দেশজুড়ে

জলাশয় ভরাট করে শিল্প গবেষণা ভবন

পাহাড়ের মাটি দিয়ে ভরাট করে হ্রদ দখলের অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ রাঙ্গামাটি সাব স্টেশনের বিরুদ্ধে। প্রথমে কাপ্তাই হ্রদে দেয়াল দিয়ে পানি প্রবেশের পথ বন্ধ করে দিয়ে সেখানে মাটি ফেলে ভবন নির্মাণের উপযোগী করে তোলা হচ্ছে। তবে দেয়াল নির্মাণের পর এখনও দেয়ালের ভিতরেই কাপ্তাই হ্রদের পানি রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের ফিসারিঘাটের সামনে এবং বাস টার্মিনালের পাশে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ রাঙ্গামাটি সাব স্টেশন। অফিসটি প্রায় বন্ধ থাকে। অফিসে কর্মচারী রয়েছে দুইজন।

মূল অফিসের পাশেই আরেকটি মূল গেট নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে বিশাল জায়গার মধ্যে পাহাড়ের মাটি কেটে ভরাট করা হচ্ছে। চারপাশেই দেয়াল দিয়ে ঘেরা প্রায় দুই একর জায়গার অর্ধেকে মাটি ফেলা হয়েছে। চারটি গাড়ির মাধ্যমে প্রতিদিনই মানিকছড়ির শুকরছড়ি থেকে ব্যক্তি মালিকানাধীন একটি পাহাড়ের মাটি আনা হচ্ছে। পানির ওপর মাটি ফেলতে ফেলতে দেয়াল পর্যন্ত ভরাট করতে আরও বেশ কিছুদিন সময় লাগবে। এজন্য আরও কয়েকটি পাহাড়ের মাটি প্রয়োজন।

এদিকে গত কয়েকদিন ধরে ট্রাকে ট্রাকে মাটি আনার বিষয়ে শহরে বেশ কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছে।

তালাবদ্ধ অফিসে উঁকি দিতেই কথা বলে উঠেন একজন। অফিসে কেউ আছেন কিনা জিজ্ঞেস করতেই জানান, তিনি অফিসের কর্মচারী নূর ইসলাম।

তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের মূল অফিস চট্টগ্রামের বালুছড়ায়। মূল অফিসের সাব স্টেশন এটি। চট্টগ্রাম অফিসের পরিচালকই এটি নিয়ন্ত্রণ করেন। তিনি চট্টগ্রামেই অফিস করেন।

তিনি আরও জানান, মাটি ভরাটের পর নির্মাণ হবে ভবন। সেই ভবনে চলবে বিভিন্ন গবেষণা।

জায়গাটি এক সময় মাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হত। পানি শুকিয়ে যাওয়ার পর প্রতিবছরই ক্রিকেট, ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন হতো এই মাঠে। মাঠে এমন অনেক টুর্নামেন্টের আয়োজক জেলা ক্রিকেট টিমের খেলোয়াড় মো. ইয়াছিন মিশু।

তিনি বলেন, ছোট থেকেই এই মাঠে খেলেছি। এই মাঠে খেলে জেলা পর্যায়ে অনেক খেলোয়াড় উঠে এসেছে। কিন্তু এখন এটি অফিসের জন্য নেয়ায় খেলা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

স্থানীয় কাউন্সিলর ও রাঙ্গামাটি পৌরসভার প্যানেল মেয়র জামাল উদ্দিন বলেন, এই ওয়ার্ডে এটিই ছিল একমাত্র মাঠ। পানি শুকালে ছেলেরা ক্রিকেট, ফুটবল খেলতো। কিন্তু বিজ্ঞান ও শিল্প পরিষদ নিজেদের জায়গা হিসেবে দেয়াল তুলে দেয়। দেয়াল তোলার সময়ও এলাকাবাসীর সঙ্গে ঝামেলা হয়েছিল। তবে বর্তমানে সেখানে কী হচ্ছে তা জানা নেই।

ট্রাকের জ্বালানি সরবরাহকারী আব্দুল বাতেন বলেন, ঢাকার একটি ফার্ম মাটি ভরাটের কাজ করছে। আমি তাদেরকে শুধুমাত্র তেল সরবরাহ করছি। শুনেছি, মানিকছড়ি ওদিক থেকে ব্যক্তি মালিকাধীন একটি পাহাড়ের মাটি আনা হচ্ছে। তবে বিস্তারিত জানি না।

এদিকে কাপ্তাই হ্রদের আইন অনুসারে ১২০ ফুটের নিচে কোনো স্থাপনা তৈরিতে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এখানে তা মানা হচ্ছে না। বর্তমানে কাপ্তাই হ্রদে ৯৮ এমএসএল (মিনস সী লেভেল) পানি রয়েছে। বর্ষাকালে আরও ১০ ফুট পানি বেশি থাকে। সে হিসেবে একেবারেই হ্রদের অনেক গভীরে গিয়ে পানিতে মাটি ভরাট করে ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প পরিষদের চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক ড. মোহাম্মদ মোস্তফা বলেন, কাপ্তাই হ্রদ দখল করে মাটি ভরাটের বিষয়টি মিথ্যা কথা। এটি আমাদের জায়গা। আমরা নিয়মিত খাজনা পরিশোধ করি। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেই কাজ করা হচ্ছে।

ছয় মাস পানির নিচে থাকার বিষয়ে জানতে চাইল তিনি বলেন, জায়গাটি একটু ঢালু। তাই কিছু জায়গা নিমজ্জিত থাকে। তবে এটি হ্রদ দখল নয়।

রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক এ কে এম মামুনুর রশীদ বলেন, এই বিষয়ে কোনো কিছু জানি না। এই প্রথম জানতে পারলাম। এ বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি।

শংকর হোড়/এএইচ/এমকেএইচ