বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলে যৌন হয়রানির অভিযোগ তদন্তে গঠিত কমিটিতে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন অন্তত দুজন সদস্য অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি বলেছে, শুধু কমিটি গঠনই যথেষ্ট নয়, বরং তদন্ত প্রক্রিয়ার নিরপেক্ষতা ও কার্যকারিতা নিশ্চিতে যৌন হয়রানি বিষয়ে অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞদের অন্তর্ভুক্তি জরুরি।
রোববার (৯ নভেম্বর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি জানায়, সম্প্রতি জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের সাবেক নির্বাচক ও ম্যানেজারের বিরুদ্ধে এক নারী ক্রিকেটার যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলার পর বিসিবি তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তবে টিআইবির মতে, অতীত অভিজ্ঞতা বলছে—বিসিবি যৌন নিপীড়নের অভিযোগগুলো প্রায়ই ধামাচাপা দিয়েছে এবং অভিযোগের সুষ্ঠু প্রতিকার না করে নীরব থেকেছে।
আরও পড়ুনজাহানারার অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন ও মনগড়া’ বলছে বিসিবিজাহানারা আলমের গুরুতর অভিযোগ: তদন্ত কমিটি গঠন বিসিবির
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠন একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। কিন্তু যৌন হয়রানির মতো সংবেদনশীল বিষয়ে কার্যকর ও পেশাদার তদন্তের জন্য এ ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ ও নিরপেক্ষ অন্তত দুজন স্বতন্ত্র বিশেষজ্ঞকে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি।
তিনি আরও বলেন, এর আগেও বিসিবির ভেতরে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছিল, কিন্তু সেসব ক্ষেত্রে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং ধামাচাপার সংস্কৃতি নারী ক্রিকেটারদের অংশগ্রহণের পথকে আরও কঠিন ও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে।
টিআইবি জানায়, বিসিবিতে এখনো উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা হয়নি। ২০০৯ সালের ১৫ মে দেওয়া আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী সব কর্মক্ষেত্র ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে অভিযোগ গ্রহণ ও প্রতিকার কমিটি গঠন বাধ্যতামূলক।
সংস্থাটি আরও জানায়, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) নির্দেশিকাও বিসিবি লঙ্ঘন করছে। ২০১৯ সালের ‘Safeguarding Guidance for Members’ অনুযায়ী প্রতিটি সদস্য বোর্ডের দায়িত্ব হচ্ছে অংশগ্রহণকারীদের শারীরিক, মানসিক ও যৌন নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। নীতিমালায় বলা আছে, প্রত্যেক বোর্ডে প্রশিক্ষিত এক জন Safeguarding Officer বা Focal Point থাকতে হবে, যিনি অভিযোগ ব্যবস্থাপনা ও সুরক্ষা কাঠামো বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকবেন।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, নারী ক্রিকেটারদের জন্য সমঅধিকারমূলক ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত না করে বিসিবি আইনি ও নৈতিক উভয় ক্ষেত্রেই দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিচ্ছে। আদালতের নির্দেশনা ও আইসিসির নীতিমালা অনুযায়ী অবিলম্বে একটি স্বাধীন ও জেন্ডার সংবেদনশীল সুরক্ষা নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, নারী ক্রিকেটারদের সাফল্য দেশের জন্য গৌরবের, কিন্তু তাদের প্রতি অবহেলা, নিপীড়ন ও বিচারহীনতা পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিফলন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি বিসিবির সাম্প্রতিক প্রশাসনিক ও নৈতিক দুর্বলতার বিষয়েও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে। সংস্থাটি বলেছে, ম্যাচ ফিক্সিং, আর্থিক অস্বচ্ছতা ও নৈতিক জবাবদিহির অভাব বিসিবির সামগ্রিক সুশাসনে ব্যর্থতার প্রমাণ।
টিআইবি জানায়, ২০১৬ সালে তারা ক্রিকেটে দুর্নীতি প্রতিরোধে স্বাধীন ও পেশাদার দুর্নীতি দমন ইউনিট গঠন, স্থায়ী ন্যায়পাল কার্যালয় স্থাপন, আচরণগত প্রশিক্ষণ ও নৈতিকতা চর্চার মাধ্যমে ক্রিকেটের সব স্তরে জবাবদিহি সংস্কৃতি গড়ে তোলার সুপারিশ করেছিল। কিন্তু বিসিবি বা সরকার কেউই তা বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বর্তমান ক্রিকেট বোর্ডও পূর্বসূরিদের মতো একই পথে হাঁটছে, যা হতাশাজনক এবং দেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যতের জন্য আত্মঘাতী।
এসএম/এমআইএইচএস/জিকেএস