শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে ১৫ আগস্ট সরকারিভাবে আয়োজিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা অনুষ্ঠান বর্জন করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভায় বক্তব্য দেওয়া নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের নেতাকর্মীরা হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন। এতে প্রশাসন কোনো পক্ষকেই বক্তব্যের সুযোগ না দিলে উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ শোক দিবসের অনুষ্ঠান বর্জন করে সভাস্থল ত্যাগ করেন। পরে অবশ্য আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ নিজ নিজ কার্যালয়ে দলীয়ভাবে আলোচনা সভা করেছেন।প্রত্যক্ষদর্শী ও দলীয় সূত্রে জানা যায়, ঝিনাইগাতী উপজেলা পরিষদ চত্বরে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সকাল ১০টার দিকে জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভা শুরু হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সেলিম রেজা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানে উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাদশা, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কমচারি, স্থানীয় আওয়ামী ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং বিভিন্নস্তরের সুধীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সভায় অতিথিদের বক্তব্য শুরু হওয়ার একপর্যায়ে সঞ্চালক মাইকে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে শাওন মিয়া নামে একজনকে বক্তব্য দেওয়ার জন্য আহ্বান জানালে উত্তেজনা শুরু হয়। উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ফারুক হোসেন তাৎক্ষণিক এর প্রতিবাদ করে বলে ওঠেন, এখানে উপজেলা ছাত্রলীগের কোনো কমিটি নেই। শাওন ছাত্রলীগের কেউ না। তাকে বক্তব্য দিতে দেওয়া যাবে না। এনিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হলে প্রশাসনের কর্মকর্তারা তা নিবৃত্ত করেন এবং আওয়ামী লীগের কোনো পক্ষকেই অনুষ্ঠানে বক্তব্যের জন্য ডাকা হবে না বলে ঘোষণা দেন। এতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এসএমএ ওয়ারেজ নাঈম ও সাধারণ সম্পাদক আমিরুজ্জামান লেবু তাদের সমর্থক ও দলীয় নেতৃবৃন্দকে নিয়ে অনুষ্ঠান বর্জনের ঘোষণা দিয়ে সভাস্থল ত্যাগ করেন। এসময় তাদের প্রতিপক্ষরাও অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করলে শান্তিপূর্ণভাবে উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত আলোচনা সভাটি শেষ হয়।এদিকে, সরকারিভাবে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভা বর্জন করে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এসএমএ ওয়ারেজ নাঈমের সভাপতিত্বে উপজেলা আওয়ামী লীগ অফিসে দলীয়ভাবে আলোচনা সভা করেন এবং অপরপক্ষ উপজেলা যুবলীগ অফিসে আলোচনা সভা করেন।ঝিনাইগাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিরুজ্জামান লেবু এ প্রসঙ্গে বলেন, উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতৃবৃন্দকে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ না দেওয়ায় আমরা অনুষ্ঠান বর্জন করেছি। অনুষ্ঠানস্থলে প্রতিপক্ষরা উত্তেজনা সৃষ্টি করলে সেখানে মৃদু হাতাহাতির ঘটনা ঘটলেও কোনো অপ্রীতিকর কিছু হয়নি। পরে তারা দলীয় অফিসে আলোচনা সভা করেছেন বলেও জানান। অপরদিকে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মো. ফারুক হোসেন বলেন, প্রশাসনের আলোচনায় ছাত্রলীগ সভাপতি হিসেবে বক্তব্যের জন্য শাওনের নাম ঘোষণা করলে আমরা প্রতিবাদ করি। আমি দুই বারের ছাত্রলীগ সভাপতি ছিলাম। শাওন ছাত্রলীগের কেউ না। আমার পর আর কোনো কমিটি হয়নি। শাওন, নাঈমের সঙ্গে ঘুরঘুর করে। কমিটিই যেখানে নেই সেখানে ছাত্রলীগ সভাপতি হলো কিভাবে। পরে দুই পক্ষের কাউকেই আর বক্তব্যের জন্য ডাকা হয়নি। এ বিষয়ে ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ সেলিম রেজা বলেন, শোক দিবসের আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়া নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের মধ্যে দুটি গ্রুপ হয়ে গেলে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে উভয়পক্ষকে বুঝিয়ে-শুনিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করা হয়। কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই আলোচনা সভা শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। হাকিম বাবুল/এফএ/আরআইপি