নির্মল বাতাস, নিরিবিলি পরিবেশ। মন ভালো করতে চাইলে এ পরিবেশে কিছু সময় ঘুরে আসতে পারেন। এ জন্য প্রয়োজন শুধু ইচ্ছাশক্তি আর গাড়ি ভাড়া। নদীঘেঁষা পৌনে তিন কিলোমিটার ওয়াকওয়ে। একপাশে টলটলে জলরাশি, আরেক পাশে পরিবেশবান্ধব গাছ। রয়েছে খেলার মাঠ বা দৌড়ানোর খোলামেলা জায়গা। বলছিলাম সিদ্ধিরগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ের কথা। দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে যেকোনো পরিবহনযোগে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর ব্রিজের পশ্চিম পাড়ে নেমে দক্ষিণপাশে রয়েছে এ ওয়াকওয়ে। তবে উত্তরপাশে ওয়াকওয়ে করা হলেও হাঁটার পরিবেশ নেই বালু ও পাথর ব্যবসায়ীদের কারণে।
ওয়াকওয়ের জন্য স্থানটি বেশ পরিচিতি পেলেও স্থানীয় মানুষের কাছে এটি ‘শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়’ বলে পরিচিত। নির্মল বাতাস উপভোগ করতে দূর-দূরান্ত থেকে এ নদীতীরে বেড়াতে আসেন অসংখ্য মানুষ। বিশেষ করে শুক্রবার ও ছুটির দিনগুলোয় ভিড় বাড়ে এ ওয়াকওয়েতে।
ঘনবসতিপূর্ণ সিদ্ধিরগঞ্জে ঘোরার মতো অনেক জায়গা না থাকলেও শীতলক্ষ্যা পাড়ের এ ওয়াকওয়ে থাকায় প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ এখানে হাঁটতে আসেন। আর ছুটির দিনগুলোয় এখানে মানুষের ঢল নামে! ভোরবেলা শরীরচর্চার স্থান হিসেবে অনেকে ওয়াকওয়েটি বেছে নেন। এমনকি অনেকে সাইক্লিং করার ক্ষেত্রেও ব্যবহার করেন। সাইক্লিং করতে আসা মিজমিজি বাতানপাড়া এলাকার শাহাদাত হোসেন জানান, ভোরবেলা মানুষজন কম থাকায় এখানে সাইক্লিং করা সহজ। তবে বিকেলে এখানে সাইক্লিং না করাই ভালো। কারণ বিকেলে অনেক মানুষ এখানে হাঁটাহাঁটি করেন।
ওয়াকওয়ের পাশেই রয়েছে একটি ল্যান্ডিং স্টেশন (কাঁচপুর ব্রিজের দক্ষিণপাশে)। বিভিন্ন স্থান থেকে পণ্যবাহী জাহাজ এখানে এসে ল্যান্ডিং স্টেশনের মাধ্যমে পণ্য নামিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পাঠায়। নদীর পাড়ের ওয়াকওয়েতে হাঁটতে এসে ল্যান্ডিং স্টেশনে থেমে থাকা জাহাজগুলোয় বসে অনেকেই সময় কাটান। তেমনই একজন সিদ্ধিরগঞ্জের পাইনাদী এলাকার রাকিবুল হাসান। তিনি বলেন, ‘আমি সপ্তাহে ২-৩ দিন এখানে আসি। এখানে এলে বেশিরভাগ সময় জাহাজের ওপর বসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেই। কারণ এখানে বাতাস বেশি। জাহাজের ওপর বসে নদী, নদীর পানি ও নদীতে চলমান জাহাজ-নৌকা দেখতে ভালো লাগে।’
ওয়াকওয়ের পাশে ঘাট থাকায় রয়েছে নৌ ভ্রমণের সুযোগ। সেজন্য অনেকেই পরিবার নিয়ে এখানে নৌ ভ্রমণে আসেন। নৌকায় ভ্রমণ করতে খরচ কেমন লাগে জানতে চাইলে মাঝি লোকমান হোসেন জানান, পরিবার নিয়ে নৌ ভ্রমণ করতে চাইলে ঘণ্টাপ্রতি ২শ টাকা লাগে। পরিবার নিয়ে নদী ভ্রমণ করতে আসা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আগে এটি মাদকসেবীদের আড্ডাখানা ছিল। ওয়াকওয়ে নির্মাণের পর থেকে এটি বিনোদনের জায়গা হয়েছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে এখন মানুষ এখানে ঘুরতে আসেন।’
দিনের বেলা ওয়াকওয়ের আশেপাশে মানুষের সরব উপস্থিতি থাকলেও সন্ধ্যার পর স্থানটি নীরব হয়ে যায়। অর্থাৎ সন্ধ্যার পর এখানে না থাকাই ভালো।
যেভাবে যাবেন: রাজধানীর গুলিস্তান থেকে ২৫ টাকা ভাড়ায় বাসে করে চিটাগাং রোড নামবেন। তারপর সেখান থেকে ১৫ টাকা রিকশা ভাড়ায় কাঁচপুর ব্রিজের পশ্চিমপাশ হয়ে ব্রিজের দক্ষিণপাশে সিদ্ধিরগঞ্জ শীতলক্ষ্যা নদীর পাড় ওয়াকওয়ের মাথায় নামবেন।
খাবারের ব্যবস্থা: এখানে ফুচকা, চটপটি ও বাদাম ছাড়া আর তেমন কোনো খাবার পাওয়া যায় না। ভারি খাবার খেতে চাইলে বাসা থেকে নিয়ে যাওয়া ভালো।
এস কে শাওন/এসইউ/এএ/পিআর