জাতীয়

এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি : ব্রিটিশ পার্লামেন্ট

এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি : ব্রিটিশ পার্লামেন্ট

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধীদল বিএনপির মধ্যকার রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট। অর্থনীতির অগ্রগতি বজায় থাকায় বাংলাদেশের প্রশংসাও করেছে তারা। স্থানীয় সময় বুধবার প্রকাশিত ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সের এক প্রতিবেদনে ওই প্রশংসা করা হয়। এতে বলা হয়, `রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও উল্লেখযোগ্যভাবে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। অনেক চ্যালেঞ্জ থাকার পরও দেশটির সামাজিক ক্ষেত্রে উন্নয়ন হচ্ছে। ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট’ শিরোনামে প্রতিবেদনটি তৈরী করেছে হাউজ অব কমন্সের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও প্রতিরক্ষা বিভাগ। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক চিত্রে অস্থিরতা রয়েই গেছে। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন চলমান সহিংসতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। গত ১৪ জানুয়ারি ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন সব রাজনৈতিক দলকে সংযম প্রদর্শন করে সংলাপের মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির আহ্বান জানিয়েছেন। এরই মধ্যে ‘বিতর্কিত’ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দোষীদের বিচারকাজ চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণতন্ত্র নিয়ে খামখেয়ালির অভিযোগ রয়েছে। তবে গণতন্ত্রের প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অঙ্গীকার নিয়েও অনেক বিশ্লেষকের প্রশ্ন রয়েছে। কেউ কেউ মনে করছেন খালেদা জিয়া প্রত্যাশা করতে পারেন যে, তার বর্তমান কৌশল সেনাবাহিনীকে আরো একবার হস্তপে ও আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাতের দিকে ঠেলে দিবে। যদিও এখন পর্যন্ত সেরকম ঘটার কোনো লক্ষণ নেই। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পর্যায়ক্রমে রাষ্ট্রমতায় আসা এবং এর মাঝে রাজনৈতিক বিরোধের সুযোগে সামরিক হস্তক্ষেপের ইতিহাস তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, সেনাবাহিনী কয়েক দফায় বাংলাদেশের ক্ষমতায় ‘সার্কিট ব্রেকার’ হিসেবে কাজ করেছে। বাংলাদেশে সেনাবাহিনী সব সময় একটি রাজনৈতিক ভূমিকা রেখে এসেছে, সাধারণভাবে যা আওয়ামী লীগের প্রতি বৈরী। দুই বছর সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পর ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তিন-চতুর্থাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে জয়ী হলে অনেকে আশা করেছিলেন বাংলাদেশ অতীত রাজনৈতিক ইতিহাস থেকে বের হতে পারবে। তবে দুই বেগম হিসেবে পরিচিতি পাওয়া শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার বিবাদের কারণে সেই সুযোগ ভেস্তে গেছে। মানতাবিরোধী অপরাধে দন্ডিত চৌধুরী মঈনুদ্দিনকে হস্তান্তরে বাংলাদেশ যুক্তরাজ্যকে কোনো অনুরোধ করেছে কি-না সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। কয়েক বছর ধরে লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ফেরত চাওয়ার কোনো অনুরোধও যুক্তরাজ্য সরকারের কাছে পৌঁছানোর তথ্য মেলেনি বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়। এতে বলা হয়, বিদ্যমান আইনে বাংলাদেশ তার দেশের কোনো নাগরিককে হস্তান্তরের অনুরোধ জানাতে পারে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে ব্রিটেনকে তাকে হস্তান্তর করতে হবে। মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত বা এ দন্ড পেতে পারেন এমন কাউকে যুক্তরাজ্য হস্তান্তর করে না। মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হবে না- শুধু এ নিশ্চয়তার ভিত্তিতেই কাউকে হস্তান্তর করা যেতে পারে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ সরকার এমন কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে যা মানবাধিকার ক্ষুন্নকারী হিসাবে সমালোচকরা বিবেচনা করে থাকেন। সরকার একটি সম্প্রচার নীতিমালা অনুমোদন করেছে। অনেকে এটিকে মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর হুমকী হিসাবে দেখছে। এছাড়া বিদেশী অনুদান গ্রহণের জন্য নাগরিক সমাজের গ্রুপগুলোর জন্য শাস্তির বিধান রেখে সংসদে একটি বিল তোলা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে দিয়ে অপর একটি বিলের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে জানানো হয়, ৫ জানুয়ারি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা চালানোর অভিযোগে গত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে শতাধিক বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। অক্টোবরে শেখ হাসিনাকে হত্যা এবং আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করার জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) একটি পরিকল্পনা বাংলাদেশ সরকারকে অবহিত করে ভারত সরকার। এর পর বাংলাদেশে জেএমবির বেশকিছু জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়। নভেম্বরে অপর সন্ত্রাসবাদী গ্রুপ হরকাতুল জেহাদ আল-ইসলামীর সদস্যদের আটক করা হয়। ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রথম রায়ের পর দেয়া এক প্রতিক্রিয়ায় তৎকালিন ব্রিটিশ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ব্যারনেস ওয়ার্সি বলেছেন, ব্রিটিশ সরকার অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনাকে সমর্থন করে। তবে নীতিগতভাবে মৃত্যুদণ্ডকে জোরালোভাবে বিরোধীতা করে। তিনি বলেন, ব্রিটেন আশা করে বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে আন্তর্জাতিক অধিকার গ্রুপসমূহ ও আইনজীবীদের উদ্বেগকে ট্রাইব্যুনাল মূল্যায়ন করবে।-এএইচ

Advertisement