১৯৯২ সালে তিন জেলে আবিষ্কার করেন দ্বীপটি। সুন্দরবনের দুবলার চর উপকূল থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগরে জেগে ওঠা নতুন এই দ্বীপের নাম ‘বঙ্গবন্ধু দ্বীপ’।
নিজে থেকেই ওই তিন জেলের একজন মালেক ফরাজি জাতির জনকের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দ্বীপটির নামকরণ করেন তিনি। এতে সম্মতি ছিল অন্যদেরও।
নতুন আবিষ্কৃত দ্বীপটি প্রথমে এক একর আয়তনের হলেও বর্তমানে এর আয়তন বেড়েছে অনেক। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক দ্বীপটি নিয়ে গবেষণা করেন। ফলাফল, পর্যটনের অপার সম্ভাবনা খুঁজে পান গবেষকরা।
‘বঙ্গবন্ধু দ্বীপে’ পর্যটন বিকাশে বিপুল সম্ভাবনাও দেখছেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোস্টাল রিসার্চ ইউনিটের অধীনে ২৮ সদস্যের একটি গবেষক দল বঙ্গবন্ধু দ্বীপ নিয়ে গত ১১ থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ গবেষণা করেন।
শুক্রবার গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন সিনেট কক্ষে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে গবেষণার ফলাফলসহ বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।
গবেষক দলের প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম বলেন, প্রথমে দ্বীপটির আয়তন ছিল মাত্র ১ একর এবং সেটি ছিল সম্পূর্ণ কাদা ও বালুময়। এরপর দীর্ঘদিন এর কোনো ক্রমবৃদ্ধি না হলেও ২০০৪ সালের পর থেকে দ্বীপটি দ্রুত বাড়তে থাকে এবং ২০১৩ সালের দিকে এসে বর্তমান অবয়ব লাভ করে।
মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরের বঙ্গবন্ধু দ্বীপে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দ্বীপটির স্থায়িত্ব, জীববৈচিত্র্য এবং পরিবেশগত নানা দিক বিশ্লেষণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
অধ্যাপক শহীদুল জানান, বর্তমানে দ্বীপটির আয়তন ৭ দশমিক ৮৪ বর্গকিলোমিটার এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২ মিটার উচুতে অবস্থিত। দ্বীপটির চারিদিকে গড়ে উঠেছে প্রায় ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ৫০০ মিটার প্রশস্ত সি বিচ।
‘এর সঙ্গে ছোট ছোট বালিয়াড়ি ও এক দশকের কম সময়ে গড়ে ওঠা সবুজ শ্যামল বিস্তীর্ণ ম্যানগ্রোভ বন রয়েছে,’ যোগ করেন তিনি।
আশেপাশের পরিচিত পর্যটন স্থানের সঙ্গে মিলিয়ে সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে দ্বীপটিকে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসাবে তুলে ধরার পরামর্শ দেন এই গবেষক।
অধ্যাপক শহীদুল বলেন, বঙ্গবন্ধু দ্বীপের আশেপাশের আরো বেশ কয়েকটি পরিচিত ট্যুরিস্ট স্পট রয়েছে, যার মধ্যে কটকা এবং দুবলার চর অন্যতম। তবে এই স্থানগুলোর তুলনায় বঙ্গবন্ধু দ্বীপে ট্যুরিজম বিকাশের সম্ভাবনা বহুগুণ বেশি। এছাড়া নিকটবর্তী পুতনির চরেও প্রশস্ত সমুদ্র সৈকত রয়েছে।
তিনি বলেন, চারটি ধাপে গড়ে ওঠা এই দ্বীপ বর্তমানে পূর্ণতা লাভ করেছে। দ্বীপটির কোথাও চোরাবালি নেই। চারিদিকের পানি অত্যন্ত স্বচ্ছ এবং পানির গুণগত মানও আদর্শিক পর্যায়ের।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, গবেষণালব্ধ ফলাফল বাংলাদেশের সমুদ্র সম্পদ, উপকূলীয় অঞ্চলের সম্পদ ব্যবহার, সমুদ্রকেন্দ্রিক অর্থনীতি এবং পর্যটন নিয়ে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কার্যক্রমের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এটা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় ভূমিকা রাখবে।
সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা দলের অন্য সদস্য প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক নিয়ামুল নাসের, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম, স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার এবং গবেষণার আর্থিক সহযোগী অ্যাম্বিয়ান্স বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিদ্যা বরণ (শিমুল)উপস্থিত ছিলেন।
এমএইচ/এমএমএ