দেশজুড়ে

রণাঙ্গনে তুখোড় যোদ্ধা ছিলেন নুরুল হুদা

১৯৭১ সাল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ছাত্র কে এম নুরুল হুদা। মন চায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে এনে দেশের মানুষের হাতে তুলে দিতে। কিন্তু যুদ্ধ করতে হলে আগে প্রয়োজন প্রশিক্ষণ। তাই কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে প্রশিক্ষণ নেয়ার জন্য প্রতিবেশী দেশ ভারতে পাড়ি দেন তিনি।প্রশিক্ষণ শেষে অক্টোবর মাসে সুন্দরবন ও বাগেরহাটের শরণখোলা হয়ে পটুয়াখালী এসে ৯নং সেক্টরের অধীনে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন নুরুল হুদা। যুদ্ধক্ষেত্রে অল্প সময়ের মধ্যে কয়েকটি সফল অপারেশনের পর তাকে পটুয়াখালীর একাংশের প্রশাসনিক কমান্ডারের দায়িত্ব দেয়া হয়।এরপর গলাচিপার পানপট্টিতে সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলেন কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা। সেখানে বিরতিহীন ১৩ ঘণ্টা যুদ্ধ করে সহস্রাধিক পাকসেনাকে হটিয়ে মুক্ত করা হয় পানপট্টি এলাকা।পরবর্তী সময়ে পটুয়াখালী জেলা মুক্ত করার ক্ষেত্রে নুরুল হুদা ব্যাপক ভূমিকা পালন করেন। পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার নওমালা ইউনিয়নে কে এম নুরুল হুদার গ্রামের বাড়ি ছিল মুক্তিবাহিনীর প্রশিক্ষণ ক্যাম্প। ওই ক্যাম্পে তরুণদের প্রশিক্ষণ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে পাঠানো হতো। একাধিকবার নুরুল হুদার বাড়িতে পাকবাহিনী হামলাও করে।কে এম নুরুল হুদার ভাই মুক্তিযোদ্ধা নয়া মিয়া বলেন, নুরুল হুদাকে মেরে ফেলার জন্য পাকসেনারা মরিয়া হয়ে উঠেছিল।তার সহযোদ্ধা পটুয়াখালীর জাসদ নেতা অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান শওকত বলেন, তুখোড় যোদ্ধা ছিলেন কে এম নুরুল হুদা। যুদ্ধকালীন পুরো বরিশাল অঞ্চলেই তার আধিপত্য ছিল। তাকে সবাই ক্যাপ্টেন হুদা নামে ডাকতেন।পটুয়াখালী জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আব্দুল বারেক বলেন, নুরুল হুদার নেতৃত্বে একটি বাহিনী ছিল। সেই বাহিনী পানপট্টি, শরণখোলা, কলাপাড়া ও গলাচিপায় একাধিক সম্মুখযুদ্ধ করেছে।তিনি বলেন, যুদ্ধকালীন গোটা বরিশাল অঞ্চলের প্রশাসনিক দায়িত্ব বেশ দক্ষতার সঙ্গে পালন করেন কে এম নুরুল হুদা। কেবল সম্মুখযুদ্ধে নয়, মুক্তিযোদ্ধাদের রসদ সরবরাহ ও সংগঠিত করার ক্ষেত্রে তার অসাধারণ ভূমিকা ছিল। সবমিলিয়ে এক চৌকস যোদ্ধা ছিলেন কে এম নুরুল হুদা।এদিকে কে এম নুরুল হুদা প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিযুক্ত হওয়ায় অভিনন্দন জানিয়েছেন পটুয়াখালী জেলার মুক্তিযোদ্ধারা।পটুয়াখালী জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার আবদুল হালিম বলেন, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে যেভাবে কেএম নুরুল হুদা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। ছিনিয়ে এনেছিলেন স্বাধীনতার লাল সূর্য। ঠিক সেভাবেই আন্তরিকতার সঙ্গে দলমতের ঊর্ধ্বে থেকে তিনি সিইসির দায়িত্বটি পালন করবেন।বিএ