কোনরকমে জোড়াতালি দিয়ে চলছে হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা আধুনিক হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম। বছরের পর বছর ধরে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে দুটি আল্ট্রাসনোগ্রাফি মেশিন। বিকল অবস্থায় পড়ে আছে দুটি এনালগ এক্সরে মেশিনও। একটি ডিজিটাল এক্সরে মেশিন থাকলেও তার ফিল্ম নেই। আছে ডাক্তার, নার্সসহ নানা পদে লোকবল সঙ্কট।
সরেজমিন ঘুরে ও কাগজপত্র পর্যালোচনা করে জানা যায়, প্রায় ২২ লাখ জনসংখ্যার এ জেলাবাসীর চিকিৎসার একমাত্র ভরসাস্থল ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা আধুনিক সদর হাসপাতাল। এখানে প্রতিদিন অন্তত ৪ থেকে ৫০০ রোগী আসেন। ভর্তি থাকেন ৩ থেকে ৪০০ জন। কিন্তু হাসপাতালটি ১০০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত হওয়ার পর থেকেই পুরোনো লোকবল দিয়েই কার্যক্রম চলছে। জেনারেল সার্জারিসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদই খালি রয়েছে। অনেকেই আবার প্রেষণে বিভিন্ন স্থানে চলে গেছেন।
বেশ কিছু নার্সের পদও খালি আছে। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আল্ট্রাসনোগ্রামের মেশিনগুলো বেশ কয়েক বছর ধরেই নষ্ট। এখন একেবারেই মেরামত অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এক্সরে মেশিন দুটিও প্রায়ই নষ্ট থাকে। একমাত্র ডিজিটাল এক্সরে মেশিন থাকলেও এটি চালু করার সময় ৫০০টি ফিল্ম দেয়া হয়েছিল। বর্তমানে এগুলোও শেষ হয়ে এসেছে। এসব বিষয় লিখিত আকারে জানানো হলেও তেমন কাজ হচ্ছে না।
২০২০ সালে এক্সরে ও আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন সরবরাহ করার জন্য ডিও দিয়েছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী। অথচ এখনও পর্যন্ত এরও সুরাহা হয়নি। এ অবস্থায় একটু গুরুতর রোগী হলেই তাকে ঢাকা বা সিলেটে পাঠানো হয়। রোগীদেরও চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
সদর আধুনিক হাসপাতলের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট আবু সাঈদ জানান, দুটি এনালগ এক্সরে মেশিন প্রায় ২০ বছর পূর্বে দেয়া হয়েছিল। এগুলো এখন প্রায়ই নষ্ট থাকে। মেরামত করলে কয়েকদিন চলে আবারও নষ্ট হয়ে পড়ে। এছাড়া সব এক্সরে এগুলো দিয়ে হয়ও না। যেগুলো হয়, তারও গুণগত মান একেবারেই নিম্নমানের। এজন্য মানুষ বিভিন্ন সময় দুর্ব্যবহারও করে। একটি ডিজিটাল এক্সরে মেশিন ২০২০ সালে দেয়া হয়েছিল। এটি চালু করা হয় চলতি বছরের এপ্রিল মাসে। এটিরও ফিল্ম প্রায় শেষ পর্যায়ে।
সদর হাসপাতালের ডা. পরেশ চন্দ্র দেবনাথ জানান, হাসপাতালে আল্ট্রাসনোগ্রামের দুটি মেশিন আছে। দুটিই প্রায় দুবছর ধরে একেবারেই নষ্ট। একটি দেয়া হয় প্রায় ২০ বছর আগে, অপরটি ১১ বছর আগে। এগুলো বিভিন্ন সময় মেরামত করে চালানো হয়েছে। গতবছর এগুলো মেরামতের জন্য ঢাকায় পাঠালে তারা জানিয়ে দেয় মেশিনগুলো মেরামতের অযোগ্য।
সদর হাসপাতালের অপর ডা. আবু নাঈম মাহমুদ হাসান জানান, ১০০ শয্যার লোকবল দিয়ে আসলে ২৫০ শয্যার কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। মেডিকেল কর্মকর্তাসহ অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ পদ খালি। অথচ প্রতিদিন গড়ে রোগী থাকে কমপক্ষে ৩ থেকে ৪০০ জন। শুধু গাইনি বিভাগেই মাসে কমপক্ষে ১০০টি অস্ত্রোপচার হয়ে থাকে। আর ছোটখাট অস্ত্রোপচার তো আছেই।
এসব বিষয়ে সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘ডিজিটাল এক্সরে মেশিনের ফিল্ম আনার চেষ্টা চলছে। মহাপরিচালক অফিসে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। এছাড়া জেলা পরিষদ থেকে কিছু বরাদ্দ আছে। এটি পেলে তা দিয়ে ফিল্ম কেনার পরিকল্পনা আছে। আর আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিনের জন্য মহাপরিচালক অফিসে আবেদন করা হয়েছে। আশাকরি দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘লোকবলের বিষয়টি পদ সৃষ্টি করে নিয়োগের জন্য পত্র দেয়া হয়েছে। এটিও পর্যায়ক্রমে দেয়া হবে।’
সৈয়দ এখলাছুর রহমান খোকন/জেআইএম