মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের সাতগাঁও এলাকায় একটি তেলবাহী ট্রেনের সাতটি বগি লাইনচ্যুত হওয়ায় সিলেট-ঢাকা ও সিলেট-চট্টগ্রাম রুটে পাঁচটি ট্রেনের যাত্রা বাতিল হয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন হাজারো যাত্রী।
এখন পর্যন্ত লাইনচ্যুত বগিগুলো উদ্ধার করে লাইন স্বাভাবিক করতে পারেনি রেলওয়ের প্রকৌশ বিভাগ। এ কারণে বিভাগীয় শহর সিলেটের সাথে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শনিবার দুপুরে শ্রীমঙ্গলে ট্রেন দুর্ঘটনার কারণে সিলেট রেলওয়ে স্টেশন থেকে, উদয়ন, পারাবত ও উপবন ছেড়ে যায়নি। এছাড়া ঢাকা থেকে আরও দুটি ট্রেন সিলেট আসার কথা ছিল। এর মধ্যে পারাবত ও উদয়ন ঢাকায় এবং উপবন চট্টগ্রামে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল।
শনিবার রাত পৌনে ১০টায় ট্রেনটি সিলেট স্টেশন থেকে ছেড়ে যাওয়ার কথা। সাড়ে ৯টার দিকে তিনি স্টেশনে গিয়ে যাত্রীরা শুনতে পান শ্রীমঙ্গলে দুর্ঘটনার কারণে যাত্রা বাতিল করা হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েন যাত্রীরা। একইভাবে দুপুর আড়াইটার দিকে পারাবত সিলেট ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। এ দুর্ঘটনার কারণেই আটকা পড়েন ট্রেনযাত্রীরা।
দুর্ভোগে পড়া ট্রেনযাত্রী সিলেটের আবুল কাসেম বলেন, ‘বোববার বাবাকে ঢাকায় চিকিৎসক দেখানোর কথা। অ্যাপয়েন্টমেন্টও নেয়া হয়েছে। রাতে স্টেশনে এসে জানতে পারলাম ট্রেন যাবে না। এখন খুব বিপাকে পড়েছি। অসুস্থ অবস্থায় বাবাকে নিয়ে বাসে করে যাওয়াও সম্ভব না। এখন কী করব, কিছুই বুঝতে পারছি না।’
শনিবার দুপুর ১২টার দিকে শ্রীমঙ্গলে তেলবাহী ট্রেন লাইনচ্যুতের ঘটনায় সিলেটের সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে পড়ে। কখন চালু হবে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারছেন না কর্মকর্তারা। তবে তারা বলছেন, রাতের মধ্যে রেলপথ স্বাভাবিক করতে কাজ করছেন উদ্ধার কর্মী ও রেলওয়ে প্রকৌশলীরা।
এদিকে, ট্রেন দুর্ঘটনার কারণ জানতে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক খলিলুর রহমান বলেন, শ্রীমঙ্গলে দুর্ঘটনার কারণে সিলেট স্টেশন থেকে পারাবত, উদয়ন ও উপবন ছেড়ে যায়নি। এর মধ্যে পারাবত ও উদয়ন ঢাকায় এবং উপবন চট্টগ্রামে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। এছাড়া ঢাকা থেকে শনিবার বিকেলে কালনী ও রাতে উপবন সিলেট এসে পৌঁছার কথা থাকলেও এই ট্রেনগুলোর যাত্রা বাতিল করা হয়েছে। যেসব ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়েছে তাদের টিকিটের টাকা ফেরত দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ রেলওয়ে ডিভিশনাল প্রকৌশলী সুলতান আলী বলেন, দুর্ঘটনায় পড়া তেলবাহী ট্রেনটি উদ্ধারে কাজ চলছে। রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক হতে অনেক সময় লাগবে। মানুষের ভিড়ের কারণে উদ্ধার কাজ বিঘ্ন ঘটছে। তবে আশা করছি সকালের আগেই রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক হবে।
শ্রীমঙ্গল জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন বলেন, দুর্ঘটনায় ট্রেনের পেছনে থাকা একটি ইঞ্জিন, একটি ব্রেক গার্ড এবং পাঁচটি কেরোসিন ও ডিজেল বোঝাই তেলের ওয়াগানসহ মোট সাতটি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে।
রেলওয়ে সিলেট ডিভিশনের সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী দুলাল চন্দ্র দাশ জানান, ট্রেন দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রেলওয়ের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা (ঢাকা) মঈনুল ইসলামের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটিতে আছেন বিভাগীয় প্রকৌশলী (ঢাকা) সুলতান আলী, বিভাগীয় সংকেত ও টেলিযোগাযোগ প্রকৌশলী (ঢাকা) আবু হেনা, বিভাগীয় প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) রেজাউল করিম ও বিভাগীয় যন্ত্র প্রকৌশলী (ওয়াগন) রেজাউল করিম। আগামী ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
দুর্ঘটনায় কেউ হতাহত না হলেও একটি ছোট কালভার্ড ও প্রায় দুইশ ফুট রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উৎসুক জনতার ভিড় সামলাতে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ঘটনাস্থলে রেলওয়ে পুলিশ, শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা রয়েছেন বলেও জানান তিনি।
ছামির মাহমুদ/এমএসএইচ