লাইফস্টাইল

শীতকালে শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ

শীতকালে শিশুদের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যায় কয়েকগুণ। ঠান্ডাজনিত অসুখ যেমন — সর্দি, কাশি, জ্বর, ব্রঙ্কিওলাইটিস, নিউমোনিয়া কিংবা অ্যালার্জি — শিশুদের সহজেই আক্রান্ত করতে পারে। পাশাপাশি সঠিক যত্ন না নিলে শিশুর ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাও দুর্বল হয়ে পড়ে।

তাই শীতকালীন স্বাস্থ্যসুরক্ষা, খাদ্যাভ্যাস, রোগপ্রতিরোধ ও পোশাক–পরিচর্যা বিষয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মনজুর হোসেন।

জাগো নিউজ: শীতকালে শিশুদের কোন ধরণের স্বাস্থ্য সমস্যা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়?

অধ্যাপক ডা. মনজুর হোসেন: শীতকালে শিশুদের সাধারণত সর্দি-কাশি, জ্বর, কিছু শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা (ব্রঙ্কিওলাইটিস, এজমাজনিত উপসর্গ), ডায়রিয়া বা হজমের সমস্যা, ঘন ঘন অ্যালার্জি, ত্বক শুষ্ক হওয়া এবং নিউমোনিয়া বেশি দেখা দেয়।

জাগো নিউজ: ঠান্ডা ও সর্দি–কাশি থেকে শিশুদের বাঁচাতে কী ধরনের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত?

ডা. মনজুর হোসেন: সর্দি-কাশি সাধারণত ভাইরাসজনিত সংক্রমণের কারণে হয়। তাই প্রথমেই ধুলাবালি ও লোকসমাগম এড়িয়ে চলা জরুরি। মার্কেট, শপিং মল ও বিয়ের অনুষ্ঠানে সংক্রমণ দ্রুত ছড়ায়। তাই ছোট শিশুদের এসব জায়গায় না নিয়ে যাওয়াই ভালো। ঠান্ডা লাগা রোধে যথেষ্ট গরম কাপড় পরাতে হবে, বিশেষ করে বাইরে বের হলে। স্কুলগামী শিশুদের মাস্ক পরা উচিত। যাদের এজমা আছে তাদের বাড়তি সতর্ক থাকতে হবে।

নিউমোনিয়া শ্বাসতন্ত্রের একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত বা ভাইরাসজনিত সংক্রমণ। সাধারণত জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে নিউমোনিয়ার সম্ভাবনা থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা অনুযায়ী—

২ মাসের নিচের শিশু: মিনিটে ৬০ বা তার বেশি শ্বাস নিলে

২–১২ মাস বয়সী শিশু: মিনিটে ৫০ বা তার বেশি শ্বাস নিলে

১–৫ বছর বয়সী শিশু: মিনিটে ৪০ বা তার বেশি শ্বাস নিলে, তা স্বাভাবিক নয়।

সেই সঙ্গে বুকের পাজর ভেতরের দিকে ঢুকে যাওয়া, সাঁই সাঁই শব্দ শোনা, খাওয়ায় অনীহা বা অস্বাভাবিক ঘুম এলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে।

জাগো নিউজ: শীতকালে নবজাতকের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ?

ডা. মনজুর হোসেন: নবজাতকের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ। রুম খুব ঠান্ডা হলে হাইপোথার্মিয়ার ঝুঁকি থাকে, এতে শিশু অচেতন হয়ে যেতে পারে বা খিঁচুনিও হতে পারে। তাই রুমের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখা, গরম কাপড়ে মোড়ানো, মায়ের বুকে আগলে রাখা খুবই জরুরি। রুম হিটার ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে রুম যেন অতিরিক্ত শুকনো না হয়ে যায় সেদিকে নজর রাখতে হবে। শিশুর হাত–পায়ের তালু নীলাভ হলে বুঝতে হবে অতিরিক্ত ঠান্ডা লেগেছে, এক্ষেত্রে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।

জাগো নিউজ: শীতকালে শিশুদের খাদ্যাভ্যাসে কী পরিবর্তন প্রয়োজন?

