জাতীয়

কড়াইল বস্তিতে আগুনে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন দাবি জোনায়েদ সাকির

রাজধানীর কড়াইল বস্তিতে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের জরুরি সহায়তা ও পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছে গণসংহতি আন্দোলন। সোমবার (১ ডিসেম্বর) দুপুরে বস্তিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।

এসময় গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি অভিযোগ করেন, গত ২৫ নভেম্বর আগুন লাগার পর এখন পর্যন্ত বস্তির ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের জীবনধারণের প্রয়োজন মেটানো ও তাদের পুনর্বাসনের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে যথাযথ কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। যেসব ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রম এখানে চলমান রয়েছে, সেগুলো প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।

তিনি বলেন, ‘আমরা আগুনের ঘটনার পর থেকেই বারবার বলে এসেছি সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের দায়িত্ব গ্রহণ ও পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য। কিন্তু এখনো এই উদ্যোগ না নেওয়ায় আমরা নিন্দা জানাই।’

সংবাদ সম্মেলনে বেশ কিছু দাবি জানান জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, কড়াইলের আগুনকে দুর্যোগ হিসেবে চিহ্নিত করে ঘোষণা করতে হবে। এখানকার ক্ষতিগ্রস্তদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা করে প্রত্যেকের খাবার, থাকার জায়গা, কাপড়, টয়লেট ও স্বাস্থ্যসেবাসহ প্রয়োজনীয় সুবিধার ব্যবস্থা করতে হবে।

‘কড়াইলে বৈধভাবে পাইপলাইনে গ্যাস দিতে হবে। আগুন এত ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়ার কারণ হিসেবে অনেকেই আমাদের বলেছেন গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের কথা। কয়েক মাস আগেও এখানে তিতাস গ্যাসের লাইন ছিল। আমরা জানতে পেরেছি ‘অবৈধ’ হিসেবে চিহ্নিত করে এ লাইন কেটে দেওয়া হয়। বাসিন্দারা অনেকেই অভিযোগ করেছেন, অবৈধ অর্থ চেয়েছিলেন তিতাসের কেউ কেউ। সেটা না দেওয়াতে লাইন বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এ কারণে কড়াইল জনবসতির বাসিন্দারা বাধ্য হয়ে সিলিন্ডারের ওপর নির্ভরশীল হয়েছেন। কড়াইলের মত ঘনবসতির এলাকায় সিলিন্ডারের নিরাপত্তাবিধি নিশ্চিত করা কঠিন। তাই কোনো দুর্নীতি ছাড়াই বৈধভাবে তাদের জন্য পাইপলাইনে গ্যাস নিশ্চিত করতে হবে। তারা আগুনের দুর্যোগের মাঝে বেশি থাকেন বলে এক্ষেত্রে তাদেরই অগ্রাধিকার বেশি দিতে হবে,’ যোগ করেন তিনি।

আগুনে ক্ষতিগ্রস্তদের আইডি কার্ডের বন্দোবস্ত করতে হবে জানিয়ে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘কড়াইলের বিপুলসংখ্যক অধিবাসীর কাগজপত্র পুড়ে গেছে। তাদের ভোটার আইডিও পুড়ে গেছে। এর অভাবে অনেকেই চাকরিতে যোগ দিতে পারবেন না, অন্যান্য সমস্যায় পড়বেন। আমরা দাবি জানাই, এত বিপুলসংখ্যক নাগরিকের ভোটাধিকারকে অনিশ্চয়তার মাঝে ফেলা চলবে না। অবিলম্বে জরুরি ভিত্তিতে উদ্যোগ নিয়ে হাতের আঙুলের ছাপ বা এমন কোকো সহজ অথচ গ্রহণযোগ্য প্রমাণের ভিত্তিতে তাদের জন্য ভোটার আইডি কার্ডের ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য যেন তাদের জেলায় জেলায় না যেতে হয়। বরং এই জনবসতিতেই জরুরিভিত্তিতে ভোটার ক্যাম্প করে নির্বাচন কমিশনকে তাদের আইডির ব্যবস্থা করতে হবে।’

কড়াইলবাসীর পুনর্বাসনের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়ার দাবি জানিয়ে জোনায়েদ সাকি বলেন, কড়াইল বস্তির মানুষের সব নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করে পরিকল্পিত আবাসন নিশ্চিত করার জন্য সরকারকে পরিকল্পনা করতে হবে। আগুন লাগার ঘটনাকে স্থায়ীভাবে বন্ধ করার প্রয়োজনীয় বন্দোবস্ত করতে হবে। এছাড়া কড়াইলে স্থায়ী ভিত্তিতে সরকারি হাসপাতাল নির্মাণের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবার বন্দোবস্ত লাগবে, যেখানে তারা এ বসতির ভেতরেই কিংবা নিকটবর্তী এলাকায় সুলভে চিকিৎসা, অস্ত্রোপচার ও অন্যান্য রোগ নির্ণয়ের সুবিধা পেতে পারেন। সব ধরনের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে কড়াইলের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

সংবাদ সম্মেলন শেষ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে খাদ্যপণ্য সরবরাহ করেন গণসংহতি আন্দোলনের নেতাকর্মীরা।

এমএমএ/একিউএফ/এমএস