চট্টগ্রামের সঙ্গে ঢাকা ছাড়া বাকি ছয় বিমানবন্দরের সঙ্গে সরাসরি কোনো বিমান যোগাযোগ নেই। রাষ্ট্রীয় বিমানসংস্থা বাংলাদেশ বিমান এবং বাকি চারটি বেসরকারি বিমান সংস্থার কোনোটিই চট্টগ্রাম থেকে ফ্লাইট চালু করেনি। সব ফ্লাইট ঢাকাকেন্দ্রিক। ঢাকার সঙ্গে সাতটি অভ্যন্তরীণ রুটে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট চালু হলে সেখানেও চট্টগ্রাম ও ঢাকা ছাড়া নতুন কোনো ফ্লাইট রাখা হয়নি। অথচ চট্টগ্রাম-বরিশাল, চট্টগ্রাম-যশোর, চট্টগ্রাম-সিলেট রুটে প্রচুর যাত্রী রয়েছেন। এই যাত্রীদের প্রায় সবাই ব্যবসায়ী, যাঁরা ঢাকা হয়ে বিমানে যাতায়াত করে থাকেন।দেশের প্রধান চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ও মংলা সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে ব্যবসায়িক যোগাযোগ অতীতের তুলনায় এখন সবচেয়ে বেশি। গত পাঁচ বছরে মংলা বন্দর সক্রিয় হওয়ায় ব্যবসায়ীদের চট্টগ্রাম থেকে মংলা যেতে হচ্ছে। এ ছাড়া সেই অঞ্চলে গড়ে তোলা হচ্ছে পায়রা বন্দর। কিন্তু সরাসরি বিমান যোগাযোগ না থাকায় ভোগান্তিতে পড়ছেন তাঁরা। আর চট্টগ্রামের সঙ্গে সিলেটমুখী ব্যাপক যাত্রী রয়েছেন যাঁরা এখন সড়কপথের ওপর নির্ভরশীল।দেশে গাড়ি পরিবহনে নিয়োজিত জাপানভিত্তিক এনওয়াইকে শিপিং লাইনসের জেনারেল ম্যানেজার রবি শংকর দাশ বলেন, `গত সপ্তাহে জাপানি একটি দল চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শন শেষে মংলা বন্দর পরিদর্শনে যায়। তাদের নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে বিমানে ঢাকা। সেখানে অপেক্ষার পর ঢাকা থেকে বিমানে যশোর। সেখান থেকে গাড়িতে খুলনা হয়ে মংলা বন্দরে পৌঁছতে গিয়ে গলদঘর্ম হয়েছে।` উল্লেখ্য, গাড়ি পরিবহনে নিয়োজিত প্রতি মাসে তিনটি জাহাজই প্রথমে চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়ে এরপর মংলা বন্দরে গিয়ে গাড়ি খালাস শেষে ফিরে যায়। এই রুটে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন ও বিদেশি একাধিক শিপিং লাইন কনটেইনার জাহাজে পণ্য পরিবহন করছে। এ ছাড়া মংলা ও আশপাশের এলাকায় প্রচুর শিল্পাঞ্চল গড়ে ওঠায় সেখানেও প্রচুর পণ্য আমদানি করা হয়।আমদানি পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত জেএসি শিপিং লাইনসের কর্ণধার শিমুল মজুমদার বলেন, `মংলা বন্দরের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগে চট্টগ্রাম-বরিশাল ফ্লাইট চালু করা উচিত। কারণ বরিশাল থেকে মংলা বন্দরের সড়ক পথের দূরত্ব মাত্র দুই ঘণ্টা, সড়কও অনেক ভালো। আর বরিশাল থেকে পর্যটন সম্ভাবনাময় কুয়াকাটা যেমন কাছে, তেমনি দেশের আরেক সমুদ্রবন্দর পায়রাও অনায়াসে ঘোরা যাবে।`মোট আমদানিকৃত খাদ্যপণ্যের একটি অংশ মংলা বন্দরে খালাসের নিয়ম চালু করে বিগত মহাজোট সরকার। ২০০৯ সাল থেকে এই নিয়ম চালু আছে। ফলে ব্যবসায়ীদের মংলামুখী যোগাযোগ বেড়েছে। এখন মংলা বন্দর থেকে সরাসরি পণ্য ফিতানি হচ্ছে বিভিন্ন দেশে। শুধু তাই নয় পটুয়াখালীর পায়রা সমুদ্রবন্দর গড়ে তোলার পরিকল্পনাকে ঘিরেও বাড়ছে ব্যবসা-বাণিজ্য।চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, আঞ্চলিক ও ব্যবসায়িক যোগাযোগের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে চট্টগ্রাম। অর্থনৈতিক শক্তিধর দেশগুলো চট্টগ্রামকে ঘিরেই বিনিয়োগ পরিকল্পনা করছে। ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা চট্টগ্রাম থেকে আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট চালুর আগ্রহ দেখাচ্ছে অনেকেই, কিন্তু দেশের অভ্যন্তরীণ রুটে চট্টগ্রাম থেকে বিমান যোগাযোগ নেই। এটা দুর্ভাগ্যজনক।চট্টগ্রাম থেকে ফ্লাইট চালুর বিষয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের জেলা ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, `অনেক আগে চট্টগ্রাম-যশোর সরাসরি ফ্লাইট ছিল। কিন্তু এখন নেই। চট্টগ্রাম থেকে এই ধরনের ফ্লাইট যদি লাভজনক হয় তাহলে সেটি কর্তৃপক্ষ বিবেচনা করবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ট্রাভেল এজেন্সি বা কারো কাছ থেকে এই ধরনের প্রস্তাব আসেনি।`রিজেন্ট এয়ারের এক কর্মকর্তা বলেছেন, আগে চট্টগ্রাম-যশোর রুটে জিএমজি এয়ারলাইনসও ফ্লাইট চালু করেছিল। কিন্তু যাত্রী না পেয়ে পরে বন্ধ হয়ে যায়। এখন এই রুট অনেক বেশি সম্ভাবনাময়। বাণিজ্যিক ও ব্যবসায়িক কাজে প্রচুর যাত্রী যাচ্ছে সেখানে, কিন্তু ঢাকা হয়ে। সেই সম্ভাবনা সপ্তাহে অন্তত দুটি ফ্লাইট চালু করে কাজে লাগানো যায়। সূত্র : কালের কণ্ঠবিএ/এমএস