ফিচার

বাংলার কার্টুনের ইতিকথা

সাহিত্য ক্ষেত্রে রম্য রচনা আর চিত্রকলার কার্টুন একই অর্থবহন করে থাকে। সমাজের নানান অসঙ্গতি ব্যঙ্গ চিত্রের মাধ্যমে প্রকাশ করাটাই কার্টুনের মূল উদ্দেশ্য হিসেবে জানি আমরা। নিজের বক্তব্য প্রকাশে তীর্যক ভাব, রাগ-ক্ষোভ ফুটিয়ে তোলায় কার্টুনের জুড়ি নেই। এক কথায় প্রতিবাদী মনোভাবের জন্যে কার্টুন শক্ত হাতিয়ার।কলকাতার বর্ষীয়ান কার্টুনিষ্ট চন্ডী লাহিড়ীর মতে পুরো সোস্যালিষ্ট আন্দোলনটাই দাড়িয়ে আছে কার্টুন আর পোষ্টারের উপর। বিশ্বজুড়ে যখন কার্টুন বিপ্লব যখন শুরু হয় তখন সেখান থেকে পিছিয়ে ছিলোনা বাংলার মানুষজনও। আজকাল অতীত শিল্পীদের সাথে বর্তমান প্রজন্মের কার্টুন চিত্রের ঝাঁঝ দেখে বোঝা যায় বাংলার কার্টুনের জয়যাত্রা আজও অটুট। বাংলা অঞ্চলে প্রথম এডিটরিয়াল কার্টুন প্রকাশ পায় পিশ্চিমবঙ্গের সেসময়কার অমৃত বাজার পত্রিকায়। তখন সময়কাল ছিলো ১৮৭২ সাল। তার দুই বছর পরই ১৮৭৪ এ বিখ্যাত কার্টুন হরবোলা ভাঁড় এবং একই বছর প্রকাশিত হয়েছিলো বসন্তক। তখনকার সমাজে কার্টুন নিয়ে এক প্রকার তোলপাড় শুরু হলো এবং একই সাথে শুরু হলো বাংলা কার্টুনের অগ্রযাত্রা।পশ্চিমবাংলায় বহু কালজয়ী কার্টুন সংকলন রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো গগনেন্দ্রনাথের কার্টুন সংকলন ‘বিরূপ বজ্র’ আর ‘নব হুল্লোড়’। এছাড়াও ১৯২১ সালে চিত্র শিল্পী বসন্ত গাঙ্গুলি কর্তৃক ছাপানো হয় ‘ইন্ডিয়ান কার্টুনস’ নামে একটি কার্টুন সংকলন। যতীন্দ্র কুমার সেনের নারী বিদ্রোহ সিরিজেও রয়েছে অসংখ্য কার্টুন যা প্রকাশ হয় ‘মানসী ও মর্মবাণী’ পত্রিকায়। অন্যদিকে বাংলাদেশেও বিভ্ন্নি সময় নানা আন্দোলনের হাতিয়ার হয়েছে কার্টুন। ৬৯’র স্বৈরশাসক আইয়ূব খানকে ব্যঙ্গ করে বাংলাদেশের প্রখ্যাত কার্টুনিষ্টদ্বয় রফিকুন নবী এবং কামরূল হাসান প্রচূর কার্টুন এঁকেছেন। সেসময় এগুলো দেশব্যাপি জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো; দিয়েছিলো আন্দোলনের ভিন্নমাত্রা। পাশাপাশি ৭১’এর গণহত্যার মূল ঘাতক জেনারেল ইয়াহিয়াকে ব্যাঙ্গ করে ‘এই জানোয়ারকে হত্যা করতে হবে’ নামক যে বিখ্যাত কার্টুনটি আঁকা হয় সেটিও ছিলো কার্টুন শিল্পী কামরূল হাসানের করা। পরবর্তীতে আহসান হাবীব, মেহেদী হাসান, শিশির ভট্টাচার্য, তারিক সাইফুল্লাহদের মতো অসংখ্যা গুনী কার্টুনিষ্টরা এদেশে কার্টুনকে জনপ্রিয়তা দিয়েছেন। বিশেষ করে বলতে হয় আহসান হাবীবের রম্য কার্টুন চরিত্র উম্মাদ বাংলাদেশে একসময় তুমুল জনপ্রিয় ছিলো। সে আবেদন এখন আর না থাকলেও যারা বই-সাহিত্য ভালোবাসেন তারা আজও উম্মাদে মজে আছেন।আর সর্বশেষ ঢাকার শাহবাগে রাজাকারবিরোধী যে আন্দোলন বিশ্বব্যাপি আলোড়ন তৈরি করেছিলো সেখানেও দেখা গেছে কার্টুনিস্টদের মুন্সিয়ানা। এক কথায় বলা যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ভারতবর্ষে নীরবে যে কার্টুন বিপ্লব ঘটে যায় তার পিছনে বাঙ্গালির অবদান অনস্বীকার্য। কার্টুন শিল্প বিকশিত হোক তার স্বমহীমায় অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের হাতিয়ার হয়ে উঠুক আরো শানিত। অবুঝ মনের অব্যক্ত প্রেম গুলোও ভাষা হয়ে অংকিত হৌক কার্টুনিষ্টের তুলিতে।আরএএইচ/আরআইপি