স্ট্রবেরী চাষ এনে দিয়েছে জীবনের গতি। যারা আগে জমিতে অন্যান্য ফসল ফলিয়ে তেমন একটা লাভের মুখ দেখতেন না আজ সেই চাষীরা স্ট্রবেরী চাষ করে লাভের হাসি হাসছে।গাইবান্ধার পলাশবাড়ীর বিভিন্ন গ্রামগঞ্জে ফসলের মাঠে তাই দেখা যাচ্ছে সবুজের ফাঁকে-ফাঁকে লাল স্ট্রবেরীর হাসি।আগে সেখানে স্ট্রবেরী নামক ফলটি কেউ চিনতেন না। আজ তারা স্ট্রবেরী ফলাচ্ছে। বাজারজাত করছে। লাভবান হচ্ছে। স্ট্রবেরী চাষের মাঠ দিন-দিন বাড়ছে। উপজেলার কয়েকটি গ্রাম সরেজমিন ঘুরে এ রকম দৃশ্যই দেখা গেছে।উপজেলার কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের বেংগুলিয়া গ্রামের কৃষক আলহাজ্ব জেনারুল ইসলামের সাথে কথা বলে যায়, বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে স্ট্রবেরী ফল চাষের কলাকৌশল, আয়-ব্যয়ের হিসাব-নিকাশ ও লাভের অংক দেখে স্ট্রবেরী চাষে তিনি উদ্ধুদ্ধ হন। ফলে গত বছর শখের বশবর্তী হয়ে চারা আমদানি করে মাত্র ১০ শতাংশ জমিতে স্ট্রবেরী চাষ শুরু করেন। সে সময় ১০ শতাংশ জমিতে উৎপাদন ব্যয় হয় লক্ষাধিক টাকা। ওই বছরে প্রথম চাষ করায় উৎপাদন খরচ বেশী হওয়ায় প্রত্যাশা অনুযায়ী মুনাফা ঘরে না আসলেও মোটামুটি লাভবান হয়েছেন বলে তিনি জানান।এ বছর তার নিজ জমি থেকেই চারার যোগান দিয়ে ১০ শতাংশ থেকে একেবারে ১ একর ৬৬ শতাংশ জমিতে স্ট্রবেরী’র চারা রোপন করেন। রোপন থেকে ফল উৎপাদন পর্যন্ত জমির পরিচর্যাসহ মোট ব্যয় দাঁড়ায় প্রায় ৪ লাখ টাকা। উৎপাদিত স্ট্রবেরী থেকে ইতোমধ্যে তিনি উৎপাদন খরচ তুলে ফেলেছেন। তিনি আশা করছেন আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবং বাজারজাতকরণে বিঘ্ন না ঘটলে আরো লাভ হবে। এখনও তার যে পরিমাণ ফলন আছে তা বিক্রি করে ৫ থেকে ৭ লক্ষাধিক টাকা ঘরে তুলবেন যা পুরোটাই তার লাভের অংশ হিসেবে থাকবে।কৃষক জেনারুলের সাথে কথা বলে আরো জানা যায়, উৎপাদিত হওয়ার পর প্রতিদিন ঢাকা কোচে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে গড়ে ২’শ থেকে ২’শ ৫০ কেজি স্ট্রবেরী রাজধানীর কারওয়ান বাজার আড়ৎ-এ সরবরাহ করেন। যার মূল্য দাড়ায় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। তিনি আরো ১ থেকে দেড় মাস এভাবে স্ট্রবেরী ঢাকায় বাজারজাত করতে পারবেন বলে জানান।কৃষক জেনারুলের স্ট্রবেরী চাষ দেখে একই ইউনিয়নের পলাশগাছী গ্রামের আমিনুল ইসলাম ৩ বিঘা, মহদীপুর ইউনিয়নের বিশ্রামগাছী গ্রামের হাজী মতলুবর রহমান ৩ বিঘা, সদর ইউনিয়নের জামালপুর গ্রামের মিজানুর রহমান ২ বিঘা ও উদয়সাগর গ্রামের ইউনুস আলী ১ বিঘা জমিতে এ বছর স্ট্রবেরী চাষ করেছেন। তাদের সাথে কথা বললে তারাও জেনারুলের সুরেই কথা বলেন।স্ট্রবেরী চাষীরা আরো বলেন, দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সার্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় বাধা-বিপত্তি থাকায় তারা তাদের উৎপাদিত স্ট্রবেরী ফল সঠিক সময়ে বাজারজাত বাঁধাগ্রস্ত হওয়ায় অধিক মুনাফা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। হরতাল অবরোধে সময়মত ঢাকায় ফল পাঠাতে না পারায় একদিকে স্ট্রবেরী নষ্ট হচ্ছে অন্যদিকে মূল্যের তারতম্য ঘটছে।কৃষি ঋণ পাওয়া গেলে স্ট্রবেরী চাষে এ এলাকায় বিস্তার ঘটানো সহজ হতো। অনেক কৃষক মূলধনের অভাবে স্ট্রবেরী চাষে আগ্রহ থাকলেও ফলাতে পারছেন না।পলাশবাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ শওকত ওসমান জাগো নিউজকে জানান, স্ট্রবেরী চাষে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তাদের আওতাধীন কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন।এমজেড /এআরএস/আরআই