ফরিদপুরের একটি হাসপাতালে ভর্তির তিন ঘণ্টা পরে মায়ের মৃত্যুর পর তিন বছরের শিশু মাইশা অসহায় হয়ে পড়ে। মৃতের ভর্তি ফরমে নারায়ণগঞ্জের স্বামীর ঠিকানা থাকলেও শিশুটির দায়িত্ব নেয়ার কাউকে খুঁজে পায়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
সোমবার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে অসহায় শিশুটির ছবিসহ খবর প্রকাশিত হওয়ার পর শিশু মাইশার পরিচয় বের হয়। সোমবার বিকেল পর্যন্ত মা ও মেয়ে ছিল অজ্ঞাত।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া বলেন, সোমবার বিকেলে শিশুটিকে সমাজসেবা অধিদফতর পরিচালিত ঢাকার আজিমপুরে অবস্থিত ছোট মনি নিবাসে পাঠানোর উদ্যোগ নিতে আমার কার্যালয়ে সভা চলছিল। ওই সময় শহরের রাজবাড়ী রাস্তার মোড়ে আজাদ অটো ওয়ার্কসপের মালিক আজাদ ১০ বছর বয়সের একটি ছেলেকে নিয়ে হাজির হন। শিশু মাইশা তার বোন বলে দাবি করে ১০ বছর বয়সের সোহাদ।
ছেলেটির কাছ থেকে তথ্য নিয়ে পরিবারের সকলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। মঙ্গলবার শিশুটির বাবা ও অন্যান্য আত্মীয়দের সঙ্গে আলোচনা করে এবং যাচাই-বাছাই শেষে শিশু মাইশার দায়িত্ব গ্রহণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলেও জানায় জেলা প্রশাসক।
শিশু মাইশার মা মৃত সৌখিন জেলার সদরের ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের চাঁনপুর গ্রামের মৃত ফারুক বিশ্বাসের মেয়ে। দুই ভাই ও চার বোনের মধ্যে সবার ছোট সখিনা ওরফে সৌখিন বিশ্বাস।
সৌখিনের স্বামী এস এম সোহাগ (৩৫) নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানার বাসিন্দা। বন্দর বাজারের কাছেই তার বাড়ি। সৌখিন-সোহাগ দম্পতির সোহাদ (১০) ও মেয়ে মাইশা (৪) দুই ছেলে মেয়ে বলে জানা যায়।
সৌখিনের চাচা ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান নূরুজ্জামান চৌধুরী পঙ্কজ বিশ্বাস বলেন, প্রায় ১২ বছর আগে সৌখিন বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করায় পরিবার তার বিয়ে মেনে নেয়নি। পরবর্তীতে স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ থাকায় বাবার বাড়িতে চলে আসে সৌখিন। কিন্তু বাড়িতে এলেও পরিবার তাকে গ্রহণ করেনি।
সৌখিনের ভাই সোহাগ বিশ্বাস জানান, আমি দীর্ঘ দিন বিদেশে ছিলাম। আমার সাথে বেশ কয়েক বছর বোনের দেখাই হয়নি। সোমবার বিকেলে ফরিদপুরের ডিসি সাহেব আমাকে মঙ্গলবার সকালে তার কার্যালয়ে ডেকেছেন। আমার যা কথা তা আমি ডিসি অফিসেই বলবো।
ফরিদপুরের কোতয়ালী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাজিমউদ্দিন আহমেদ জানান, শিশুটির মাকে সোমবার বিকেলে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে ফরিদপুর শহরের আলীপুর গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবুল কালাম আজাদ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন।
উল্লেখ্য, গত শনিবার বিকেল ৬টার দিকে দুজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি শিশুটির মাকে অসুস্থ অবস্থায় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়ে যান। এ সময় তিন বছরের শিশু মায়ের সঙ্গে ছিল। হাসপাতালে আসার মাত্র তিন ঘণ্টা পর শিশুটির মা শনিবার রাত ৯টার দিকে মারা যান।
এস এম তরুণ/আরএআর/জেআইএম