প্রবাস

প্রধানমন্ত্রীর কাছে যুক্তরাষ্ট্র আ.লীগের ‘এক দফা এক দাবি’

জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে আসা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দলীয় নেতাকর্মীদের এখন একটাই দাবি-যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সম্মেলন। বর্তমান কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে দলের গঠনতন্ত্র বহির্ভূত কর্মকাণ্ডসহ নানা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অধিকাংশ নেতাকর্মীরাই তার ওপর অনাস্থা এনেছেন।

গতবছর নিউইয়র্কে প্রধানমন্ত্রীর নাগরিক সংবর্ধনার অনুষ্ঠানে এর বহিঃপ্রকাশ ঘটে। প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতেই সভাপতির বিরুদ্ধে স্লোগান দেন নেতাকর্মীরা। কিন্তু গত এক বছরে সভাপতি পরিবর্তন কিংবা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও সম্মেলন না হওয়ায় নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ বেড়েছে দ্বিগুণ। দলীয় নেতাকর্মীদের দাবির মুখে এবং সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবারে নতুন কমিটি সংক্রান্ত একটি চূড়ান্ত ঘোষণা দেবেন বলে অনেকেই আশা করছেন।

যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটি থাকবে, না কি ভেঙে দেয়া হবে এ নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন। ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের ৭২তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে এসে কয়েক মাসের মধ্যেই সম্মেলনের প্রস্তুতি নেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এ সম্মেলনকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে দৌড়ঝাঁপও শুরু হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর ওই ঘোষণাকে কেন্দ্র করে দুই আওয়ামী লীগ নেতার দু’রকম বক্তব্যের ফলে বিভ্রান্তির শিকার হয়েছেন সাধারণ নেতাকর্মীরা।

২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ গণমাধ্যমকে জানান, প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রী আগামী তিন থেকে চার মাসের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন। বর্তমান কমিটি ভেঙে দেওয়ার বিষয়েও কথা বলেন তিনি।

তবে আব্দুস সোবহান গোলাপের এ বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান। তিনি তার ফেসবুকে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ কার্যকরী কমিটির সকল সদস্যের উদ্দেশে জানান, ‘দলীয় সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশক্রমে আসন্ন ত্রিবার্ষিক সন্মেলনকে কেন্দ্র করে প্রস্ততি কমিটি গঠন কল্পে আগামী ৯ অক্টোবর (২০১৭) সোমবার বিকেল ৩টায় কার্যকরী কমিটির এক সভা লং আইল্যান্ড সিটির হোটেল হোম-২-তে অনুষ্ঠিত হবে।’

এ ঘোষণার চার ঘণ্টা পর তিনি আবার তার ফেসবুকে লেখেন, ‘গত ২৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের একটি পত্রিকায় আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপের উদ্ধৃতি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কমিটি ভেঙে দেয়া সংক্রান্ত যে খবর প্রকাশিত হয়েছে তা সম্পূর্ণ অসত্য, বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে ব্যক্তিগতভাবে দফতর সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপের সঙ্গে আমার কথোপকথন হয়েছে এবং তিনি অত্যন্ত জোড়ালোভাবেই জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে তার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।

অভিযোগ রয়েছে, ড. সিদ্দিকুর রহমান যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের বেশ কিছু নেতাকর্মীকে বহিষ্কারের হুমকি দিয়েছেন। তার একক ও হঠকারী সিদ্ধান্তের ফলে সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদসহ নির্বাহী কমিটির ৮ সদস্য বলির পাঁঠা হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ পরবর্তীতে ৭ জনের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করলেও সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদকে আর দলে ফেরার সুযোগ হয়নি।

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ উপেক্ষা করে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সম্মেলন না করে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে সম্প্রতি বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য কমিটি করার অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, আওয়ামী লীগের জন্ম ইতিহাস নিয়েও তাচ্ছিল্য করেছেন এই দুই নেতা। এসব অভিযোগে সম্প্রতি নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে পালকি পার্টি সেন্টারে সিদ্দিকুর রহমানের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন নেতাকর্মীরা। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী পরিবারের লোকজন এ সম্মেলনের আয়োজন করে।

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের দেখভালের দায়িত্বে থাকা শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের নাম ভাঙিয়ে সিদ্দিকুর রহমান ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ মেয়াদ্দোত্তীর্ণ এ সংগঠন নিয়ে একের পর এক অসাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, পাঁচ বছর আগে দুর্বৃত্তের হামলায় নিহত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নজমুল ইসলাম। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন আরেক সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা সিরাজউদ্দিন আহমেদ। সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমানকে বহিষ্কার করা হয়েছে সাংগঠনিক শৃঙ্খলাবিরোধী অপরাধে। গুরুতরভাবে অসুস্থ ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক কাজী মনিরুল হকও মারা গেছেন ছয় বছর আগে। এসব শূন্য পদ পূরণের অনুমতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নিজেই। কিন্তু সেই নির্দেশ বাস্তবায়িত করার নামে নিজের পছন্দের ৪৬ জনকে কো-অপ্ট (অন্তর্ভুক্ত) করা হয়েছে। যদিও সাধারণ সম্পাদক পদটি এখনো অপূর্ণই রয়ে গেছে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সংগঠনের দফতর সম্পাদক মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী। সংবাদ সম্মেলনের প্রেক্ষাপট উপস্থাপন করেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের অন্যতম সদস্য ড. প্রদীপ রঞ্জন কর।লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, দলে অনুপ্রবেশকারী ও সুবিধাবাদী সিদ্দিকুর রহমান ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন এ দলের সব নিয়ম-কানুন, গঠনতন্ত্র ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশনা উপেক্ষা করে নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য এবং দলের নেতাকর্মীদের প্রলোভন দেখিয়ে যা ইচ্ছা তাই করে চলছেন। কোনো নিয়ম-কানুন ছাড়া দলের অনেককে পদের লোভ দেখিয়ে নিজের অপকর্ম ঢাকার চেষ্টা করছেন।

এসআর/এমএস