ডা. মনজুর হোসেন: ৬ মাস বয়স পর্যন্ত শুধুমাত্র বুকের দুধই শিশুর সম্পূর্ণ খাবার। এরপর ধীরে ধীরে সুষম খাবার দিতে হবে। শীতকালে উষ্ণ খাবার যেমন স্যুপ, খিচুড়ি, ওটমিল, নরম ভাত খাওয়ানো ভালো। ভিটামিন সি রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়; তাই কমলা, লেবু, আমলকি, মাল্টা ইত্যাদি ফল খাদ্যতালিকায় রাখা উচিত। শীতকালে পানি কম পান করার প্রবণতা থাকে, তাই পানি ও তরল খাবার নিশ্চিত করতে হবে। সবজি যেমন গাজর, মিষ্টি আলু, কুমড়া, পালংশাক — এগুলো রোগপ্রতিরোধে সহায়ক। প্রক্রিয়াজাত খাবারের বদলে ঘরে তৈরি খাবারই নিরাপদ।

জাগো নিউজ: প্রচণ্ড ঠান্ডায় শিশুদের বাইরে নিয়ে যাওয়া কি নিরাপদ?

ডা. মনজুর হোসেন: খুব প্রয়োজন ছাড়া শীতকালে ছোট শিশুদের বাইরে না নেওয়াই ভালো। বের হলে গরম কাপড়, টুপি, কান ঢেকে রাখার ব্যবস্থা, মোজা ও গ্লাভস পরাতে হবে। ১৫–২০ মিনিটের বেশি বাইরে না থাকা ভালো। শিশুর জ্বর বা ঠান্ডা থাকলে বাইরে নেওয়া উচিত নয়। আবার বাইরে পোশাক ভিজে গেলে দ্রুত বদলে দিতে হবে।

জাগো নিউজ: শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে অভিভাবকদের কী করা উচিত?

ডা. মনজুর হোসেন: সুষম খাদ্যই রোগপ্রতিরোধের ভিত্তি। শীতকালে বেশি কাপড় পরার কারণে শিশুদের রোদ কম লাগে, এতে ভিটামিন-ডি ঘাটতি দেখা দিতে পারে। তাই সকাল ১০টা থেকে দুপুর পর্যন্ত প্রতি দিন ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা রোদে রাখলে উপকার হয়।

স্কুল শেষে কোচিংয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে শিশুদের খেলাধুলার সময় কমে গেছে—অভিভাবকদের উচিত সপ্তাহে কয়েকদিন মাঠে বা পার্কে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা। ফাস্টফুড, কোমল পানীয় ও উচ্চ-ক্যালোরিযুক্ত খাবার কমাতে হবে। শীতকালে দুই দিন পর পর কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করানো এবং নিয়মিত শরীর পরিষ্কার রাখা জরুরি।

জাগো নিউজ: যদি কোনো শিশু বারবার অসুস্থ হয়, তাহলে কী পরীক্ষা বা চিকিৎসা প্রয়োজন?

ডা. মনজুর হোসেন: শীতকালে শ্বাসতন্ত্রের পাশাপাশি ডায়রিয়ার প্রকোপও বাড়ে। দিনে ৩–৪ বারের বেশি পাতলা মল হলে ডায়রিয়া ধরে নিতে হবে। ডায়রিয়া হলে ওরস্যালাইন খাওয়ানো জরুরি। নির্দেশনা অনুযায়ী পানির পরিমাণ মেনে সঠিকভাবে স্যালাইন মেশাতে হবে, পানির পরিমাণ কম–বেশি হলে কাজ নষ্ট হতে পারে। শীতে খোসপাঁচড়া ও স্ক্যাবিসও বাড়ে, তাই পরিচ্ছন্নতা জরুরি।

এএমপি/জেআইএম