দেশজুড়ে

শেরপুরে লিগ্যাল এইডের সেবা নিয়েছেন ৬০০ বিচারপ্রার্থী

শেরপুরে দরিদ্র বিচারপ্রার্থী মানুষের ন্যায়বিচার পাওয়ার পথ সুগম করছে লিগ্যাল এইড সেবা। চলতি বছরে নভেম্বর পর্যন্ত গত এক বছরে জেলা লিগ্যাল এইড অফিস থেকে আইনী সেবা গ্রহণ করেছেন ৬০০ দরিদ্র বিচারপ্রার্থী। এর মধ্যে ২৫০টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। এ ছাড়া লিগ্যাল এইডের আইনী পরামর্শ গ্রহণ করেছেন ৭শ’ জন। ৩৮টি মামলায় বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে (এডিআর) ৩৪ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ আদায় করা হয়েছে।শেরপুর জেলা লিগ্যাল এইড কমিটি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার ও শেরপুর সদরের সিনিয়র সহকারী জজ মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম বলেন, অসহায় ও অসচ্ছল বিচারপ্রার্থীদের বিনা খরচে আইনী পরামর্শ, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ও মামলায় আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থা। যা ‘লিগ্যাল এইড’ নামে পরিচিত। শেরপুর জেলা লিগ্যাল এইড কমিটি গরীব-দুঃখী মানুষের জন্য নিরলস ও নিঃস্বর্থভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, এখন ঘরে বসেই বিনাখরচে শুধুমাত্র একটি ফোনকলের মাধ্যমেও (হটলাইন নম্বর ০১৭০০৭৮৪২৮৬ ) স্থানীয়ভাবে আইনী সেবা প্রদান করা হচ্ছে। সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকারকে সামনে রেখে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আইনি সহায়তা দিতে সংস্থটি ‘বিডি লিগ্যাল এইড’ নামে একটি অ্যাপও চালু করা হয়েছে।

জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থার বিধান মোতাবেক যারা দরিদ্র ও অসহায় এবং নিজ খরচে মামলা পরিচালনা করতে পারেন না তাদের জন্য সরকারি খরচে আইনগত সহায়তা প্রদান করা হয়। যাদের বার্ষিক গড় আয় ৫০ হাজার টাকার বেশি নয়, তারাই অসচ্ছল বা আর্থিকভাবে অসচ্ছল ব্যক্তি বলে গণ্য হবে। তাছাড়া বয়স্ক ভাতা, বিধবাভাতা, ভিজিডি কার্ডধারি, উপার্জনে অক্ষম, সহায়-সম্বলহীন প্রতিবন্ধী, আদর্শগ্রামে বসবাসকারী, নানাবিধ আর্থ-সামাজিক ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ততার কারণে নিজ অধিকার প্রতিষ্ঠায় মামলা পরিচালনায় অসমর্থ ব্যক্তি লিগ্যাল এইড সেবা নিতে পারেন।

বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা ও দুঃস্থ্য মহিলা, দুর্বৃত্ত দ্বারা এসিডদগ্ধ কিংবা পাচারের ফলে ক্ষতিগ্রস্থনারী-শিশু এবং আইনগত সহায়তা আইন-২০০০ উদ্দেশ্য পূরণের লক্ষ্যে সংস্থা কর্তৃক সময় সময় চিহ্নিত অসচ্ছল ব্যক্তিরা আইনগত সহায়তা পাওয়ার অধিকারী। এদিকে, ‘উন্নয়নের অগ্রযাত্রায়, সরকারি আইনী সেবার সাফল্য-প্রচার ও প্রসারে প্রিন্ট ও ইলেকক্ট্রনিক মিডিয়ার ভূমিকা’ বিষয়ক এক কর্মশালার আয়োজন করে শেরপুরে জেলা লিগ্যাল এইড অফিস। মঙ্গলবার বিকেল ৪টা থেকে রাত সাড়ে ৭টা পর্যন্ত জেলা জজ কার্যালয়ের অনুষ্ঠিত এ কর্মশালা অনুষ্য়ঠিত হয়ে। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান কে এম শহীদ আহমেদ।

কর্মশালায় জেলার লিগ্যাল এইড সেবা বিষয়ক আইনী সহায়তার চিত্র তুলে ধরার পাশপাশি স্থানীয়ভাবে কিভাবে লিগ্যাল এইড সেবার প্রচার-প্রসার বাড়ানো এবং আরও কার্যকরভাবে জনগণের দোড়গোড়ায় পৌঁছানো যায় সে বিষয়ে নানা পরামর্শ ও সুপারিশ গ্রহণ করা হয়। কর্মশালায় স্থানীয় ৩০ জন সাংবাদিক ছাড়াও জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়ন লিগ্যাল কমিটির সভাপতি, সদস্যবৃন্দ, জেলা জজশীপের বিচারকবৃন্দ এবং আইনজীবী নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।

জেলার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সুদীপ্ত দাস-এর সঞ্চালনায় কর্মশালায় বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ হাজি মোহাম্মদ মুসলেহ উদ্দিন, অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সুলতান মাহমুদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বক্তব্য রাখেন।

এছাড়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতের স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট গোলাম কিবরিয়া বুলু, প্রেসক্লাব সভাপতি মো. শরিফুর রহমান, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম আধার, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খন্দকার রকীব, জেলা তথ্য অফিসার তাহলিমা জান্নাত, ঝিনাইগাতী উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আমিনুল ইসলাম বাদশা, প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক মেরাজ উদ্দিন, সাংবাদিক হাকিম বাবুল প্রমুখ এ সময় মতামত তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন।

হাকিম বাবুল/আরএস/পিআর