দেশজুড়ে

শিক্ষকের হাতে-পায়ে ধরেও ক্ষমা পেল না এতিম শিক্ষার্থী মৃদুল

‘স্যার, আমি এতিম। আমার মা-বাবা নেই, আমাকে মাইরেন না’—শিক্ষকের হাত-পা ধরে এভাবে করুণ আকুতি জানিয়েও বেদম মারধর থেকে রেহাই পায়নি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার সিতাইকুন্ড নেছার উদ্দিন তালুকদার উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র তৌফিক জামান মৃদুল। মারধরের কারণে সে এখন ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারে না।

মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) তৌফিক জামান মৃদুলের বাড়িতে গেলে সে এভাবেই মারধরের কথা উল্লেখ করে। মৃদুল উপজেলার রাধাগঞ্জ ইউনিয়নের সিতাইকুন্ড গ্রামের মৃত মনিরুজ্জামানের ছেলে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বুধবার (১১ আগস্ট) সিতাইকুন্ড নেছার উদ্দিন তালুকদার উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ওই বিদ্যালয়ের অষ্টম ও নবম শ্রেণির ছাত্রদের প্রীতি ফুটবল খেলা অনুষ্ঠিত হয়। খেলার প্রথমার্ধে নবম শ্রেণির দল অষ্টম শ্রেণির দলকে তিনটি গোল দেয়। দ্বিতীয়ার্ধের খেলা শুরু হলে অষ্টম শ্রেনির ছাত্র তামিম হোসেন হাওলাদারের সঙ্গে তৌফিক জামান মৃদুলের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে তামিম মৃদুলকে লাথি মারে। এ সময় মৃদুলও তামিমকে লাথি মারে।

খেলার মাঠে এ দৃশ্য দেখে তামিমের বাবা স্কুলশিক্ষক শাহাদাৎ হোসেন দৌড়ে মাঠে গিয়ে মৃদুলকে বেধড়ক মারধর করেন। মারধরে গুরুতর আহত মৃদুলকে প্রথমে কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে চিকিৎসকদের পরামর্শে গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে কয়েকদিন চিকিৎসা নেয়ার পর কিছুটা সুস্থ হলে অর্থের অভাবে পূর্ণ চিকিৎসা না করিয়ে মৃদুলকে বাড়ি নিয়ে আসে তার পরিবার। মৃদুল বর্তমানে শয্যাশায়ী অবস্থায় তার বাড়িতে রয়েছে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত ৫২ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শাহাদাৎ হোসেন হাওলাদারের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি মৃদুলকে মারধরের কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘মৃদুল আমার ছেলে তামিমকে মারধর করায় আমি তাকে মারধর করেছি। এ ঘটনা নিয়ে এলাকায় সালিশ বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।’

মৃদুলের চাচা হাফিজুর রহমান বলেন, ‘একটি এতিম ছেলেকে এভাবে মারধর করা একজন শিক্ষকের পক্ষে কোনোভাবেই ঠিক হয়নি। মৃদুল এখনো অসুস্থ। হাঁটতে-চলতে পারে না। মাথায় প্রচণ্ড ব্যথা। এ ঘটনায় আমি থানায় অভিযোগ দিয়েছি।’

সিতাইকুন্ড নেছারউদ্দিন তালুকদার উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক তছির আহম্মেদ বলেন, ‘মৃদুল ভালো ছেলে। পাশাপাশি ভালো খেলোয়াড়। তাকে যেভাবে মারধর করা হয়েছে, তা কোনোভাবেই ঠিক হয়নি। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।’

মৃদুলকে মারধরের ঘটনার অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা ভাঙ্গারহাট নৌ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই মুরাদ হোসেন বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মেহেদি হাসান/এসআর/এএসএম