দেশজুড়ে

অপরিকল্পিত পুকুর ও পলিতে ভাসছে কৃষকের স্বপ্ন

মেহেরপুরের গাংনীতে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় টানা বৃষ্টিতে বিভিন্ন মাঠে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এতে চলতি মৌসুমে অন্তত ১২ হাজার হেক্টর জমির বোরো আবাদ নষ্টের আশঙ্কা করছে কৃষি বিভাগ। একদিকে অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খনন অপরদিকে খালের পানি প্রবাহের মুখে পলি জমে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়ায় জলাবদ্ধতা প্রকট আকার ধারণ করেছে। তবে উপজেলা প্রশাসন বলছে খালের পানি প্রবাহ চলমান রাখতে তারা অভিযান অব্যাহত রেখেছে।

গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসের হিসাব মতে, চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় ১৩ হাজার ১৫৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে যা গত বছরের তুলনায় এক হাজার হেক্টর বেশি। আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্র ধরা হয়েছে ৬০ হাজার মেট্রিক টন। স্বর্ণা, ব্রি-৭১, ৭২, ৭৫, ৮০ ও ৮৭, বিনা ১১ ও ১৭ জাতের ধান রোপণ করা হবে। এছাড়াও সাত হেক্টর জমিতে পরীক্ষামূলক হাইব্রিড অ্যারাইজ গোল্ড জাতের ধান চাষ করা হচ্ছে। প্রতি হেক্টরে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সাড়ে সাত টন।

সরেজমিনে দেখা যায়, গাংনীর ষোলটাকা, মুন্দাইল, নোনার বিল, চাতরের বিল, শেখগাড়িসহ বেশ কয়েকটি বিলে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এতে বিভিন্ন ধরনের সবজি ও মরিচ পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেকেই ধান রোপণ করেছিলেন কিন্তু প্রবল বর্ষণে সেই ধান নষ্ট হয়ে গেছে। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না হলে ধান রোপণ করতে পারবেন না বাকি চাষিরা। অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খনন ছাড়াও খালের মুখে পলি জমে পানি প্রবাহের পথ বন্ধ হওয়ায় জলজট দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

উপজেলার ধান চাষি আবু তৈয়ব জানান, মুন্দাইল বিলে ৫ বিঘা জমিতে ধান চাষের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু জমিতে পানি জমে থাকায় এবার ধান চাষের কোনো সম্ভাবনা নেই। যুগির গোফা গ্রামের অ্যালবার্ট ও আল আমিন খাঁ খালের মুখে পুকুর খনন করায় পানি বের হতে পারে না। অন্যদিক দিয়েও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই বলে অভিযোগ করেন তিনি।

রুয়েরকান্দি গ্রামের হযরত আলী জানান, গ্রামের পাশ দিয়ে খাল খনন করে মাথাভাঙ্গা নদীতে পানি প্রবাহিত হয়। কিন্তু খালের মুখে পলি জমেছে। ফলে বিল থেকে পানি বের হতে পারছে না।

রায়পুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম সাকলায়েন ছেপু জানান, মুন্দাইল ও চাতরের বিলে যে পরিমাণ পানি জমেছে তা নিষ্কাশন না করা হলে কোনো ধান চাষ হবে না। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন দফতরে যোগাযোগ করেও পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা হয়নি। ধান আবাদ করতে না পারলে চাষিরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবেন তেমনি দেখা দিতে পারে খাদ্য ঘাটতি।

গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার কেএম শাহাবুদ্দীন আহমেদ জানান, চলতি মৌসুমে চাষিদেরকে বোরো আবাদের প্রতি আগ্রহী করে তোলা হয়েছে। বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি এলাকার বাঁধ অপসারণ করা হয়েছে। জলাবদ্ধতা হয়ত বেশি দিন থাকবে না। আগামী ১৫-২০ দিন পরও যদি ধান রোপণ করা হয় তাতে কোনো সমস্যা হবে না।

গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সেলিম শাহনেওয়াজ জানান, জলাবদ্ধ এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি স্থানে বাঁধ অপসারণ করা হয়েছে। অভিযান চলছে এবং জলাবদ্ধতা দূরিকরণে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আসিফ ইকবাল/এফএ/এমএস