স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রী হিসেবে বুধবার শেষবারের মতো কিশোরগঞ্জ থেকে ঘুরে এসেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। গত মঙ্গলবার তাকে নিয়ে সারা দেশে আলোচনার ঝড় শুরু হয়। দফতর আছে, নাকি নেই- এ নিয়ে চলে গুঞ্জন-গুজব আর সরস আলোচনা। আর আজ বৃহস্পতিবার ঘটলো চূড়ান্ত ঘটনা।পদ হারালেন সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী ও নীতি নির্ধারক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। বৃহস্পতিবার বিকেলে টেলিভিশনের ব্রেকিং নিউজ আসা শুরু হতেই তার নিজের জেলা কিশোরগঞ্জে আলোচনার মূল বিষয় হয়ে উঠে দেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের বড় ছেলে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে এলজিআরডি মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দেয়ার বিষয়টি।সৈয়দ আশরাফ এলজিআরডি মন্ত্রী থাকার সুবাদে কিশোরগঞ্জে ব্যাপক উন্নয়ন কাজ চলছে। মেডিকের কলেজ, মৎস্য ইনস্টিটিউট, শত কোটি টাকার নরসুন্দা লেকসিটি প্রকল্পসহ অনেক কাজ চলমান। দফতর না থাকায় এসব উন্নয়ন কাজ বাধাগ্রস্ত হবে বলেও আশংকা সাধারণ মানুষের।আবার অনেকের মতে তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পরও তার নিজের জেলায় জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হচ্ছে না দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে। এর দায় এড়াতে পারবেন না তিনি।তবে সরকারের এমন সিদ্ধান্ত কিশোরগঞ্জবাসীর জন্য বড় দু:সংবাদ। অনেকেই বলছেন, এতে করে জেলার সার্বিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে মারাত্মক প্রভাব পড়বে। দলের নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে দেখা গেছে নানা প্রতিক্রিয়া। হঠাৎ করে এমন সিদ্ধান্তকে কিছুতেই মানতে পারছেন না সাধারণ মানুষ। কেউ কেউ বলছেন, তার মতো একজন দক্ষ, যোগ্য ব্যক্তিকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পিছনে বড় কোন কারণ আছে।আবার অনেকে বলছেন, তিনি এলাকায় ঠিকমত আসেন না। মন্ত্রী সবার বৈঠকে অনুপস্থিত থাকেন। সংসদে যান না নিয়মিত। তাই তাকে এত বড় একটি দায়িত্ব দেয়া ঠিক হয়নি। তাকে সরিয়ে দেয়াই সঠিক কাজ হয়েছে।কিশোরগঞ্জ শহরের কালীবাড়ি মার্কেটের পান দোকানি খোকন চন্দ্র সাহা টেলিভিশনে এ খবর দেখে তাৎক্ষনিক মন্তব্য করে বলেন, শেখ হাসিনা উচিত কাজটিই করেছেন। শুনেছি তিনি কোন কাজ করেন না। সারাদিন ঘুমিয়ে থাকেন। তাই এ সিদ্ধান্ত সঠিক। কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম বলেন, সৈয়দ আশরাফের মতো একজন প্রভাবশালী মন্ত্রীর দফতর কেড়ে নেয়া হয়েছে। এটি সরকারের জন্য একটি অশনি সংকেত।তিনি বলেন, সরকারের অস্থিরতার বহি:প্রকাশ হিসেবে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে মন্ত্রণালয় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। সরকারের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের খেসারত হিসেবে এমনটি হয়েছে। তবে এতে কিশোরগঞ্জবাসীর জন্য ক্ষতি হয়েছে বলে মনে করেন তিনি। সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়ে অনেকটাই নিরব ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও এর বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন। তাদের মধ্যে যেন সুনশান নিরবতা। অনেকেই সতর্ক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অ্যাড. শাহ আজিজুল হক এই সংবাদকে দু:খজনক উল্লেখ করে বলেন, সরকারের হাইকমান্ড থেকে এমন সিদ্ধান্তের বিষয়ে তেমন কোন মন্তব্য নেই। তবে যেহেতু আশরাফুল ইসলাম দলের সাধারণ সম্পাদক, তাই তিনিও নীতি নির্ধারকদের একজন। প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয়ই সিদ্ধান্ত নিয়েই এমন কাজটি করেছেন।জেলা গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি অ্যাডভোকেট ভ্রপেন্দ্র চন্দ্র ভৌমিক দোলন বলেছেন, হয়তো আরও গুরুত্বপূর্ণ কোন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব তাকে দিতে পারেন প্রধানমন্ত্রী। তবে জেলার উন্নয়নের ধারা কিছুটা ব্যহত হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।সরকারের এমন সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন জেলা কৃষক লীগের সভাপতি আহমেদ উল্লাহ। তিনি বলেন, তার মতো এমন একজন সৎ ও মেধাবী মানুষকে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় থেকে অব্যাহতি দেওয়া কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এটা কিশোরগঞ্জবাসী তথা সারাদেশের মানুষের জন্য দু:খ্যজনক।সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের অব্যাহতির বিষয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন কিশোরাগঞ্জ বড় বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি কামরুল হাসান। তিনি বলেন, সরকারের এই সিদ্ধান্তে কিশোরগঞ্জবাসীর অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। উন্নয়নের ধারায় এর প্রভাব যেন না পড়ে, তার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান তিনি।এ বিষয়ে জেলা পরিষদের প্রশাসক ও আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাড. জিল্লুর রহমান বলেছেন, সরকারের সিদ্ধান্ত যখন যেটা হয় সেটাই আমাদের মেনে নেওয়া উচিত। হয়তো আরও ভালো কিছু অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. এম এ আফজলের সাথে মোবাইল ফোনে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।নূর মোহাম্মদ/এআরএস/আরআই