একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার শেখ মো. আব্দুল মজিদ ওরফে মজিদ মওলানাসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের প্রথম সাক্ষী মো. আইযুব আলী তার জবানবন্দী পেশ করেছেন। তিনি বলেন, আমি প্রত্যক্ষদর্শী রঞ্জিত জোয়াদ্দারের নিকট জানতে পারি আসামিগণ ১৫/২০ জন রাজাকার ও পাকিস্তানি আর্মি ডা. হেমচন্দ্রসহ তিনজনকে গুলি করে হত্যা করে। পরবর্তীতে আসামিরা ঐ বাড়িতে লুটপাট করে।
সাক্ষীর জবানবন্দী শেষে মঙ্গলবার (১৩ জুন) আসামি পক্ষের আইনজীবীর জেরার জন্য দিন ধার্য্য করেন ট্রাইব্যুনাল। সোমবার ট্রাইব্যুনালের সদস্য বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে দুই সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এই আদেশ দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন প্রসিকিউর মো. মুখলেসুর রহমান বাদল ও প্রসিকিউটর সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি। অপরদিকে আসামি পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট গাজী এইচ এম তামিম।
মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন- শেখ মো. আব্দুল মজিদ ওরফে মজিদ মওলানা, মো. আব্দুল খালেক তালুকদার, মো. কবির খান, আব্দুর রহমান, আব্দুস সালাম বেগ ও নুরউদ্দিন ওরফে রদ্দিন।
মামলার মোট সাতজন আসামির আহাম্মদ আলী গ্রেফতারের পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়ায় তাকে অভিযোগ থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। বাকি ছয় আসামির মধ্যে গত বছরের ১২ আগস্ট গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন আব্দুর রহমান। বাকি পাঁচজন পলাতক।
সাক্ষী তার নাম পরিচয় উল্লেখ করে জবানবন্দীতে বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি নেত্রকোনা কলেজের বিএ পরীক্ষার্থী ছিলাম। ১৯৭১ সালে ৯ ডিসেম্বর পাকিস্তানি আর্মি ও স্থানীয় রাজাকারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে পূর্বধলা থানা হানাদার মুক্ত করি। আমি থানার আইন-শৃংখলার রক্ষার দায়িত্ব নেয়ার দুই-এক দিন পর পূর্বধলা থানার কালডোয়া গ্রামের প্রত্যক্ষদর্শী রঞ্জিত জোয়াদ্দারের নিকট জানতে পারি যে, পূর্বধলা সদরের রাজপাড়ার ডা. হেম চন্দ্র বাগচিকে তার আত্মীয় হরিদাস সিংহ, বাসার চাকর মেঘুনাথকে আসামি মো. কবির খান, আসামি শেখ মো. আব্দুল মজিদ, আসামি খালেক তালুকদার ও আসামি আব্দুল রহমানসহ ১৫/২০ জন রাজাকার ও কয়েকজন পাকিস্তানি আর্মি ডা. হেম চন্দ্র বাগচির বাড়ির সামনে পাশে পুকুরের ঘাটলায় মেঘুনাথকে গুলি করে হত্যা করে।
তিনি আরও বলেন, ডা. হেমচন্দ্র বাগচির বাড়িতে ঢুকে ঐ বাড়ির ভেতরে ডা. হেমচন্দ্র বাগচি ও হরিদাস সিংহকে গুলি করে হত্যা করে। পরবর্তীতে আসামি কবির খানের নেতৃতে ঐ বাড়িতে রাজাকাররা লুটপাট করে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সহয়োগিতায় আমি আসামি মো. কবির খানের বাড়ি থেকে লুন্ঠিত মালামাল উদ্ধার করে থানা হেফাজতে রাখি।
সাক্ষী বলেন, আমার সহ মুক্তিযোদ্ধা বাড়হা গ্রামের আব্দুল কাদেরের নিকট জানতে পারি যে, একাত্তর সালের ২১ আগস্ট বেলা আনুমানিক ১১টার সময় আসামি শেখ মো. আব্দুল মজিদ ওরফে মজিদ মাওলানাসহ অন্যান্য আসামি তাকে (মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর কাদের) আটকের জন্য তার বাড়িতে যায়। তাকে না পেয়ে আসামি ও রাজাকাররা তার ভাই আব্দুল খালেক তালুকদারকে আটক ও বাড়িতে লুটপাট করে আগুন ধরিয়ে দেয়। তারা আব্দুল খালেককে জারিয়া বাজার রাজাকার ও পাকিস্তানি আর্মিদের ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করে ও তারপর তাকে কংস নদীর পাড়ে হত্যা করে মরদেহ ভাসিয়ে দেয়া হয়। পরবর্তীতে তার মরদেহ আর খুঁজে পাওয়া যায় নাই।
এফএইচ/আরএস/এমএস