আইন-আদালত

অনলাইনে জুয়া : স্ত্রী-সন্তানকে হত্যা করে পাগল সেজে ঘুরতেন রকিব

অনলাইনে জুয়া : স্ত্রী-সন্তানকে হত্যা করে পাগল সেজে ঘুরতেন রকিব

অফিসের সহকর্মী ও অন্যদের কাছ থেকে প্রায় ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা সুদের ওপর ধার নেন বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) উত্তরা শাখার সহকারী ব্যবস্থাপক রকিব উদ্দিন আহম্মেদ ওরফে লিটন। পরে অনলাইনে জুয়া খেলে নষ্ট করেন ওই টাকা। পাওনাদাররা তাদের টাকা আদায়ে চাপ দিতে থাকেন।

Advertisement

পাওনাদারদের চাপ ও মানসিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য তিনি বাসায় থাকা হাতুড়ি দিয়ে প্রথমে তার স্ত্রীর মাথায় আঘাত করেন এবং পরে গলা টিপে মেরে ফেলেন। এরপর মেয়ে ও ছেলেকে রশি দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করেন। পরে ট্রেনের নিচে চাপা পড়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেন। কিন্তু ওই যাত্রায় আত্মহত্যা করতে না পেরে বিভিন্ন জায়গায় পাগল সেজে আত্মগোপনে থাকতেন রকিব।

ঢাকার দক্ষিণখানের প্রেমবাগান এলাকার স্ত্রী মুন্নী (৩৭), ছেলে ফারহান (১২) ও মেয়ে লাইবাকে (৩) হত্যার কথা স্বীকার করেছেন রকিব। বুধবার ঢাকা মহানগর হাকিম শাহিনুর রহমানের আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় তিনি হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। জবানবন্দি শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এর আগে ৭ এপ্রিল বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার সদর থানা এলাকা থেকে রকিবকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

হত্যার কারণ প্রসঙ্গে রকিব উদ্দিন জানান, মাঝে মাঝে টুকিটাকি পারিবারিক বিষয় নিয়ে ঝামেলা হলেও সবাইকে নিয়ে সুখেশান্তিতে বসবাস করে আসছিলেন। তিনি যে এলাকায় থাকতেন সেখানে এবং তার অফিসেও তার বেশ সুনাম ছিল। তার নারী বা মাদক সেবনের কোনো বদ অভ্যাস ছিল না। অফিসের সহকর্মীসহ অন্যান্য ব্যক্তির কাছ থেকে প্রায় ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা সুদের ওপর বিভিন্ন সময়ে ধার নেন। অনলাইনে জুয়া খেলে সেসব টাকা নষ্ট করে ফেলেন। এদিকে পাওনাদাররা তাদের পাওনা টাকা আদায়ে চাপ দিতে থাকে। এ কারণে তিনি বাসায় স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করতেন এবং ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে এজন্য কিছুদিন আত্মগোপনে ছিলেন। তখন তার পরিবার দক্ষিণখান থানায় জিডি করে।

Advertisement

কিছুদিন পরে তিনি বাসায় ফিরে আসেন। পাওনাদারদের টাকার চাপে তিনি তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বিভিন্ন সময় আলোচনা করলেও তার পরিবার এবং আত্মীয়-স্বজন তাকে তার জুয়া খেলার কারণে তার কথা বিশ্বাস করতেন না। এসব নিয়ে পারিবারিক কলহ ও পাওনাদারদের চাপে প্রচণ্ড মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছিলেন তিনি।

২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টার দিকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নাস্তা করেন রকিব উদ্দিন। দুপুর বারটার দিকে ঘুমন্ত অবস্থায় স্ত্রীকে হাতুড়ি দিয়ে মাথায় আঘাত করে ও গলা টিপে ধরে হত্যা করেন। পরে পাশের রুমে থাকা ছেলে ও মেয়েকে গলায় ফাঁস দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন তিনি।

পরে বিকেল চারটার দিকে ট্রেনে চাপা পড়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করলেও রক্ষা পান রকিব। এরপর থেকে পাগল সেজে আত্মগোপনে ছিলেন তিনি।

২০২০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণখান থানার প্রেমবাগান এলাকার ৮৩৮ নম্বর বাড়ির চতুর্থ তলার দক্ষিণ পাশের ফ্ল্যাট হতে পঁচা গন্ধ আসলে দক্ষিণখান থানা পুলিশে খবর দেয়া হয়। থানা পুলিশ দরজা খুলে ভেতরে অর্ধগলিত একজন নারীসহ দুটি শিশুর মৃতদেহ পায়। এ ঘটনায় দক্ষিণখান থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়।

Advertisement

জেএ/এসআর/জেআইএম