দেশজুড়ে

যাদের ক্ষমতা আছে তারাই মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে

এ যেন দিনদুপুরে ডাকাতি। প্রকাশ্যে কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মেহেরপুরের ভৈরব নদীর দুই পাড়ের মাটি। অথচ এ নদীটি বাঁচাতে পুনঃখনন করা হয়।

পরিবেশবিদদের দাবি, পাড়ের মাটি কাটা বন্ধ না হলে আবারও ভরাট হয়ে যাবে নদীটি। নৌ-বাহিনীর অধীনে ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেডের তত্ত্বাবধায়নে ২৯ কি.মি. খাল খনন করা হয়।

কিন্তু এখনও বাঁধানো হয়নি নদীর দুই পাড়। প্রতিষ্ঠানটির দাবি, টেন্ডারে মাটি বাঁধানোর কোনো নির্দেশনা নেই। আর এলাকাবাসীর দাবি, তাদের জমিতে মাটি থাকায় ফসল আবাদ করতে পারেছে না।

নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লি. নৌ-বাহিনীর অধীনে ৭১ কোটি ৬৫ লাখ ৫১ হাজার ২১৬ টাকা ব্যয়ে শেষ হয় ২৯ কিলোমিটার নদী খনন। নদীর দুই পাড় হবে ৬২ থেকে ৭০ মিটার চওড়া, গভীরতা হবে ৪ মিটার, তলদেশ হবে ৫০ মিটার।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ মামুন জানান, গত সোমবার রাধাক্রান্তপুর গ্রামে কিছু দুষ্কৃতকারী মাটি কাটছে এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হয়।

এ সময় দুষ্কৃতকারীরা পালিয়ে গেলেও আটক করা হয় জমির মালিককে। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে জমির মালিক আনোয়ার হোসেনকে বালু মহল ও মাটি ব্যাবস্থাপনা আইন ২০১০ এর ৪ ধারায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক মাসের কারাদণ্ড এবং মাটি কাটার যন্ত্র জব্দ করা হয়।

মেহেরপুর সদর উপজেলার রাধাক্রান্তপুর গ্রামের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললে তারা এ বিষয়টি অস্বীকার করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানান, রিপন নামের এক দালাল এখান থেকে মাটি কিনে নিয়ে যাচ্ছে। তবে আরেকজন জানালেন, যার ক্ষমতা আছে তারাই মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে।

মেহেরপুর গাংনী ডিগ্রি কলেজের সাবেক ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষক জানালেন, নদীর পাড় না থাকলে ভূমি ক্ষয় হবে। ভূমি ক্ষয় একটি মারাত্মক জিনিস। যা একটি নদীকে পুনরায় ভরাট করে ফেলবে। এভাবে দুই পাড়ের মাটি কাটা হলে আবারও ভরাট হয়ে যাবে নদী। বৈচিত্র্য হারাবে ভৈরব নদী। হুমকির মুখে পড়বে পরিবেশ।

মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন বলেন, ভৈরব নদী খনন করা প্রতিষ্ঠানটির দাবি ২৯ কি. মি. খনন শেষ। এখন নদীর পাড়ের মাটির বিষয়ে টেন্ডারে কোনো নির্দেশনা ছিল না। নদীর গতিধারা বজায় রাখতে দখল ও দুই পাড়ের মাটি কাটা ঠেকাতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। যাতে কেউ নদী দখল করলে জনগণ প্রতিবাদ করে।

আসিফ ইকবাল/এএম/জেআইএম