প্রতি বছরের মতো আবার এলো ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি। বিশ্বব্যাপী মাতৃভাষার অধিকার আদায়ের এক ঐতিহাসিক কাল। ১৯৫২ সালের এ-মাসেই ভাষার জন্য বুকের তাজা রক্ত ঢেলে বাঙালি অর্জন করেছে তার প্রাণের ভাষা। কিন্তু, নানা অবহেলায় আজও সর্বত্র ঠাঁই হয়নি বাংলা ভাষার। তাইতো দীর্ঘসময় পর আজকের এই `স্বাধীন` ও `প্রতিষ্ঠিত` বাংলাদেশেও ভাষা আন্দোলনের লড়াকুরা খুঁজে ফিরছেন একুশের চেতনা।১৯৫২`র এই ফেব্রুয়ারিতেই সংঘটিত হয়েছিলো বাঙ্গালির ভাষার যুদ্ধ। সে যুদ্ধে যে বীরেরা রক্ত ঢেলেছিলেন, সে রক্তের রেখা ধরেই মুক্ত হয়েছিলো কিন্তু, ভাষা সৈনিকরা বলছেন যে লক্ষ্য আর আদর্শ নিয়ে মহান সেই আত্মাহুতি; তা আজ অনেকটাই ভূলুন্ঠিত। তাদের দাবি, সর্বক্ষেত্রে বাংলার প্রয়োগ আর উদার গণতান্ত্রিক চর্চার মাধ্যমে জাগরূক থাকবে বাংলাভাষা, সমুন্নত থাকবে একুশের চেতনা।ঐতিহাসিক সেই আন্দোলনের পর পেরিয়ে গেলো দীর্ঘ ৬ দশক। কিন্তু, আজও ভাষা সংগ্রামের সেই অগ্রনায়কদের আক্ষেপ- ২১`র চেতনা বার বার বিলম্বিত হচ্ছে রাজনীতি আর শাসকদের মর্জি মতো।ভাষা সৈনিক ডা. আহমদ রফিক বলেন, তাদের শ্রেণি-স্বার্থ রক্ষার দিক থেকেই একুশের চেতনা বারবার শাসনতান্ত্রিক দলের হাতে বিড়ম্বনার শিকার হয়েছে, এখনও হচ্ছে।ভাষা সৈনিক রওশন আরা বাচ্চু বলেন, যারা প্রশাসনে গিয়েছেন, তারা তাদের মতো করে সাজিয়েছেন; ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য এ চেতনাবোধ নি:শেষ করে দিয়েছেন।সংবিধানের পাতায়; প্রজাতন্ত্রের বিধানে `বাংলা` রাষ্ট্রভাষার মর্যাদায় থাকলেও, সর্বক্ষেত্রে বাংলার প্রচলন না করা একুশের চেতনার সাথেই স্ববিরোধিতা বলে ক্ষোভ প্রকাশ সে সময়ের এই ভাষাযোদ্ধাদের।এ ব্যাপারে রওশন আরা বাচ্চু বলেন, আমাদের মাতৃভাষাকে অবজ্ঞা করার জন্য, বিদেশি ভাষা আকৃষ্ট করা হচ্ছে, অবিলম্বে মাতৃভাষা সর্বস্তরে চালু হওয়া উচিৎ।ডা. আহমদ রফিক বলেন, সংবিধানে প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা, তার মানে জাতীয় জীবনে সর্বস্তরে বাংলা। কিন্ডারগার্টেন থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি সব পর্যায়ে বিদেশি ভাষা ছেয়ে গেছে। চেতনায় রাখছেন, মুখে বলছেন বাংলা ভাষার কথা; আর বাস্তবে তার উল্টো- এটাতো স্ববিরোধিতা।এএইচ/আরআইপি