ধর্ম

কথা কাজ ও ভাব-বিনিময়ে ইসলামের নির্দেশনা

ইংরেজি বছরের প্রথম দিন আজ। ১ জানুয়ারি ২০১৯। ইংরেজি নতুন বছরের শুরুতে সবাইকে (মারহাবান বিকুম) শুভেচ্ছা। নতুন বছরের শুরুতে সব মুসলমানের ব্যক্তিগত ও পারস্পরিক কথা এবং ভাব বিনিময় এমনভাবে হওয়া উচিত, যে কথা ও ভাব বিনিময় প্রতিটি ব্যক্তির জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে।

কথা, কাজ ও ভাব বিনিময়ের ক্ষেত্রে যে পরিভাষাগুলো কখনো ভুলা যাবে না। যেগুলোর ব্যবহারে রয়েছে অনেক কল্যাণ ও উপকার। মানুষের প্রতিনিয়ত ব্যবহারে এমনই কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিভাষা তুলে ধরা হলো। আর তাহলো-

‘তাউজ ও তাসমিয়া’ বলাশয়তান ক্ষতি ও সব ধরণের অকল্যাণ থেকে আত্মরক্ষায় যে কোনো কাজ করার শুরুতে তাউজ পড়া-أَعُوْذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِউচ্চারণ : ‘আউজুবিল্লাহি মিনাশ শায়ত্বানির রাজিম’অর্থ : আমি অভিশপ্ত শয়তানের আক্রমণ থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি।বিশেষ করে আল্লাহ তাআলার নির্দেশ হলো কুরআন শরিফ পড়ার আগে তাউজ তথা আউজুবিল্লাহি মিনাশ শায়ত্বানির রাজিম’ পড়া।

অতঃপর যে কোনো কাজের শুরুতে বরকতের উদ্দেশ্যে তাসমিয়া পড়া-بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيْمِউচ্চারণ : ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’অর্থ : পরম করুণাময় দয়াময় আল্লাহর নামে (শুরু করছি)।

কোনো ব্যক্তি যখন কাজের শুরুতে আউজুবিল্লাহ বলার পর বিসমিল্লাহ পড়ে তার সে কাজে শয়তান কোনো ধরনের আক্রমণ করতে পারে না। বরং ভয়ে পালিয়ে যায়। আল্লাহ তাআলা ওই ব্যক্তিকে শয়তানের যাবতীয় আক্রমণ থেকে হেফাজত করেন।

‘আলহামদুল্লিাহ’ বলাজীবনের উন্নতি-অবনতি যা-ই হোক সর্বাবস্থায় আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ে তার প্রশংসার্থে বলা-اَلْحَمْدُ للهِ উচ্চারণ : ‘আলহামদুলিল্লাহ’অর্থ : ‘সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য।’

আল্লাহ তাআলা নিজেই বান্দাকে তার প্রশংসার জন্য কুরআন মাজিদে এ বাক্য শিক্ষা দিয়েছেন। যাতে বান্দা সুখে-দুঃখে সর্বাবস্থায় তার শেখানো ভাষায় প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে পারে।

আরও পড়ুন > হাদিসের নির্দেশনা মিলে গেল গবেষণায়

‘ইনশাআল্লাহ’ বলাভবিষ্যতে কোনো কাজ করবো, খাবো, ঘুমাবো, ঘুম থেকে ওঠে কোনো কিছু করবো ইত্যাদি কাজের পরিকল্পনা বা আশাবাদ ব্যক্ত করার সঙ্গে সঙ্গে বলা-إنْ شَاءَ الله উচ্চারণ : ‘ইনশাআল্লাহ’অর্থ : আল্লাহর ইচ্ছায় (এ কাজগুলো করবো) আল্লাহ তাআলা বলেন-‘ইন্‌শা আল্লাহ না বলে কখনোই তুমি কোনো বিষয়ে বলো না, আমি এটি আগামীকাল করবো।’ (সুরা কাহফ : আয়াত ২৩-২৪)

‘ঝাযাকাল্লাহু খাইরান’ বলামানুষ পরস্পরের কোনো উপকার কিংবা সহযোগিতামূলক কোনো কাজ করলে সাধারণত যে কথাটি বেশি বলে থাকে তাহলো- থ্যাংকস (Thanks) বা ধন্যবাদ। এমনটি না বলে যে কোনো উপকার বা সহযোগিতায় প্রিয়নবির শেখানো ভাষায় বলা- جَزَاكَ اللهُ خَيْرًاউচ্চারণ : ঝাযাকাল্লাহু খাইরান (ফিদ দারাইন)অর্থ : আল্লাহ (দুনিয়া ও আখেরাতে) আপনার বা আপনাদের উত্তম প্রতিদান দিন।

আফওয়ানকারো সঙ্গে কোনো অন্যায় বা অসুবিধামূলক কোনো কাজ ঘটে গেলে আমরা সাধারণত ‘সরি (Sorry) বা দুঃখিত’ বলে থাকি। আপনি সরি (Sorry)বা দুঃক্ষিত বলার পরিবর্তে- ‫غَفْواً‬‎ ‘আফওয়ান বা মাফ করবেন’ বলার অভ্যাস গঠন করা উত্তম।‬

‘ইন্না লিল্লাহ’যে কোনো জিনিসের ক্ষতি বা অপচয় ঘটলে কিংবা মৃত্যুর সংবাদ শুনলে হায়, হায়, কিংবা আফসোস না করে ঘটনা ঘটার কিংবা সংবাদ শোনার সঙ্গে সঙ্গেই বলা-إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَউচ্চারণ : ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’অর্থ : নিশ্চয়ই (সব কিছুই) আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চয় তা (সব কিছুকেই) আল্লাহর কাছেই ফিরে যেতে হবে।’ বলা।

বিশেষ করে অভিবাদনে ‘আস্সালামু আলাইকুম’ বলামানুষ পরিচিত হোক আর অপরিচিত হোক এক মুসলমান অন্য মুসলমানের সঙ্গে দেখা সাক্ষাতে সালাম আদান-প্রদান করা। কেননা সালাম হলো প্রত্যেকের জন্য ভালো থাকার দোয়া।اَلسَّلاَمُ عَلَيْكُمউচ্চারণ : ‘আস্সালামু আলাইকুম’অর্থ : আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক।

আরও পড়ুন > পারস্পরিক ভালোবাসা স্থাপনে বিশ্বনবির বক্তব্য

সালামের উত্তরেও বলা হয়-وَعَلَيْكُمُ السَّلَامُউচ্চারণ : ওয়া আলাইকুমুস সালাম’অর্থ : এবং আপনার ওপরও শান্তি বর্ষিত হোক।’

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নতুন বছরের শুরুতে সব ভালো সঙ্গে নিজেদের সম্পর্ক অটুট রাখার তাওফিক দান করুন। ক্ষেত্র বিশেষ প্রত্যেক কথা ও কাজে- তাউজ, তাসিময়া, আলহামদুলিল্লাহ, ইনশাআল্লাহ, ঝাযাকাল্লাহ, আফওয়ান, ইন্না লিল্লাহ বলাসহ সালাম আদান-প্রদান করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জেআইএম