দেশজুড়ে

রোহিঙ্গাদের মুখে হাসি ফোটাতে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরলেন ৬ ব্যবসায়ী

মানবতার টানে কক্সবাজারে উখিয়ায় আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ত্রাণ দিতে ছুটে গিয়েছিলেন সিলেটের বিয়ানীবাজারের সাত বস্ত্র ব্যবসায়ী। সেখানকার মানুষগুলোর মুখে একটু হাসি ফোটাতে নগদ টাকা ও খাবারের পাশপাশি এক হাজার কম্বল নিয়ে যান তারা। দুই দিন সেখানে অবস্থান করে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন।

সোমবার সকালে মাইক্রোবাস যোগে সিলেটের বিয়ানীবাজারে ফিরছিলেন। মুষলধারে বৃষ্টির মধ্যে মাইক্রোবাসটি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জের সীমান্তবর্তী এলাকা কান্দাইলে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই চারজন নিহত হন। হাসপাতালে নেয়ার পর মারা যান আরও দুইজন।

এর কিছুক্ষন পর একই সড়কে জেলার শিবপুর উপজেলা কারারচর নামক স্থানে যাত্রীবাহী বাস ও লেগুনার মধ্যে সংঘর্ষে আরও তিনজন নিহত হন। অলাদা দুটি সড়ক দুর্ঘটনায় ৯ জন নিহত হন। আহত হন কমপক্ষে ১০ জন। সোমবার সকাল ৮টায় ও সকাল ১০টায় পৃথক দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- বিয়ানীবাজারের মাথিউরা গ্রামের ব্যবসায়ী আবদুল করিম, একই উপজেলার ছোট দেশের খায়রুল বাশার খান , শ্রীধরা গ্রামের জুবের আহমদ, কাকরদিয়া গ্রামের ইকবাল হোসেন, কসবার বাবুল আহমদ ও মাইক্রোবাস চালক বাবুল হোসেন। মাইক্রোবাস চালকের বাড়ি কোথায় তা জানা যায়নি। গুরুত্বর আহত হয়েছেন মাইক্রোবাসের দুই যাত্রী। তারা হলেন- হাফিজ উদ্দিন ও দেলোয়ার হোসেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

শিবপুরের কারারচরে দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন- শিবপুর উপজেলা কারারচরের আরমান মিয়া (৫০) সৈয়দনগর গ্রামের মাসুম মিল্লাহ ও সুজন মিয়া (২৫)।

দুর্ঘটনায় নিহত খায়রুল বাশার খানের চাচাতো ভাই আশ্রাফুল বাশার খান বলেন, রোহিঙ্গাদের ত্রাণ দিতে বৃহস্পতিবার রাতে আমার ভাইসহ ৭ জন ব্যবসায়ী সিলেট থেকে কক্সবাজারের উখিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। সেখানে শুক্রবার ও শনিবার অবস্থান করে রোহিঙ্গাদের মাঝে নগদ টাকা, খাবার ও কম্বল বিতরণ করেন। এরপর রোববার কক্সবাজার ঘুরাফেরা করে ওইদিন রাতেই মাইক্রোবাস যোগে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। সোমবার দুপুরে খবর পাই তারা নরসিংদীতে দুর্ঘটনায় মারা গেছে।

ঘটনার প্রতক্ষ্যদর্শী আনিসুল বলেন, সকালে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল। হঠাৎ বিকট একটি শব্দ। দৌড়ে রাস্তার কাছে গিয়ে দেখি মাইক্রোবাসটি দুমড়ে-মুচড়ে রাস্তার এক পাশে পড়ে আছে। সড়কের ওপর পড়ে আছে একজনের মরদেহ। পরে পুলিশকে খবর দেয়া হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, দুর্ঘটনায় মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সড়কের দুই পাশে ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্য ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে। পরে দুর্ঘটনাস্থল থেকে দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি সরিয়ে নিলে দেড় ঘণ্টা পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। এদিকে বিকেলে সদর হাসপাতালের মর্গ থেকে নিহতদের মরদেহ নিয়ে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় স্বজনরা।

এ বিষয়ে ইটাখোলা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইন্সপেক্টর হাফিজুর রহমান বলেন, নিহতদের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং দুর্ঘটনা কবলিত গাড়ি দুটি উদ্ধার করা হয়েছে।

সঞ্জিত সাহা/আরএআর/আরআইপি