দেশজুড়ে

প্রতিপক্ষের চেয়ারম্যানকে ফাঁসাতেই খুন করা হয় মেম্বার হামিদুলকে

গোপালগঞ্জের সদর উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য হামিদুল শরিফ হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে সিআইডির তদন্তে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। স্থানীয় রাজনৈতিক বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষের ইউপি চেয়ারম্যানকে ফাঁসাতেই হত্যা করা হয় ইউপি সদস্য হামিদুলকে।

এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে রবিউল শরীফ (৫৭), আমির মোল্লা (৩৫) ও সাগর নামে তিনজনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। যশোর থেকে মোটরসাইকেল-যোগে গোপালগঞ্জে এসে হামিদুলকে হত্যা করা হয়। মঙ্গলবার (২২ ডিসেম্বর) সকালে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি ইমাম হোসেন।

গোপীনাথপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান লাচ্চু শরীফকে ফাঁসানোর উদ্দেশ্যে ইউপি সদস্য হামিদুল শরীফকে তৃতীয় একটি পক্ষ খুন করে বলে জানান তিনি।

তিনি আরও জানান, হত্যাকাণ্ডের পর গোপীনাথপুর থানায় নিহতের ভাই মনির শরীফ অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে মামলাটি সিআইডির কাছে এলে ছায়া তদন্ত শুরু করা হয় এবং আধুনিক তদন্ত কলাকৌশল ব্যবহার করে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক ও চালক আমির মোল্লাকে শনাক্ত করা হয়।

পরে আমির মোল্লাকে যশোর থেকে গ্রেফতারের পর তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী ঢাকার পাটুয়াটুলী থেকে মূল আসামি রবিউল শরীফকে গ্রেফতার করা হয়। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সাগরকেও গোপালগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুক্তা ধর বলেন, কারিগরি তথ্য ও রূপসা ব্রিজ টোল প্লাজার সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ থেকে তাদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। রবিউল শরীফ ও আমির মোল্লা দীর্ঘদিন ধরে যশোরে বসবাস করেন। যদিও তাদের গ্রামের বাড়ি নিহত ইউপি সদস্য হামিদুলের এলাকায়। হামিদুলকে হত্যা করার জন্য তারা দু’জন মোটরসাইকেল-যোগে গোপালগঞ্জ এসেছিলেন।

হত্যাকাণ্ডের কারণ বলতে গিয়ে তিনি বলেন, স্থানীয় চেয়ারম্যান (লাচ্চু শরীফ) আমির মোল্লাকে একটি মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দিয়েছিলেন। এ ঘটনায় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে হামিদুল শরীফসহ কয়েকজন ইউপি সদস্য মিলিত হয়ে অনাস্থা জানিয়েছিলেন। এতে আমির মোল্লা হামিদুলকে হত্যার পরিকল্পনা করে এবং হত্যা করলে চেয়ারম্যান এ হত্যাকাণ্ডে জন্য দায়ী হবে।

এদিকে হামিদুল মারা গেলে পরবর্তীতে মেম্বার হতে পারবে ভেবে আরেক আসামি রবিউল শরীফ হত্যাকাণ্ডে অন্য আসামিদের সঙ্গে একত্রিত হন। মূলত ‘গ্রাম্য রাজনীতিতে ক্ষমতা পাওয়ার লোভে এই হত্যাকাণ্ড হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

হত্যাকাণ্ডে একটি অস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছে বলে জানান সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুক্তা ধর। অস্ত্রের বিষয়ে ইতোমধ্যে তথ্য পাওয়া গেছে এবং সেই অস্ত্র উদ্ধারে কাজ চলছে বলেও জানান তিনি। তবে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর বিষয়টি অস্বীকার করে গোপীনাথপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান লাচ্চু শরীফ বলেন, আমির মোল্লাকে আমি চিনি না সুতরাং মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর কোনো প্রশ্নই আসে না। তবে রবিউল শরীফকে চিনি, সে নিহত হামিদুল শরিফের পাশের বাড়ির বাসিন্দা।

প্রসঙ্গত, গত ১২ ডিসেম্বর রাত ৮টার দিকে গোপীনাথপুর হাইস্কুলের মেইনগেট সংলগ্ন এলাকায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে গোপীনাথপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের সদস্য হামিদুল শরীফ নিহত হন।

সুকান্ত সরকার/এমআরএম/এআরএ