অলিম্পিক গেমস মানেই গ্রিসের অলিম্পিক পাহাড়ে প্রজ্বলিত মশাল এবং সেই মশালের বিশ্বভ্রমণ শেষে গেমস ভেন্যুতে গিয়ে স্থায়ীভাবে প্রজ্জলন। এরই ধারাবাহিকতায়, এ বছরের রিও অলিম্পিকসের জন্য অলিম্পিক মশাল প্রজ্জ্বলন করা হয় ২১ এপ্রিল দক্ষিণ গ্রিসের অলিম্পিয়া পাহাড়ে।এরপরই শুরু হয় মশালের বিশ্বভ্রমণ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ঘুরে অবশেষে সেই মশাল এখন পৌঁছে গেছে রিও ডি জেনিরোয়। ৫ আগস্ট মারাকানায় অনুষ্ঠিত হবে চূড়ান্ত প্রজ্জ্বলন। ব্রাজিলের কোন কিংবদন্তী জ্বালিয়ে দেবেন রিও অলিম্পিক গেমসের মশাল। এরপরই শুরু হয়ে যাবে ময়দানি লড়াই।অলিম্পিক মশাল প্রজ্জ্বলনের প্রথা চালু হয়েছিল ৮০ বছর আগে বার্লিন গেমসের সময়। প্রাচীন অলিম্পিয়ায় যেখানে ১০০০ বছরের বেশি সময় ধরে এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়ে এসেছে, সেখানকার প্রাচীন পদ্ধতি অনুসারেই মশাল প্রজ্জ্বলন ও তার বিশ্ব পরিক্রমার রীতি শুরু হয়েছিল। গ্রিসের অলিম্পিয়া পাহাড়ে মশালটি জ্বালান তারকা ক্যাটেরিনা লিহু, যিনি প্রাচীন প্রথা অনুসারে প্রধান উপাসকের ভূমিকা পালন করেন দেবতা অ্যাপোলোর প্রতি প্রার্থনা নিবেদনের অভিনয়ের মধ্যে দিয়ে।অ্যাপোলো ছিলেন আলো ও সঙ্গীতের প্রাচীন গ্রিক দেবতা। পা পর্যন্ত লম্বা ঝুলের পোশাক পরে ক্যাটেরিনা মাটিতে হাঁটু গেঁড়ে বসেন এবং আয়নার মধ্যে দিয়ে সূর্যরশ্মির বিচ্ছুরণকে ধরে মশালটি জ্বালাতে তিনি সময় নেন মাত্র কয়েক সেকেন্ড। এরপর মশালটি তুলে দেন গ্রিসের বিশ্ব জিমনাস্টিক চ্যাম্পিয়ন এলেফথেরিও পেত্রুনিয়াসের হাতে। তিনিই প্রথম এই মশালটি বহন করেন।এরপর এই মশালের শিখা প্রদক্ষিণ করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এবং বিভিন্ন শহর। এরপর স্বাগতিক দেশ ব্রাজিলে পৌঁছায় ৩ মে। ব্রাজিলের ২৬টি রাজ্যের রাজধানীসহ তিনশত শহর ও গ্রাম ঘুরে এই মশাল ইতিমধ্যে পৌঁছে গেছে রিওতে। ৫ই অগাস্ট পৌঁছবে স্টেডিয়ামে। বিভিন্ন দেশে এই মশাল বহন করেছেন প্রায় ১২ হাজার মানুষ।৪ আগস্ট রিওতে যাত্রার শেষ দিকে রিও অলিম্পিক গমসে মশাল বহন করার জন্য বিশ্ব অলিম্পিক কমিটির পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে শান্তিতে নোবেলজয়ী বাংলাদেশি ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে। ৪ আগস্ট রিও ডি জেনিরোতেই অলিম্পিক মশাল বহন করার কথা ছিল তার। ৫ আগস্ট অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মশাল যাত্রায় অংশ নেবেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র প্রধান। মশাল বহন করবেন জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন। সর্বশেষ মশাল প্রজ্জ্বলন করার কথা রয়েছে কিংবদন্তি ফুটবলার পেলের।তবে ব্রাজিলে অলিম্পিকের মশাল যাত্রা খুব একটা সুখকর হচ্ছে না। কারণ রিও ডি জেনিরোতে মশাল পৌঁছানোর পর শহরটিতে শত-শত মানুষ সহিংস বিক্ষোভে জড়িয়ে পড়েন এবং মশাল প্রদক্ষিণের রাস্তা বন্ধ কওে দেন। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস পর্যন্ত নিক্ষেপ করে।অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাত্র দুই দিন বাকি থাকতে অলিম্পিক মশালটি যখন রিও ডি জেনিরোর উত্তরাঞ্চলে শিল্প এলাকা প্রদক্ষিণ করছিল তখন শত-শত প্রতিবাদকারী রাস্তা আটকে বিক্ষোভ করেন। অলিম্পিক গেমস আয়োজনে ব্যাপক অর্থব্যয় নিয়ে তারা ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্যেই ভারী অস্ত্রে সজ্জিত দাঙ্গা পুলিশ বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে কাদানে গ্যাস এবং পেপার স্প্রে ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে।সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি থেকে দেখা যাচ্ছে অন্তত একজন পুলিশ সদস্য সরাসরি বিক্ষোভকারীদের দিকে কাঁদানে গ্যাস ছুড়ছেন। অলিম্পিক আয়োজকেরা ঠিক এই ভয়েই ছিলেন যে, ব্র্রাজিলজুড়ে শান্তিপূর্ণভাবে মশাল প্রদক্ষিণ শেষে রিওতে এ ধরণের ঘটনা ঘটতে পারে। বিক্ষোভের ঘটনা ঘটলেও মশালের আগমনকে স্বাগত জানান রিও’র অনেক মানুষ।রেজিনাল্ডো সান্তোস দা সিলভা নামের একজন বলছেন, ‘আমি খুবই আবেগাপ্লুত, এটি আমার জীবনের খুব বড় একটি মুহূর্ত যে অলিম্পিক মশাল রিও ডি জেনিরোতে এসেছে। এটি একটি অনন্য অভিজ্ঞতা আমার জন্য, অনেকটা অবিশ্বাস্য।’ লরা মারিয়া নামের একজন বলেন, ‘আমরা একটি দারুণ গেমসের আশা করছি। আশা করি ক্রীড়াক্ষেত্রে এবং জননিরাপত্তার ক্ষেত্রেও সবকিছু ঠিকভাবেই কাটবে।’এর আগে ৪ আগস্ট ব্রাজিলের সাবেক অলিম্পিক পদকবজয়ীরা একটি ইয়ট চালিয়ে সমুদ্রপথে মশালটি নিয়ে রিওতে পৌঁছান। এরপর মশালটি নিয়ে শহর প্রদক্ষিণ করেন রিওর মেয়র এডুয়াার্ডো পায়েজ। ব্রাজিল সরকার অলিম্পিক গেমসের সফলতা নিয়ে আশাবাদী হলেও আয়োজকরা বলছেন, এখনো অলিম্পিকসের বিভিন্ন ইভেন্টের ১০ লাখেরও বেশি টিকেট অবিক্রীত রয়েছে। এর জন্য তারা মূলত: ব্রাজিলের অর্থনৈতিক মন্দা এবং জিকা ভাইরাসকে দায়ী করেন।অলিম্পিক নিয়ে জাগো চ্যাম্পিয়নের বিশেষ এই আয়োজন পড়তে ক্লিক করুন এই লিংকে…আইএইচএস/বিএ