হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করবে।

নেতানিয়াহু আরও বলেন, লেবানন যদি তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করে, তাহলে আমরা আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করবো। লেবাননকে আমরা আরেকটি যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হতে দেবো না; প্রয়োজনে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর ২০২৩ সালের অক্টোবরে সীমান্তে রকেট হামলা শুরু করে হিজবুল্লাহ। এতে উত্তর ইসরায়েলের হাজারো বাসিন্দাকে কয়েক মাস ধরে ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নিতে হয়। টানা এক বছরেরও বেশি সময় ধরে উত্তেজনা চলার পর দুই মাসব্যাপী খোলা যুদ্ধের মুখে পড়ে দুই পক্ষ, যার অবসান ঘটে গত বছরের যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে।

তবে যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও ইসরায়েল লেবাননে বিমান হামলা বন্ধ করেনি। বরং সাম্প্রতিক দিনগুলোতে তা আরও বেড়েছে।

গত বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি স্থলবাহিনী দক্ষিণ লেবাননে এক প্রাণঘাতী অভিযানে যায়, যার পর লেবাননের প্রেসিডেন্ট জোসেফ আওন সেনাবাহিনীকে এমন অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার নির্দেশ দেন।

গত অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় গাজা যুদ্ধবিরতির পর আওন ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনা শুরুর আহ্বান জানিয়েছিলেন।

কিন্তু পরে তিনি অভিযোগ করেন, তার আলোচনার প্রস্তাবের জবাবে ইসরায়েল ও হামলা আরও বাড়িয়েছে। লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, শনিবার (১ নভেম্বর) নাবাতিয়ে জেলায় ইসরায়েলি হামলায় চারজন নিহত হয়।

লেবাননের সরকারি বার্তা সংস্থা ন্যাশনাল নিউজ এজেন্সি জানায়, ইসরায়েলি সেনারা নির্দেশিত ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে একটি গাড়িতে হামলা চালায়।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীও হামলার সত্যতা নিশ্চিত করেছে। তাদের দাবি, নিহত ব্যক্তি হিজবুল্লাহর রাদওয়ান ইউনিটের সদস্য ছিলেন, যিনি অস্ত্র পরিবহন ও দক্ষিণ লেবাননে গোষ্ঠীটির সামরিক অবকাঠামো পুনর্গঠনে যুক্ত ছিলেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, এই সন্ত্রাসী কার্যক্রম ইসরায়েল ও এর নাগরিকদের জন্য সরাসরি হুমকি তৈরি করেছিল ও ইসরায়েল-লেবাননের মধ্যে হওয়া সমঝোতার স্পষ্ট লঙ্ঘন ছিল।

ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহ এই যুদ্ধে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়লেও, গোষ্ঠীটি এখনো অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত এবং আর্থিকভাবে টিকে আছে।

২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ইসরায়েল এক বিমান হামলায় হিজবুল্লাহর দীর্ঘদিনের নেতা হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যা করে। এসময় সংগঠনের আরও কয়েকজন শীর্ষ নেতা নিহত হন।

যুদ্ধবিরতির পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র লেবানন সরকারকে হিজবুল্লাহ নিরস্ত্র করার জন্য চাপ দিচ্ছে। যদিও গোষ্ঠীটি ও তাদের মিত্ররা এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করছে।

লেবানন সরকার জানিয়েছে, দেশজুড়ে অস্ত্রের ওপর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে ও এর বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে দক্ষিণাঞ্চল থেকে।

সূত্র: এএফপি

এসএএইচ