খেলাধুলা

৮৬’র আইসিসি ট্রফিতে আর্জেন্টিনার সাথে ম্যাচ ছিল ঈদের দিন : নান্নু

যত বড় ক্রিকেট অন্তঃপ্রাণই হোন না কেন, ঈদের দিন নামাজ না পড়ে পরিবার-পরিজন ফেলে বিদেশ বিভুঁইয়ে ঈদ করার কথা এখনো ভাবতেই চান না বাংলাদেশের বেশির ভাগ ক্রিকেটার। তারওপর ঈদের দিন যদি হয় প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট, তাহলে খেলায় মনে বসানোও যে বেশ কঠিন!

কারণ, ঈদ মানেই স্বর্গীয় খুশি, আনন্দর ফলগুধারা। বাংলাদেশের মানুষ মাত্রই ঈদের দিনে মা, বাবা, ভাই-বোন, পরিবার-পরিজনের সাথে কাটাতে অনেক বেশি পছন্দ করেন। ঈদের খুশি ভাগাভাগি করা আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশি আর বন্ধু-বান্ধব সবার সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় এবং এক অন্যরকম ভাললাগা ও উৎসব আনন্দে কাটাতেই বেশি উৎসাহি সবাই।

হোক তা টেস্ট, ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি- ঈদের দিন ক্রিকেট ম্যাচও মন থেকে খেলতে চাইবেন না বাংলাদেশের বেশিরভাগ ক্রিকেটার । বাংলাদেশের বর্তমান প্রজন্মের ক্রিকেটাররা খানিক সৌভাগ্যবান যে এখন প্রায় সব ওয়ানডেই হয় দিবা-রাত্রিতে, ফ্লাডলাইটের আলোয়। খেলা শুরু হয় দুপুর ২টা থেকে আড়াইটায়।

বাংলাদেশের কোন ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টি ম্যাচ ঈদের দিন পড়লেও সমস্যা নেই। সকালে ঈদের নামাজ পড়ে ঈদের বিশেষ খাওয়া-দাওয়া সেরেও দুপুরে বা বিকেলে ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি খেলতে মাঠে নামা সম্ভব।

কিন্তু এক সময় তা হতো না। টেস্টের মত ওয়ানডেও হতো লাল বলে। খেলা হতো দিনের আলোয়। বাংলাদেশ যতবার আইসিসি ট্রফি খেলেছে, প্রতিবারই খেলা হয়েছে লাল বলে এবং দিনের আলোয়। কাজেই ঈদের দিন খেলা পড়লে আর নামাজ পড়ার কোনই উপায় ছিল না।

তবে এবার ঈদে জাগো নিউজের সাথে আলাপে কয়েকজন ক্রিকেটারই জানালেন তারা দেশের বাইরে ঈদের দিনও জাতীয় দলের হয়ে ম্যাচ খেলেছেন। মোহাম্মদ আশরাফুল জাগো নিউজকে শুনিয়েছেন, যুব দলের হয়ে ম্যাচ খেলার কথা। হাবিবুল বাশার এর কাছ থেকে জানা হয়েছে, বাংলাদেশ জাতীয় দল ২০০৪-এর দিকে নামিবিয়ায় ঈদের দিন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ম্যাচ খেলেছেন।

আর জাতীয় দলের আরেক সাবেক অধিনায়ক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু দিলেন আরেক নতুন তথ্য। বাংলাদেশ জাতীয় দল ১৯৮৬ সালের ঈদের দিন আইসিসি ট্রফির ম্যাচ খেলেছিল মেসি-ম্যারাডোনার দেশ আর্জেন্টিনার বিপক্ষে।

নান্নু জানান, ১৯৮৬ সালে ইংল্যান্ডে আমরা আইসিসি ট্রফি খেলতে গিয়েছিলাম রমজান মাসে। তখন ঈদের দিন আইসিসি ট্রফির ম্যাচ পড়েছিল। আমরা ঈদের দিন আর্জেন্টিনার সাথে ম্যাচ খেলেছিলাম। আমাদের দলের সাথে যাওয়া আম্পায়ার হালিম ভাই নামাজের ইমামতি করেছিলেন। তার ইমামতিতে আমরা ঈদের নামাজ পড়ে মাঠে গিয়ে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে আইসিসি ট্রফির গ্রুপ ম্যাচ খেলতে নামি।

দিনটি ছিল ২৫ জুন ইংল্যান্ডের হেরফোর্ডে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে আইসিসি ট্রফির গ্রুপ ম্যাচ। ওই ম্যাচে বাংলাদেশ জিতেছিল ৭ উইকেটে।

