রোগীর সকালের নাশতায় পাউরুটি বরাদ্দ ১৫২ গ্রাম। সেখানে মিলছে ৫৬ গ্রাম। দুপুরে মাছ বরাদ্দ ১১৮ গ্রাম, দেওয়া হচ্ছে ৬০-৮০ গ্রাম। পর্যাপ্ত স্যালাইন মজুত থাকলেও বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে রোগীদের। বাড়তি ভাড়া হাঁকছেন অ্যাম্বুলেন্স চালক।
জরুরি বিভাগে ডিগ্রিধারী চিকিৎসকের দেখা পাওয়া যায়নি। উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (স্যাকমো) দিয়ে চলছে চিকিৎসা সেবা। আউট সোর্সিংয়ে নিয়োজিত কর্মী দিয়ে রোগীদের কাটা-সেলাইয়ের কাজ করানো হচ্ছে।
এসব ঘটনা যশোরের মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) যশোরের একটি দলের অভিযানে এসব তথ্য উঠে এসেছে। রোববার (৯ নভেম্বর) দিনভর দুদকের এই দলটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অভিযান চালায়। দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় যশোরের আভিযানিক দল সকালে মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অভিযান শুরু করে। তিন সদস্যের দলটির নেতৃত্ব দেন দুদক যশোর কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক চিরঞ্জীব নিয়োগী। দিনভর অভিযান চালিয়ে বিকেলে ব্রিফিং করেন তিনি। এসময় উপস্থিত ছিলেন ডিএডি তৌহিদুল ইসলাম ও এএসআই রমেচা খাতুন।
ব্রিফিংয়ে চিরঞ্জীব নিয়োগী জানান, সুনির্দ্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তিন সদস্যের একটি টিম ছদ্মবেশে সকাল থেকেই অভিযান শুরু করে। প্রথমে রোগী সেজে খুলনা যাওয়ার কথা বলে ফোন করা হয় অ্যাম্বুলেন্সচালক এখলাসের কাছে। তিনি রোগী বহনের সরকারি নিয়মের তোয়াক্কা না করে নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত টাকা দাবি করেন। তাকে সরকারি নিয়মের কথা বললে সাফ জানিয়ে দেন, ওসব সরকারি নিয়ম এখানে চলে না।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, দৈব চয়নের ভিত্তিতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তার (আরএমও) উপস্থিতিতে রোগীদের জন্য কড়াইয়ে রান্নার কয়েকটি মাছের টুকরা পরিমাপ করা হয়। রোগীপ্রতি ১১৮ গ্রাম মাছের টুকরা বরাদ্দ থাকলেও পাওয়া গেছে ৬০-৮০ গ্রাম। পাউরুটি ১৫২ গ্রাম বরাদ্দের বিপরীতে দেওয়া হয় মাত্র ৫৬ গ্রাম। মানসম্মত মসুরি ডাল (চিকন ১৪০ টাকা কেজি দরে) সরবরাহের কথা থাকলেও দেওয়া মোটা দানার (৮০ টাকা কেজি দর) ডাল।
খাওয়ার অনুপযোগী নিম্নমানের চাল ও লবণ খাওয়ানো হয় রোগীদের। ওয়াশরুম নোংরা। জরুরি বিভাগে ডিগ্রিধারী চিকিৎসকের দেখা পাওয়া যায়নি। স্যাকমো মাসুদুর রহমান দিয়ে চলছে চিকিৎসাসেবা।
উপ-সহকারী পরিচালক চিরঞ্জীব নিয়োগী আরও জানান, আউট সোর্সিংয়ে নিয়োজিত হাবিবুল্লাহ বিলাহীর দিয়ে রোগীদের কাটা-সেলাইয়ের কাজ করানো হচ্ছে। রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বাইরের ল্যাবে পাঠানো হয়। অভিযানে রোগী বাইরে নেওয়ার জন্য নয়ন হোসেন নামের এক দালালকে আটক করা হয়। তিনি নিজেকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংলগ্ন একটি ডায়াগনস্টিকের ম্যানেজার বলে দাবি করেন।
খাদ্য সরবরাহকারী ঠিকাদার ইসমাইল হোসেন জানান, ১২ বছর আগের মূল্য তালিকা অনুযায়ী খাবার সরবরাহ চলমান। যে কারণে খাবারের মান ঠিক রাখা যাচ্ছে না। মামলার ভয়ে খাবার সরবরাহ থেকে ছেড়ে আসতে পারছেন না বলে দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফয়েজ আহমদ ফয়সল বলেন, বিষয়গুলো আমলে নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আটক ব্যক্তিকে মুচলেকায় ছেড়ে দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
মিলন রহমান/এসআর