দেশজুড়ে

শৈলকুপায় গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা দেখে মুগ্ধ দর্শক

বাদ্য-বাজনার তালে তালে লাঠি নিয়ে একজন আরেকজনকে আঘাত করার চেষ্টা করছেন। লাঠির আঘাত থেকে বাঁচতে চলছে আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ। না, কোনো ঝগড়া-বিবাদ নয়। চলছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা। ঝিনাইদহের শৈলকুপায় লাঠিখেলার এই আয়োজন করা হয়। আর এই আয়োজন নিয়ে আগ্রহের কমতি ছিল না স্থানীয়দের। সবার মধ্যে ছিল উৎসবের আমেজ।

শুক্রবার (৩ সেপ্টেম্বর) উপজেলার বড়দাহ গ্রামের হাই স্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত হয় ঐতিহ্যবাহী এই খেলা। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও যুবলীগ নেতা আবুজার গিফারী গাফফার এ খেলার আয়োজন করেন।

বড়দাহ গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, দুপুরের পর থেকেই লাঠি খেলা দেখতে দূর-দুরান্ত থেকে ছুটে আসেন নানা বয়সী মানুষ। ঢাক, ঢোল আর কাঁসার ঘণ্টার শব্দে চারপাশে সৃষ্টি হয় উৎসব মুখর পরিবেশের। প্রথমে বাদ্যের তালে তালে নানা অঙ্গভঙ্গি দেখান লাঠিয়ালরা। এরপরই শুরু হয় মূল আকর্ষণ। দুইজন লাঠিয়াল শব্দের তালে তালে ঝাপিয়ে পড়েন একে অপরের ওপর। আর নিজেকে রক্ষা করে পাল্টা আঘাত করার সুযোগ ছাড়েন না অপরজন। এসব দেখে উচ্ছ¡সিত হয়ে ওঠেন দর্শকরা।

রাসেল নামে এক দর্শক বলেন, ‘অনেক দিন পর লাঠিখেলা দেখছি। আমার খুব ভালো লাগছে। মুরুব্বিরা খেলছেন, দেখতে খুব ভালো লাগছে। প্রত্যেক বছর যদি এভাবে খেলা হয় তাহলে আমরা দেখতে পারি।’

আরেক দর্শক উম্মে সায়মা বলেন, ‘আমি লাঠিখেলার কথা শুনেছিলাম। আজ প্রথম দেখলাম। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য যে কত সুন্দর তা না দেখলে বোঝানো যাবে না। লাঠিখেলা খুবই উপভোগ করছি। খুবই ভালো লাগছে।’

লাবনী আক্তার নামে একজন বলেন, ‘করোনার কারণে তো সবই বন্ধ ছিল। পরিবার ও বাচ্চাদের নিয়ে কোথাও যেতে পারিনি। প্রায় দুই বছর পর এমন আয়োজন করা হয়েছে। এ জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ জানাই।’

লাঠি খেলোয়াড়রা জানান, তারা বিভিন্ন জায়গায় লাঠি খেলার প্রদর্শনী করে থাকেন। এ খেলার মাধ্যমে লোকদের যেমন আনন্দ দেন তেমনি নিজেরাও আনন্দ পান। কিন্তু এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় গিয়ে লাঠি খেলার আয়োজন করা হলে তাদের অনেক লোকসান হয়। তাই লাঠিখেলাকে আরও জনপ্রিয় করে তুলতে সরকারি সহায়তার দাবি জানান তারা। তারা মনে করেন এতে মানুষকে আনন্দ দেওয়ার পাশাপাশি গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখা সম্ভব হতো।

আয়োজক আবুজার গিফারী গাফফার জানান, দীর্ঘদিন করোনার কারণে সবকিছুই বন্ধ ছিল। এখন পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষদের কিছুটা বিনোদন আর হারানো ঐতিহ্য ধরে রাখতেই এই আয়োজন করা হয়েছে। শুক্রবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ আয়োজনে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলাসহ আশপাশের উপজেলা থেকে ১০টি লাঠিয়াল দল এই খেলায় অংশ নেয়।

আব্দুল্লাহ আল মাসুদ/ এফআরএম/এএসএম