মহামারি করোনা শুরুর পর থেকে গত দেড় বছরে শেরপুরে ঘরে ও বাইরে বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এক হাজার ৮৬৩ জন নারী ও শিশু। এদের মধ্যে বেশিরভাগই শারীরিক নির্যাতনের শিকার। বাকিরা শ্লীলতাহানি, ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টাসহ মানসিক নির্যাতনের শিকার।
দেশব্যাপী নির্যাতিত নারী ও শিশুদের সহায়তার জন্য মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রামের আওতায় নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধক বিষয়ক কার্যক্রম ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেলের (ওসিসি) কাছে সেবাগ্রহীতার পরিসংখ্যানের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
এসব নির্যাতন প্রতিরোধে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি পারিবারিক মূল্যবোধ ও নৈতিক শিক্ষা জরুরি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
শেরপুর জেলা হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেলের (ওসিসি) তথ্যমতে, নির্যাতনের শিকার হওয়া ১৮৬৩টি ঘটনার মধ্যে গত দেড় বছরে সরাসরি মামলার জন্য আবেদন জমা পড়েছে মাত্র ৩৪৫টি। নিষ্পত্তি হয়েছে ৬৫টি, বিকল্প পদ্ধতিতে সফল নিষ্পত্তি ২৮৩টি, নথিভুক্ত আছে ৮৩টি, অপেক্ষমাণ ১০৩টি, পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে ৭৪২ জনকে এবং এডিআরের (বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি) ফলে বিচারাধীন বা চলমান মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে ২৪২ জনের।
ওসিসির তথ্যমতে, গত দেড় বছরে মামলার জন্য করা আবেদনের মধ্যে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয় ১৫৬ জন নারী ও শিশু, নারী ও শিশু ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ রয়েছে ৮২টি এবং মানসিক নির্যাতনের শিকার ১০৫টি।
ওসিসির সেবা এবং নির্যাতিত নারী ও শিশুদের সম্পর্কে প্রোগ্রাম অফিসার অমিত শাহরিয়ার বাপ্পী বলেন, মানুষ এখন নিজের অধিকার সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন। তিনি বলেন, বিনামূল্যে সেবাটি চালু হওয়ায় বিচারপ্রার্থী অসহায় নির্যাতিত জনগণের মাঝে দ্রুত সময়ে ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে ওসিসি।
এ ব্যাপারে জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও সিভিল সার্জন ডা. এ কে এম আনওয়ারুর রউফ বলেন, নির্যাতনে শিকার নারী ও শিশুদের ওসিসি সেবা জোরদার করার জন্য হাসপাতালে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেল স্থাপিত হয়েছে। বিভিন্নভাবে নির্যাতিত হয়ে আসা নারী ও শিশুদের মানসিক অবস্থার উন্নতির জন্য স্বাস্থ্য সেবা ও আইনি সহায়তার পাশাপাশি ওসিসিতে মানসিক কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থাও চালু রয়েছে।
জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের উপপরিচালক মো. লুৎফুল কবীর বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতনের জটিল বিষয়গুলো লিগ্যাল এইডের জন্য শেরপুর ওসিসির মাধ্যমে কোর্টে পাঠানো হয়। আমরা অনেক নারী নির্যাতন সংক্রান্ত সমস্যার আবেদন আমাদের অফিসে বসে সমাধান করি। তবে যেগুলো সমাধান করা সম্ভব হয় না কিংবা চিকিৎসা সেবা, কাউন্সেলিং সেবা অথবা আইনগত সহায়তার প্রয়োজন হয় সেসব ক্ষেত্রে সমাধানের জন্য ওসিসিতে পাঠানো হয়ে থাকে।
তিনি বলেন, শেরপুর ওসিসি সেলের কার্যক্রম খুবই প্রশংসনীয়। যদি ওসিসির কার্যক্রম দেশের সব জেলা ও উপজেলায় সম্প্রসারণ করা যায় তাহলে আশা করা যায় আরও অনেক নির্যাতিত নারী ও শিশু উপকৃত হবেন।
ইমরান হাসান রাব্বী/এসআর/জিকেএস