দেশজুড়ে

হাত-পায়ের চামড়া ফেটে খসে পড়ছে বাবা-মেয়ের

জন্মের পর থেকেই অজ্ঞাত রোগে ভুগছেন রাখাল দাস (৩৬)। তার হাতের তালু ও পায়ের তলার চামড়া শক্ত ও খসখসে হয়ে ফেটে যাচ্ছে। শক্ত হওয়া চামড়া টুকরো টুকরো হয়ে মাঝে মাঝে খসে পড়ে। চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্রে এই রোগকে ‘হাইপারকেরাটসিস’ উল্লেখ করলেও কোনো ওষুধে রোগটি সারছে না। চিকিৎসকরা বলছেন, এ রোগের চিকিৎসা ব্যয়বহুল এবং দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা নিতে হবে। রাখাল দাসের মেয়ে সম্পা দাসও (১৬) একই রোগে আক্রান্ত।

বাবার শৈশবে যেমন লক্ষণ ছিল মেয়ের হাতে-পায়ে একই লক্ষণ রয়েছে। এই রোগের চিকিৎসায় সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা প্রত্যাশা চেয়েছেন ভূমিহীন রাখাল দাস।

রাখাল দাস মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার উত্তরভাগ ইউনিয়নের উত্তরভাগ প্রামের বাসিন্দা।

রাখাল দাসের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তার মা নিবা রানী দাসের এই রোগ ছিল। তিনি বছর তিনেক আগে মারা গেছেন। রাখাল দাসও জন্মের পর থেকে এই রোগে ভুগছেন। শৈশব থেকে চিকিৎসা নিলেও ‘অজ্ঞাত’ এই রোগটি থেকে নিরাময় পাননি। বরং আগের চেয়ে রোগের বিস্তার ঘটছে। হাত-পায়ের ব্যথার যন্ত্রণায় রাতে ঘুমাতে পারেন না।

পৈতৃক কোনো ভিটেমাটি না থাকায় দরিদ্র রাখাল দাস তার স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহারের ঘরে ঠাঁই পেয়েছেন।

সংসার চালাতে আট বছর সংবাদপত্র বিক্রি করেন রাখাল দাস। পরিবারের খরচ বেড়ে যাওয়ায় সংবাদপত্র বিক্রি বাদ দিয়ে ২০১৭ সালে সামান্য পুঁজি নিয়ে ফেরি করে মোমবাতি-আগরবাতি বিক্রি করা শুরু করেন। ‘অজ্ঞাত’ এই রোগের চিকিৎসা ও ওষুধ কিনতে গিয়ে নিজের পুঁজিটুকুও শেষ হয়ে গেছে। এখন এলাকার সাধারণ মানুষের কাছ থেকে সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে রাখাল দাসের সংসার চালাতে হয়। প্রতিবন্ধী পরিচয়পত্র থাকলেও ভাতার সুবিধা পান না।

মেয়ে সম্পা দাস উপজেলার উত্তরভাগ ইউনিয়নের বিমলাচরণ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে ও ছেলে রাজু দাস একই বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ছে।

বিমলাচরণ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল ওয়াদুদ জানান, রাখাল দাসের পরিবারে অভাব-অনটন খুব বেশি। বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে রাখাল দাসের মেয়ে সম্পা ও ছেলে রাজুর পড়ার খরচ মওকুফ করে দেয়া হয়েছে।

উত্তরভাগ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শাহ শাহিদুজ্জামান ছালিক বলেন, ‘তিনি আগে বাজারে ফেরি করে ভ্যারাইটিজ জিনিসপত্র বিক্রি করে সংসার চালাতেন। বর্তমানে অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ায় তাকে এলাকায় তেমন দেখা যায়নি। তবে আমি তাকে সাধ্যমতো সহযোগিতা করি। তাকে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘরের ব্যবস্থা করে দিয়েছি।’

আব্দুল আজিজ/এসআর/এএসএম