দেশজুড়ে

৭৪ সেচ প্রকল্পের ম্যানেজার নিয়োগে চার কোটি টাকার বাণিজ্যের অভিযোগ

কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলায় চার কোটি টাকার বিনিময়ে ৭৪টি সেচ প্রকল্পের ম্যানেজার নিয়োগের অভিযোগে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। বিএডিসি সেচ বিভাগ ও স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ভয়াবহ এ অনিয়ম ও আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ তুলেছেন কৃষকরা।

এ ঘটনায় সোমবার (১০ নভেম্বর) জেলা প্রশাসক ও বিএডিসি কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন কৃষকরা।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, উপজেলা সেচ কমিটির বৈঠকের আগেই রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তিকে ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়, যা কৃষকদের স্বার্থবিরোধী এবং সম্পূর্ণ বেআইনি।

আবেদনকারীদের দাবি, নিয়ম মেনে আবেদন জমা দেওয়ার পরও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল যে, নিয়োগ কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হবে। কিন্তু ৯ নভেম্বর সভা হওয়ার আগেই গত ৬ নভেম্বর বিকেল ৪টার দিকে অফিসের নোটিশ বোর্ডে হঠাৎ নিয়োগ তালিকা টাঙানো হয়। কিছু সময় পর তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

স্থানীয় সূত্র জানায়, কাস্তুল ভাতশালা বৃহত্তর সেচ প্রকল্পের ম্যানেজার পদে আওয়ামী লীগের সাবেক উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের ছেলে রাজনকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। উপজেলায় নিয়োগ পাওয়া ৭৪ জনের প্রায় অর্ধেকই আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের কর্মী বলে অভিযোগ রয়েছে।

একাধিক আবেদনকারীর অভিযোগ, পুরো উপজেলার নিয়োগ প্রক্রিয়ায় প্রায় চার কোটি টাকার আর্থিক লেনদেন হয়েছে। এতে ভাটি অঞ্চলের কৃষকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।

কাস্তুল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য ও কৃষকদল নেতা মরম আলী বলেন, ‌‘সেচ স্কিম আনতে গেলে বিএডিসির সেচ কর্মকর্তারা আমার কাছে দেড় লাখ টাকা দাবি করেন। পরে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা দেই উপসহকারী প্রকৌশলী আসাদুল হককে। কিন্তু টাকা দেওয়ার পরও আমি স্কিম পাইনি, টাকাও ফেরত দেয়নি। আমার মতো আরও অনেককে একইভাবে প্রতারিত করা হয়েছে।’

লিখিত অভিযোগকারীদের একজন এম আর চৌধুরী শিপু বলেন, ‘৭৪টি সেচ প্রকল্পের মধ্যে অন্তত ৩৪টি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এই নিয়োগ বাণিজ্যে বিএডিসির সেচ কর্মকর্তা ও স্থানীয় বিএনপি নেতারাও জড়িত। কৃষকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তারা এখন নিজেদের পকেট ভারী করছেন।’

তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘৭২ ঘণ্টার মধ্যে কৃষকদের ভোটের মাধ্যমে ম্যানেজার নিয়োগ না দেওয়া হলে এবং লেনদেনের টাকা ফেরত না দিলে কৃষকরা বিএডিসি ও ইউএনও অফিস ঘেরাও করবেন।’

এ বিষয়ে কথা বলতে সোমবার (১০ নভেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে উপজেলা বিএডিসি সেচ (ক্ষুদ্রসেচ) উপসহকারী প্রকৌশলী আছাদুল হকের অফিসে গেলে দেখা যায়, অফিসে তালা ঝুলছে। তিনি কোথায় আছেন কেউ বলতে পারেননি। অফিসেও কাউকে পাওয়া যায়নি।

কিশোরগঞ্জ বিএডিসি সেচ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন বলেন, ‘আমাদের কর্মকর্তা এই প্রকল্প দেওয়ার কেউ নন। প্রকল্পের সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। তিনিই ভালো জানেন।’

উপজেলা সেচ প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. দিলশাদ জাহান বলেন, এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ থাকলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বর্তমানে তিনি ছুটিতে আছেন বলে জানান।

এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ সাঈদ আহাম্মদ বলেন, ‘আমরা ইউএনওকে অনুরোধ করেছিলাম যাতে আমাদের দলীয় নেতাকর্মীরা স্কিমগুলো পান। তিনি (ইউএনও) ও উপসহকারী প্রকৌশলী আবেদন যাচাই-বাছাই করেছেন। টাকা লেনদেনের বিষয়টি আমার জানা নেই।’

এসকে রাসেল/এসআর/এমএস