দেশজুড়ে

বারোমারী ধর্মপল্লীতে খ্রিষ্টভক্তদের তীর্থ উৎসব

শেরপুরে নালিতাবাড়ী উপজেলার বারোমারী সাধু লিওর ধর্মপল্লীতে খ্রিষ্টভক্তদের দু’দিনব্যাপী ফাতেমা রানীর তীর্থোৎসব উদযাপিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে তীর্থস্থানের মা মারিয়ার মূর্তির পাদদেশে স্থাপিত প্রার্থনা মঞ্চে পাপ স্বীকার এবং পবিত্র খ্রিষ্টযাগের (বিশেষ প্রার্থনা) মধ্য দিয়ে শুরু হয় দু’দিনব্যাপী তীর্থোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। শুক্রবার সকাল ৮টায় জীবন্ত ক্রুশের পথ পরিভ্রমণ ও সকাল ১০টায় মহাখ্রিষ্টযাগের (সমাপনী প্রার্থনা) মাধ্যমে এ তীর্থোৎসবের সমাপ্তি ঘটে। সমাপনী খ্রিষ্টযাগে পৌরহিত্য করেন ময়মনসিংহ খ্রিষ্টধর্ম প্রদেশের বিশপ পনেন পৌল কুবি সিএসসি।

এর আগে তীর্থ উৎসবের উদ্বোধন ও খ্রিষ্টযাগে পৌরহিত্য করেন বাংলাদেশের প্রধান খ্রিষ্টধর্মগুরু কার্ডিনাল পেট্রিক ডি রোজারিও সিএসসি। ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের এ তীর্থোৎসবকে ঘিরে ভারতের মেঘালয় সীমান্তবর্তী পাহাড়ি জনপদের সর্বত্র বইছে উৎসবের আমেজ।

তীর্থ উদযাপন কমিটির সমন্বয়কারী বারোমারি ধর্মপল্লীর পালপুরোহিত রেভারেন্ড ফাদার মনিন্দ্র এম. চিরান জানান, ‘সাথের সাথী ব্যাথার ব্যাথি ফাতেমা রাণী মা মারিয়া’ এই মূলসুরের উপর ভিত্তি করে এবারের তীর্থোৎসব পালিত হচ্ছে। বিকেলে পাপ স্বীকারের মধ্য দিয়ে তীর্থোৎসব শুরু হয়। রাত ৮টায় অনুষ্ঠিত হয় আলোর মিছিল। এই মিছিলে হাজার হাজার খ্রিষ্টভক্ত মোমবাতি জ্বালিয়ে ধর্মপল্লীর প্রায় আড়াই কিলোমিটার উঁচু-নিচু পাহাড়ি টিলাপথ অতিক্রম করে ৪৮ ফুট উঁচু ‘মা মারিয়া’র প্রতিকৃতির করকমলে ভক্তিশ্রদ্ধা জানান।

তীর্থ উদযাপন কমিটি সূত্রে জানা যায়, এবার বারোমারি ধর্মপল্লী ফাতেমা রানীর তীর্থস্থানে ২০তম তীর্থ উৎসব পালিত হয়েছে। প্রতি বছরই এখানে তীর্থযাত্রীর সংখ্যা বাড়ছে। এবার দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক খ্রিষ্টভক্তের আগমন ঘটেছে বলে আশা করা হচ্ছে। এসেছেন অনেক বিদেশি খৃষ্টভক্তও।

বারোমারী ধর্মপল্লীর ভাইস চেয়ারম্যান নালিতাবাড়ী ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান লুইস নেংমিনজা বলেন, তীর্থেৎসবে খ্রিষ্টভক্তরা নিজেদের পাপমোচনে মোমবাতি জ্বালিয়ে আলোর মিছিলে অংশগ্রহণ করে। নির্মল হৃদয়ের অধিকারীনি, ঈশ্বর জননী, খ্রিষ্টভক্তের রাণী, স্নেহময়ী মাতা ফাতেমা রাণীর প্রতি ভক্তি-শ্রদ্বা জানায় ও তার অকৃপন সাহায্য প্রার্থনা করে থাকে।

তিনি জানান, ১৯৪২ সালে প্রায় ৪২ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় বারোমারী সাধু লিওর ধর্মপল্লী। ময়মনসিংহ ধর্ম প্রদেশের প্রয়াত বিশপ ফ্রান্সিস এ গমেজ ১৯৯৮ সালে এ ধর্মপল্লীকে ফাতেমা রাণীর তীর্থস্থান হিসেবে ঘোষণা করেন। এখানে পর্তুগালের ফাতেমা নগরীর আদলে ও অনুকরণে পাহাড় ঘেরা মনোরম পরিবেশে গড়ে তোলা হয় ‘ফাতেমা রানীর তীর্থস্থান’। সেই থেকে খ্রিষ্টমন্ডলীর সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রতিবছর ভিন্ন ভিন্ন মূলসুরের উপর ভিত্তি করে এখানে অক্টোবর মাসের শেষ বৃহস্পতি ও শুক্রবার দু’দিনব্যাপী বার্ষিক তীর্থ উৎসব পালিত হয়ে আসছে।

হাকিম বাবুল/এফএ/এমএস