খ্যাতির বিড়ম্বনায় পড়েছে ইন্দোনেশিয়া। দেশটির বিখ্যাত পর্যটনকেন্দ্র বালি বহু বছর ধরেই পর্যটকদের মন জয় করে আসছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে অনেক পর্যটক এই ট্রপিক্যাল দ্বীপ থেকে হতাশ হয়ে ফিরছেন। তাদের মতে, সোশ্যাল মিডিয়ার দৃশ্য আর বাস্তবতা মোটেও এক নয়। ইনস্টাগ্রামের ছবিতে বালি যতটা ছিমছাম ও সুন্দর, বাস্তবে সেখানে ভোগান্তি ততটাই বেশি।
সম্প্রতি এমনই অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন পর্যটক জো রে। তিনি ইউটিউবের এক ভিডিওতে বলেন, ‘বালিতে নামার পর থেকেই আমাদের কিছুটা অস্বস্তি হচ্ছিল। আমরা সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখেছিলাম সবাই কত আনন্দ করছে, তাই আমাদের প্রত্যাশাও অনেক বেশি ছিল।’
কিন্তু বাস্তবতা তার সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। জো’র কথায়, যদি কফিশপের ছবি বড় করা না হয়, তবে দেখবেন বাস্তবতা কিছুটা ভিন্ন।
আরও পড়ুন>>ইন্দোনেশিয়ার বালি ভ্রমণে ঘুরে দেখবেন যেসব স্পটইন্দোনেশিয়ার বালিতে ফেরিডুবি, নিখোঁজ অন্তত ৪৩ জনবন্যায় তলিয়ে গেছে ইন্দোনেশিয়ার জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র, নিহত ৬
যদিও বালির বাস্তব পরিস্থিতি কেমন দেখেছিলেন তা বিস্তারিত বর্ণনা করেননি জো। তবে তিনি এতটাই হতাশ হয়েছিলেন যে, বিয়েবার্ষিকী উদযাপন চালিয়ে যেতে দুবাই চলে গিয়েছিলেন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনাবালির ‘এক্সপেকটেশন বনাম রিয়েলিটি’ বিষয়ক পোস্ট আজকাল প্রচুর দেখা যাচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সোনালি সূর্যাস্তের মাঝে সৈকত সংলগ্ন রেস্টুরেন্টের খাবার উপভোগ করতে গিয়ে দেখা যায় সিঁড়ির পাশে আবর্জনা ফেলা। ঝর্ণার সামনে ছবি তুলতে গেলে পর্যটকদের দীর্ঘ লাইন। আউটডোরে স্মুদি উপভোগ করতে গেলে পাশে থাকে তীব্র যানজট।
২০১০-এর দশকে লেখা বই এবং চলচ্চিত্র ‘ইট, প্রে, লাভ’-এ বালিকে যে আদর্শ ‘শান্তি ও আধ্যাত্মিক স্থান’ হিসেবে দেখানো হয়েছিল, বাস্তবে পর্যটকরা দ্বীপটির বিশাল ভিড়, যানজট এবং নির্মাণকাজের শব্দের সঙ্গে অভ্যস্ত হচ্ছেন।
বালির খ্যাতির বিড়ম্বনাপশ্চিমা পর্যটকরা আগে বালিকে একটি ‘পবিত্র ও স্বর্গীয় দ্বীপ’ হিসেবে দেখতেন, যেখানে হিন্দু মন্দির, ধানের ক্ষেত এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছিল। কিন্তু ২০১৪ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা বেড়ে ৩৮ লাখ থেকে ৬৩ লাখে পৌঁছায়। চলতি বছর দ্বীপটিতে ৭০ লাখের বেশি পর্যটক যাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আজকাল বালিতে পর্যটন মানেই হয়ে উঠেছে বিচ ক্লাব, সার্ফ হাউজ, বিলাসবহুল হোটেল ও স্পা। পশ্চিমা পর্যটকরা দ্বীপটিতে সাশ্রয়ী মূল্যে বিলাসবহুল জীবনযাপন উপভোগ করছেন।
স্থানীয়দের উদ্বেগস্থানীয়রা বলছেন, দ্বীপটি ‘দিন দিন ক্ষয়ে যাচ্ছে।’ ২২ বছর বয়সী নি কাদেক সিন্তিয়া বলেন, পাঁচ বছর আগে যেখানে আমি ধানের ক্ষেতের পাশে স্কুটার চালাতাম। এখন সেই পথ যানজটে ভরা। এখন প্রতিবার সেই জায়গার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আমি দুঃখ পাই।
সমাধানের চেষ্টাবালির বাসিন্দা ও উদ্যোক্তারা টেকসই পর্যটন এবং পরিবেশ রক্ষার উদ্যোগ নিয়েছেন। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শিক্ষা, সৈকত পরিষ্কারেমতো বিভিন্ন অভিযান শুরু হয়েছে। চলতি বছর বালি কর্তৃপক্ষ একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করেছে এবং পর্যটকদের জন্য আচরণগত নির্দেশিকা জারি করেছে।
ইন্দোনেশিয়ার সরকার বালিকে শুধু পর্যটন বাজার হিসেবে নয়, প্রাকৃতিক সম্পদ হিসেবেও মূল্যায়ন করছে। ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের ভ্রমণ সম্পাদক মারিয়া শোলেনবার্গার বলেন, বালি অতিরিক্ত পর্যটনের একটি পরীক্ষার ক্ষেত্র। কিন্তু যে জায়গায় যাওয়া যায়, সেখানে দায়িত্বশীল আচরণ করা পর্যটকের দায়িত্ব।
সূত্র: বিবিসিকেএএ/