দেশজুড়ে

পছন্দের ক্লিনিকে টেস্ট না করায় রিপোর্ট ছুড়ে ফেলে দিলেন ডাক্তার

চিকিৎসকের পছন্দের ক্লিনিকে টেস্ট না করায় রোগীর রিপোর্টসহ ব্যবস্থাপত্র টেবিল থেকে ছুড়ে ফেলে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনি বিভাগের জুনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. সানজিদা পারভীনের বিরুদ্ধে। এছাড়া ওই গাইনি চিকিৎসকের খারাপ আচরণে অতিষ্ট সাধারণ রোগীরা।

রোববার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে কান্নাজড়িত কণ্ঠে স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে এমন অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী নরসিংদীর পলাশ উপজেলার কাজীরচর গ্রামের ফারুকের স্ত্রী নাসরিন আক্তার (৩৮)।

তিনি জানান, তার বাড়ি থেকে পলাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স দূরে হওয়ায় নিকটবর্তী কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই আসেন এবং চিকিৎসা নেন। তিনদিন আগে শারীরিক (স্ত্রী রোগ) কিছু সমস্যা নিয়ে তিনি কালীগঞ্জ সরকারি হাসপতালে যান। সেখানে তিনি ১৩৩ নং রুমে জুনিয়র গাইনি কনসালট্যান্টকে দেখানোর জন্য বহির্বিভাগ থেকে টিকিট নেন। তারপর সিরিয়াল অনুযায়ী ডা. সানজিদা পারভীনকে দেখান।

এ সময় তিনি বেশ কিছু টেস্ট দেন। সেইসঙ্গে তিনি সুনিদির্ষ্ট করে স্থানীয় কালীগঞ্জ সেন্ট্রাল হাসপাতালে টেস্ট করানোর কথা বলেন। কিন্তু নাসরিন আক্তার ওনদিনই স্থানীয় শাপলা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে টেস্ট করান। একদিন পর ওই টেস্ট রিপোর্ট সরকারি হাসপাতালের সানজিদা পারভীনের কাছে নিয়ে যান। কিন্তু ডাক্তারের পছন্দের ক্লিনিকে টেস্ট না করায় নাসরিন আক্তারের রিপোর্টসহ ব্যবস্থাপত্র টেবিল থেকে ছুড়ে ফেলেন তিনি। এ সময় ডাক্তার অশালীন বাক্য প্রয়োগ করেন বলেও জানান নাসরিন। পরে অন্য আরেকটি ক্লিনিক থেকে টেস্ট করাতে বলে রোগীকে ছেড়ে দেন।

নাসরিন আক্তার আরও বলেন, লেখাপড়া না জানা আমি মনে করেছি শাপলাই সেন্ট্রাল হাসপাতাল। এখন তো আমার অনেকগুলো টাকা গেল। আমরা গরিব মানুষ, দিন আনি দিন খাই। আবার এত টাকা কই পাই? তাছাড়া স্বামী এই কথা শুনলেও তো রাগারাগি করবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনি বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা ভুক্তভোগী একাধীক রোগী জানান, দিনের পর দিন ওই গাইনি ডাক্তারের খারাপ আচরণে স্থানীয়রা অতিষ্ট। একবারের সমস্যা একাধীকবার বললেই তিনি রাগারাগি শুরু করেন। কখনো কখনো অশালীন বাক্য প্রয়োগও করেন। তবে এ ব্যাপারে অসংখ্যবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বলেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি। বরং দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছেন।

এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ সরকারি হাসপাতালের গাইনি বিভাগের জুনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. সানজিদা পারভীন বলেন, আমি সরকারি হাসপতালের কাজ শেষ করে প্রতিদিন কালীগঞ্জ সেন্ট্রাল হাসপাতালে বসি। সে কারণে ওই হাসপাতালের প্রতি দুর্বলতা আছে। তাই আমি ওইখান থেকে টেস্ট করাতে বলেছি। তবে আমি রিপোর্টসহ ব্যবস্থাপত্র টেবিল থেকে ছুড়ে ফেলিনি এবং অশালীন বাক্যও প্রয়োগ করিনি। এই হাসপাতালে প্রায় ৩ বছর ধরে আছি, আমি কখনও কারো সাথে খারাপ আচরণ করিনি।

বিষয়টি নিয়ে কথা হলে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মিনহাজ উদ্দিন মিয়া বলেন, আমি আসলে এখানে নতুন এসেছি। বিষয়গুলো আমার জানাছিল না। তবে যেহেতু শুনলাম, আমি ওই গাইনি ডাক্তারের সাথে কথা বলব। শুধু তার সাথে নয় এ ব্যাপারে হাসপাতালের সকল ডাক্তারের সাথে কথা বলবো।

তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে কোনো টেস্ট না করা গেলে সেটা বাইরের কোন ক্লিনিকে করাবে সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারে না কেউ। বরং ভালো জায়গা থেকে পরীক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া উচিত।

এ ব্যাপারে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান গাজীপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. খাইরুজ্জামান।

আব্দুর রহমান আরমান/এফএ/এমএস