এছাড়া নান্নু আরও জানান, তিনি দেশের বাইরে প্রথম ঈদ করেছেন ১৯৮৩ সালে। তার ভাষায়, ‘আমি যখন ইংল্যান্ডে ট্রেনিং করতে গিয়েছিলাম, তখন পরিবারের বাইরে প্রথম ঈদ করেছি।’

এছাড়া আর সবার মত নান্নুরও ছেলেবেলার ঈদ ছিল অন্যরকম আনন্দে ভরা। সেই ছেলেবেলার ঈদের দিনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে জাতীয় দলের বর্তমান প্রধান নির্বাচক জানান, ‘আপনারাতো জানেন আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামের লাভ লেইনের অভিজাত আবেদিন কলোনিতে। সেখানে আমাদের চাচা ও ফুফুরা মিলে অনেকগুলো পরিবার একসাথে থাকতাম।’

‘তাই চাচাতো-ফুফাতো ভাই-বোন মানে এক সঙ্গে অনেকগুলো ভাই-বোনের বেড়ে ওঠা। আমরা ঈদের আনন্দটাও সব কাজিনরা মিলে ভাগ করে নিতাম। সবাই মিলে নতুন কাপড় চোপড় পড়ে ঘোরাঘুরি করতাম। সবার বাসায় যেতাম। এছাড়া আমাদের আবেদিন কলোনির বিরাট লন ছিল, সেখানে ক্রিকেট-ফুটবল খেলা ছিল আমাদের একটা নিত্যদিনের অভ্যাস। ঈদেরদিন হয়ত টেনিস বল আর ব্যাট নিয়ে নেমে পড়তাম ক্রিকেট খেলতে। স্ট্যাম্প বসিয়ে খুব মজা করে টেনিস বলে ক্রিকেট ম্যাচ শুরু করে দিতাম।’

‘স্কুল জীবনের প্রায় পুরোটা আমাদের কাজিনদের দল বেঁধে ঘুরতে যাওয়াই ছিল ঈদের দিনের একটা বড় পর্ব। তার আগে একটা বড় পর্ব ছিল আমাদের দাদার হাতে ঈদি পাওয়া। ঈদের নামাজ শেষে বাসায় আসার পরপরই আমরা সবাই এক এক করে দাদার কাছে যেতাম। লাইন করে দাঁড়াতাম। দাদা আমাদের পরম স্নেহে ঈদি দিতেন। আমার ৫ চাচা আর ৯ ফুফু। তাদের সন্তানরা সবাই দাদার হাত থেকে ঈদের বখশিস নেয়ার অপেক্ষায় থাকতো।’

‘ঈদের মধ্যে যে আমরা শুধু ক্রিকেটই খেলেছি- এমন নয়, ফুটবলও খেলতাম প্রচুর। আমি তো ফুটবলও খেলেছি। ঢাকার ক্লাব ফুটবলেও অংশ নিয়েছি। আমার দাদাই ছিলেন আমাদের শৈশব, কৈশোর ও তারুণ্যের সব অভিভাবক। সবাইকে ঈদি দেয়া ও কাপড়-চোপড় দেয়াই ছিল দাদার অনেক পছন্দের। ১৯৮৮ সালের নভেম্বরে ইন্তেকালের আগে পর্যন্ত দাদা এভাবেই আমাদের ঈদি দিতেন।’

মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা পিতাকে হারিয়েছেন নান্নু। তারপর মাতার স্নেহেই বেড়ে ওঠেন। নিজের ক্রিকেট খেলে পাওয়া অর্থের ৯০ শতাংশ মার কাছেই দিয়ে দিতেন। ‘আমি যখনই ক্লাব ক্রিকেট খেলে টাকা পেতাম, তার ৯০ শতাংশ আম্মাকে দিয়ে দিতাম।’

নান্নু বরাবর চট্টগ্রামে ঈদ করতেন মা ও চাচা-ফুফুদের সাথে। ‘আম্মা জীবিত থাকতে আমি আপ্রাণ চেষ্টা করতাম আম্মার সাথে চট্টগ্রামে ঈদ করতে। আম্মার ইন্তেকালের পর আমার বড় ভাই নোবেলের সাথে ঈদ করতে চট্টগ্রাম যাই; কিন্তু করোনার কারণে এবার নিয়ে দ্বিতীয় বছরের মত আর চট্টগ্রামে ভাই ও তার পরিবারের সাথে ঈদ করা হলো না। চাচা, ফুফু ও কাজিনদের সাথেও ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি হলো না।’

এআরবি/আইএইচএস