সদ্যপ্রয়াত আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, দলটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ছিলেন বিরল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। দলমত-নির্বিশেষে সকলের কাছেই তিনি ছিলেন অত্যন্ত প্রিয় মানুষ বলে উল্লেখ করেছেন আলোচকরা। তারা বলেন, সততা, নম্রতা, সরলতা, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে সর্বজন শ্রদ্ধেয় করে তুলেছিল। এমন চিত্র রাজনীতির অঙ্গনে বিরল।
মঙ্গলবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সেমিনার কক্ষে আয়োজিত সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মৃত্যুতে এক নাগরিক শোকসভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
শোকসভায় অংশ নিয়ে সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অত্যন্ত আস্থাভাজন, বিশ্বাসী, অনুগত নেতা ছিলেন সৈয়দ আশরাফ। তার মতো নেতা রাজনৈতিক জীবনে হাতেগোনা কয়েকজন পাওয়া যায়। আওয়ামী লীগের মতো এত বড় একটি দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকেও তার মধ্যে অহংকার ছিল না। রাজনৈতিক কোনো নেতাকর্মী কখনোই বলতে পারবেন না সৈয়দ আশরাফ তাদের সঙ্গে কখনো জোরে বা ধমক দিয়ে কথা বলেছেন। তিনি সব সময়ই ছিলেন বিনয়ী। আমাদের আশা সদ্য যেসব মন্ত্রী-এমপিরা শপথ নিলেন তারাও যেন সৈয়দ আশরাফের মতোই সকল মানুষের কাছে প্রিয় হয়ে ওঠেন।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকী বলেন, ‘সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের প্রতিটি জানাজায় মানুষের ব্যাপক উপস্থিতি-ঢল ছিল। এ থেকে আমরা বুঝতে পারি তিনি কতটা জনপ্রিয় মানুষ ছিলেন সবার কাছে। রাজনৈতিক, সামাজিক, পারিবারিক জীবন তিনি অতিবাহিত করেছেন সততার মাধ্যমে। একজন রাজনৈতিক নেতার কাছে এমনটাই আশা করে সব মানুষ। তাই সৈয়দ আশরাফের অনুকরণীয় হওয়া উচিত সব নেতাদেরই।’
বক্তারা বলেন, ‘সৈয়দ আশরাফ দলের কঠিন সময় থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের মতো একটি রাজনৈতিক দলের সাধারণ সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। দীর্ঘ সময়ে সৈয়দ আশরাফ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। এ সময় পদ-পদবি ব্যবহার করে ব্যক্তিগত সুবিধা বা জ্ঞাতসারে কাউকে অন্যায় সুবিধা দিয়েছেন-এ রকম অভিযোগ কেউ করতে পারবেন না। সৈয়দ আশরাফ তার সহকর্মী ও সহযোদ্ধাদের যে কথাটি জোর দিয়ে বলতেন, তা হলো রাজনীতি করতে চাইলে দুর্নীতি ছাড়তে হবে। আর দুর্নীতি করলে রাজনীতি ছাড়তে হবে। পদের গরিমা তাকে আচ্ছন্ন করেনি। তার ব্যক্তিত্ব পদের চেয়ে বড় ছিল।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনের সভাপতিত্বে নাগরিক শোক সভায় আরও বক্তব্য রাখেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস, পরিবেশ আন্দোলনের সহ-সভাপতি স্থাপতি মোবাশ্বের, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান। এ ছাড়া আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সচিব শাহাবুদ্দিন খান, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমোডর মো. জাহিদ হোসেন, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. শেখ সালাহউদ্দিন প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার (৩ জানুয়ারি) সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ব্যাংককের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। কয়েক মাস ধরে ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তিনি। শনিবার (৫ জানুয়ারি) তার মরদেহ দেশে নিয়ে আসা হয়। রোববার (৬ জানুয়ারি) ঢাকার বনানী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
এএস/এসআর/এমকেএইচ