দেশজুড়ে

কুড়িগ্রামের ছিটমহলগুলোতে চলছে গণনার কাজ

বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ জরিপ দল দুই রাষ্ট্রের মধ্যকার ১৬২টি ছিটমহল সফর ও ছিটবাসীদের মতামত সংগ্রহে যৌথভাবে কাজ শুরু করেছে। গত সোমবার থেকে শুরু হয়েছে এই জরিপ কার্যক্রম।জেলার ফুলবাড়ি ও ভুরুঙ্গামারী উপজেলায় ভারতীয় ১২টি ছিটমহল রয়েছে। এই ছিটমহলগুলোতে গনণার প্রথম দিনেই ভারতের নাগরিক হতে ৪ জন আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। জরিপ কাজে ভারতের ১৫ সদস্য ও কুড়িগ্রামের ৭ সদস্যের একটি জরিপ দল অবস্থান করছেন।ছিটমহল আন্দোলন কমিটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা জাগো নিউজকে জানান, বাংলাদেশ এবং ভারতের বিভিন্ন ছিটমহলে যে হেড কাউন্টিং হবে তাতে ২০১১ সালের জরিপ অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে। ছিটমহলগুলোতে উভয় দেশের ১৫০ জন গনণাকারী এবং সুপারভাইজার কাজ করছেন। শুধুমাত্র যারা ২০১১ সালের পর ছিটমহলে জন্মগ্রহণ এবং যারা বিয়ে করেছেন ওইসব বধূদের নামও অন্তর্ভুক্ত করা যাবে। কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার ২টি ছিটমহলের ভূখণ্ডের ভেতরে ১৫০নং ভারতীয় ছিটমহল দাশিয়ার ছড়ার আয়তন ১৯৪৩ একর। ছিটমহলটিতে ৭১৫৮ জন মানুষের বাস। আর ভুরুঙ্গামারীতে রয়েছে ১০টি ছিটমহল। যার আয়তন ৩শ একর। এখানে ১১৪৯ জন মানুষের বসবাস। ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী এসব ছিটমহলে বর্তমানে বসবাস করছনে ৮৩০৭ জন মানুষ। অপরদিকে ভারতের অভ্যন্তরে কুড়িগ্রামের ১৮টি ছিটমহলে প্রায় ৩ হাজার একর জমিতে সাড়ে ৬ হাজার লোকের বসবাস রয়েছে।ফুলবাড়ি এবং ভুরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন ও এজেডএম এরশাদ আহসান হাবীব জাগো নিউজকে জানান, সোমবার হেড কাউন্টিংয়ের প্রথম দিনেই ফুলবাড়িতে ৭টি বুথে ১৫ জন করে গণনার কাজ চলছে। এরমধ্যে বাংলাদেশের ৭ জন এবং ভারতের ৮ জন জরিপকারী রয়েছে। প্রথমদিনেই ৬৭৫ জনের গণনা সম্পন্ন করা হয়। আর ভুরুঙ্গামারীতে ৩টি বুথে বাংলাদেশের ৩ জন এবং ভারতের ৩ জন জরিপকারী গণনার কাজে নিয়োজিত আছেন। সাড়ে ৩শ জনের গণনা করা হয় গতকাল বিকেল পর্যন্ত। এরমধ্যে নতুন শিশু ৩১টি, মৃত্যুবরণ করেছেন ৮ জন এবং একই পরিবারের ৪ জন ভারতে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।ভারতীয় জরিপ দলের ইন্যুমেরেটর বিজয় কৃষ্ণ চক্রবর্তী জাগো নিউজকে বলেন, ভারতীয় এই ছিটমহলগুলোতে ভারতের গণনাকারী এবং সুপারভাইজাররা ছিটমহলবাসীদের কাছে জানতে চাইবেন তারা ভারত অথবা বাংলাদেশের নাগরিক হতে চান কী না। তাদের মধ্যে শুধুমাত্র যারা ভারতের নাগরিক হতে চান তাদের ছবি তোলাসহ ফরমের মধ্যে নাম অন্তর্ভূক্ত করা হবে। তাদের সুযোগ থাকবে হেডকাউন্টিং শেষেও দেশের নাগরিকত্ব পরিবর্তনের সুযোগ। ১৬ জুলাই এর মধ্যে গণনা কাজ শেষ না হলে তা আরো বর্ধিত করার সুযোগ খুবই কম। আমাদের ১৬ জুলাইতে এই কাজ শেষ করতে হবে।জেলা প্রশাসক খাঁন মোহাম্মদ নুরুল আমিন জাগো নিউজকে জানান, সোমবার থেকে শুরু হওয়া ছিটমহলে হেড কাউন্টিং এর কাজ চলবে ১৬ জুলাই পর্যন্ত। কুড়িগ্রামের ছিটমহলগুলোতে ১৫ জনের ভারতীয় জরিপ দল কাজ করছেন। এই জরিপ কাজ প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত চলবে। জরিপ কাজ সুষ্ঠুভাবে করার জন্য ভারতীয় গণনাকারী এবং সুপারভাইজারদের নিয়ে এক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তিনি আরো জানান, কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ছিটমহলবাসীর জমি সংক্রান্ত জরিপ, নিরাপত্তা বিষয়সহ বিভিন্ন বিষয়ক কাজের জন্য একটি কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। এখানে ছিটমহলের যেকোন বিষয়ে মতামত বা অভিযোগ করা যাবে। এছাড়াও দু’রাষ্ট্রের সরকারের এই চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছি।আগামী ৩১ জুলাই মধ্যরাত হতে দু`দেশের ভেতরে থাকা ছিটমহল হস্তান্তর করা হবে। ছিটমহল হস্তান্তর প্রক্রিয়া জটিলতা এড়াতেই ৬ জুলাই থেকে ১৬ জুলাই পর্যন্ত প্রতিটি ছিটমহলের খানা জরিপ করা হবে। এই জরিপ থেকে ছিটমহলের প্রকৃত জনসংখ্যা, ঘরবাড়ি, অর্থসম্পদ এবং আর্থসামাজিক অবস্থা জানা যাবে। এছাড়াও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় ২২ জুন হতে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে ছিটমহলে কোনো প্রকার জমি বিক্রি প্রদানে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এসময়ের পর ১ আগষ্ট থেকে ৩০ নভেম্বর  পর্যন্ত স্ব-স্ব স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতিক্রমে জমি বিক্রি করা যাবে।নাজমুল হাসান/এমজেড/পিআর