ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের পর তার শীর্ষ উপদেষ্টা আন্দ্রি ইয়ারমাক পদত্যাগ করেছেন। রাজনৈতিক প্রভাবশালী ইয়ারমাক রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার যুদ্ধের সময় জেলেনস্কির সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা ছিলেন। কিন্তু ক্রমবর্ধমান কেলেঙ্কারির কারণে বাড়তে থাকা চাপের মুখে তার বাড়িতে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের পর তিনি পদত্যাগ করলেন। খবর বিবিসির।
জেলেনস্কি সম্প্রতি তাকে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য নিযুক্ত করেছিলেন যেখানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটাতে নতুন অভিযানের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
নিজের কার্যালয়ের বাইরে জাতির উদ্দেশ্যে এক কঠোর ভাষণে জেলেনস্কি ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, আমরা সবকিছু হারানোর ঝুঁকিতে আছি: নিজেদের, ইউক্রেন এবং আমাদের ভবিষ্যত।
কয়েক সপ্তাহ ধরেই এই দুর্নীতি কেলেঙ্কারির কারণে ইউক্রেনে বেশ অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। জেলেনস্কির নিজস্ব অবস্থানও কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং এই নাজুক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশটির আলোচনার অবস্থান বিপন্ন হয়ে উঠতে পারে।
ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় পারমাণবিকবিদ্যুৎ কোম্পানি এনারগোআটম নিয়ে হওয়া দুর্নীতি তদন্তের অংশ হিসেবে শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) জেলেনস্কির প্রধান সহকারী ও চিফ অব স্টাফ আন্দ্রি ইয়ারমাকের বাসস্থানসহ বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি অভিযান চালানো হয়। তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করেছে দেশটির জাতীয় দুর্নীতিবিরোধী ব্যুরো (এনএবিইউ)।
শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) টেলিগ্রামে দেওয়া বিবৃতিতে এনএবিইউ জানিয়েছে, তল্লাশি তদন্তের অংশ হলেও এতে ইয়ারমাকের সুনির্দিষ্ট অবস্থান বা ভূমিকা উল্লেখ করা হয়নি।
এনএবিইউ ও স্পেশাল অ্যান্টি–করাপশন প্রসিকিউটরস অফিস (এসএপিও) কয়েক সপ্তাহ ধরে এনারগোআটমকে ঘিরে দুর্নীতির মামলা তদন্ত করছে। এটি গত আড়াই বছরের মধ্যে ইউক্রেনে শুরু হওয়া সবচেয়ে বড় দুর্নীতিবিরোধী তদন্ত অভিযান।
প্রায় ১৫ মাসের তদন্ত ও ১,০০০ ঘণ্টা অডিও রেকর্ডিং বিশ্লেষণের পর তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, এনারগোআটমের চুক্তিগুলোতে ঠিকাদারদের কাছ থেকে প্রতিটি চুক্তির ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ঘুষ নেওয়া হতো। এভাবে প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
এনএবিইউ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, কিছু বহিরাগত ব্যক্তির হাতে বার্ষিক ৪ বিলিয়ন ইউরোর বেশি আয়ের একটি কৌশলগত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ ছিল। তাদের কোনো আনুষ্ঠানিক পদ বা ক্ষমতা ছিল না।
তদন্ত বলছে, দেশের বিভিন্ন এলাকায় রুশ হামলায় বিদ্যুৎ স্থাপনাগুলোর প্রতিরক্ষা–কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারদের কাছ থেকেও ঘুষ নেওয়া হয়েছে। এসব ঘটনায় দেশজুড়ে সমালোচনার সৃষ্টি করেছে।
দুর্নীতির ঘটনা তদন্তে যাকে মূল হোতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে তিনি হলেন ব্যবসায়ী তিমুর মিনদিচ। তিনি প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সাবেক ব্যবসায়িক অংশীদার ও ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন।
টিটিএন