দেশজুড়ে

কয়েকদিন পেট ভরে কিছু খাবা পারু নাই

‘বানের পানি মোর বাড়িডা নিয়া গেল। একটা বাঁশের খুটিও নাই। কিছুই বাঁচাবার পারি নাই। ছুয়ালাক নেহেনে কোনো মতন স্কুলের ঘরটাত আছি। গরুলা রাস্তাত বান্ধে থুইচি। কয়েকদিন পেট ভরে কিছু খাবা পারু নাই। ছুয়ালা সারাদিন কান্দেছে। হামাক এগনা সাহায্য কর না গে। পানি কমুছে কিন্তু বাড়িডাই তো নাই, কুন্ডে থাকিমো।’ কষ্টের কথাগুলো এভাবেই বলছিলেন ঠাকুরগাঁও বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার আমাজান খোঁর ইউনিয়নের সুফিয়া খাতুন।

ঠাকুরগাঁওয়ে বন্যার পর এমন হাজারো মানুষের দুর্ভোগ ও কষ্টের আহাজারিতে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। আকস্মিক বন্যার পর ঠাকুরগাঁওয়ে পানি কমতে শুরু করেছে। তবে বন্যার পানিতে বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত ও ভেসে যাওয়ার কারণে এখনও ঘরে ফিরতে পারছে না বানভাসী মানুষেরা। তারা খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট এবং টয়লেটের বিড়ম্বনাসহ নানা সমস্যা নিয়ে গ্রাম ও শহরের বিভিন্ন অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন।

এদিকে কিছু বানভাসী ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি ঠিক করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কিন্তু পূর্ণবাসনের জন্য নগদ অর্থের সংকটে বিপাকে পড়েছেন এসব অসহায় মানুষ। অনেকেই অর্থাভাবে বসতবাড়ি ঠিক করতে না পেরে গাছতলায় বা আশ্রয়কেন্দ্রে দিন পার করছেন।

সরেজমিনে বিভিন্ন বন্যা কবলিত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অনেক এলাকায় আস্তে আস্তে পানি নামতে শুরু করায় বের হয়ে এসেছে ভাঙা ঘরবাড়ির ধ্বংসস্তুপ ও ভেঙে যাওয়া রাস্তাঘাট। গবাদিপশুর খাদ্যেরও চরম সংকট দেখা দিয়েছে। বন্যায় ভেসে যাওয়া বাড়ি ঘরে মানুষ ফিরতেও পারছে না।

ত্রাণ ও পূনর্বাসন অফিস সূত্রে জানা গেছে, সরকারি তথ্য অনুযায়ী মাত্র কয়েক দিনের বন্যায় জেলার ৪০টি ইউনিয়নের ২ শতাধিক গ্রাম ও ২০ হাজার পরিবারের দেড় লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অপরদিকে নদীভাঙনে আড়াই হাজার বসতভিটা সম্পূর্ণ ও ২০ হাজার আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যা পরবর্তী অসহায় মানুষের ত্রাণ অব্যাহত রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি ঘর ও পূনর্বাসনের জন্য ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর জন্য তালিকা প্রস্তুত চলছে।

ক্ষতিগ্রস্ত সাদেকুল, সিরাজুল, মাহেরুনসহ অনেক অসহায় মানুষ জানিয়েছেন, এবারের বন্যায় সব ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। নিঃস্ব হয়ে গেছে অনেকেই। আবার অনেকেই টাকার অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ঘর-বাড়ি ঠিক করতে পারছেন না। ঠিক মত কয়েকদিন খেতেও পারেননি। সরকারের সহযোগিতা ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত ঘর-বাড়ি তাদের পক্ষে ঠিক করা কখনই সম্ভব না।

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল বলেন, আমরা আশা করছি আমাদের কাছে যে পরিমাণ ত্রাণ সামগ্রী আছে আমরা সেগুলো দিয়ে দুর্যোগ পরবর্তী সমস্যা মোকাবেলা করতে সক্ষম হব। বর্তমানে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ ঘর-বাড়ি নিয়ে খুব বিপাকে রয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্তের পূনর্বাসনের জন্য সরকারি ভাবে ব্যবস্থা করা হবে।

রবিউল এহসান রিপন/এফএ/পিআর