রোজার সময় ফলের কদর বাড়ে। ফল ছাড়া ইফতার কল্পনাই করা যায় না। এদিকে গ্রীষ্মকাল শুরু হলেও পরিপক্ব না হওয়ায় বাজারে এখনও আসেনি চাহিদা অনুযায়ী মৌসুমি ফল। ফলে বাজারে থাকা গ্রীষ্মকালীন ফল তরমুজের ওপর ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি থাকায় সুযোগটিকে কাজে লাগাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তারা তরমুজের দাম হাঁকাচ্ছেন ইচ্ছেমতো।
গত এপ্রিলের শুরুতে যে তরমুজের কেজি ৩০ থেকে ৪৫ টাকা ছিল এখন তা বাড়িয়ে বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। মৌসুমের শুরু থেকেই তরমুজের দাম চড়া। তবে রমজান আর বৈশাখের খরতাপকে কেন্দ্র করে সবুজ তরমুজেও আগুন লেগেছে।
পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এই তরমুজ এখন জেলা শহরসহ সর্বত্রই কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এই সুযোগে বিক্রেতাদের মুনাফা চরমে। চলতি সপ্তাহে খুচরা বাজারে এক কেজি তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি। বেশি ভালো মানেরগুলো ৬৫ থেকে ৭০ টাকাতে বিক্রি হচ্ছে। এতে পাঁচ কেজির একটি তরমুজের জন্য ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা! অথচ এই তরমুজের দাম ৬০-৭০ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। প্রতিটি তরমুজ কমপক্ষে ১০০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে!
ক্রেতাদের ভাষ্য, তরমুজ যতই ছোট হোক না কেন চার কেজি ওজনের নিচে কোনো সাইজ নেই। এতো ভারী একটি ফল ছোট পরিবারের জন্য কিনতে গেলেও পাঁচ কেজির নিচে হয় না। তবে বেশি দামের জন্য তারা কিনতে পারছেন না।
চাষি শামছুল আলম বলেন, ‘বর্তমান বাজারে স্থানীয়ভাবে ১০ কেজি ওজনের তরমুজ পাইকারদের কাছে শ’ হিসেবে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য এলাকায় নিয়ে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’
আরেক তরমুজ চাষি মজিবুর রহমান মিন্টু জানান, আড়তদারদের কাছে চার কেজি ওজনের তরমুজ সর্বোচ্চ ৫০ টাকায় বিক্রি করতে পারেন তারা। ১০০ টাকায় যে তরমুজ বিক্রি হয় তার ওজন ৭-৮ কেজি হয়। আড়তদারদের কাছে এই দামে তরমুজ বেচেই অনেক লাভবান তারা।
তিনি বলেন, ‘পরিবহন খরচের অজুহাতে সিন্ডিকেট ও মধ্যস্বত্বভোগীরা বেশি লাভবান হতে এমন দর বাড়িয়ে দিয়েছেন। চাষিরা যদি সরাসরি ভোক্তাদের কাছে তরমুজ বিক্রি করতে পারেন তাহলে দাম অনেক কম হবে।’
দেশের বেশিরভাগ এলাকায় তরমুজের দাম নির্ধারণ হয়ে থাকে এর আকার অনুযায়ী। তিন বছর আগেও একটি ছোট আকারের তরমুজ (গড় ওজন ৪ কেজি পর্যন্ত) গড়ে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, মাঝারি আকারের তরমুজ (গড় ওজন ৫ কেজি থেকে ১০ কেজি) ৮০ থেকে ১৮০ টাকা এবং বড় সাইজের তরমুজ (১০ কেজি থেকে আধামণ বা তারও বেশি ওজনের) ২০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতো। তবে ইদানীং দাম বেড়ে যাওয়ায় বিশেষত ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ও সুপারশপগুলোতে তরমুজ কেজিতে বিক্রির চল শুরু হয়। সে হিসাবে, গতবছর বৈশাখের মাঝামাঝি সময়ে মাঝারি বা বড় আকৃতির তরমুজ ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও এবারে এর দাম আকাশচুম্বী।
আতিকুর রহমান/এসআর/জিকেএস